করপোরেশনগুলো এখনো অন্তর্মুখী এবং বহির্মুখী স্বভাবের লোকদের মাঝে সাম্য স্থাপন থেকে বহু দূরে রয়েছে। অন্তর্মুখী স্বভাবের লোকদেরকে তাদের কাজের জন্য সম্মান করা হয় এবং পিঠও চাপড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বহির্মুখী স্বভাবের লোকরাই এখনো করপোরেট জগতে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন এবং স্বীকৃতির সিংহভাগ নিজেদের ঝোলায় পোরেন।
অন্তর্মুখী স্বভাবের লোকদের আচরণগত বৈশিষ্ট্যের কারণেই তাদের মধ্যে 'আধুনিক কালের ব্যক্তিত্ব' গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের ঘাটতি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ধারণা করা হয়, অন্তর্মুখী লোকদের মধ্যে ক্যারিয়ারে সাফল্য লাভের জিনগত বৈশিষ্ট্য নেই।
অন্তর্মুখী স্বভাবের লোকদেরকে মূলত দলগতভাবে কাজ করতে অক্ষম গণ্য করে উপেক্ষা করা হয়; যা খুবই বেদনাদায়ক। বিশেষ করে যখন অতি আত্মবিশ্বাসী বহির্মুখী স্বভাবের লোকরা অন্তর্মুখী স্বভাবের লোকদের সঙ্গে তাদের মূল পার্থক্যটা কোথায় এবং কী কারণে তা না জেনেই তাদেরকে অগ্রাহ্য এবং উপেক্ষা করে তখন তা খুবই বেদনাদায়ক হয়। কারণ বহির্মুখী স্বভাবের লোকরা জানেন না যে মন্দ কোনো কারণে লোকে অন্তর্মুখী স্বভাবের হন না।
তবে অন্তর্মুখী লোকরাও এখন করপোরেট ক্যারিয়ারে সাফল্য লাভ করছেন। এ ক্ষেত্রে মূল কৌশলটি হলো, বহির্মুখী স্বভাবের লোকদের তাদের নিজস্ব খেলায় মাতিয়ে রেখে নিজের জন্য জায়গা করে নেওয়া
১. মুচকি হাসুন
মুচকি হাসির বিজ্ঞান সম্পর্কে বহু গবেষণা, জরিপ ও বই রয়েছে। তবে যদিও এখনো এ বিষয়টি পুরোপুরি জানা সম্ভব হয়নি যে, লোকে কেন মুচকি হাসি দেয়। তথাপি এই ছোট্ট একটি কাজের চর্চা প্রতিদিন করা হলে তা আমাদের দেহ-মনে বিশাল পরিমাণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম বলেই বিশ্বাস করা হয়।
আর করপোরেট পরিবেশে মুচকি হাসিকে বহির্মুখী স্বভাবের প্রধান চিহ্ন হিসেবে গণ্য করা হয়। মুচকি হাসির মাধ্যমে অন্তর্মুখী স্বভাবের লোকরা আরো সহজগম্য, সামাজিক এবং প্রফুল্ল চরিত্রের ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হতে পারেন।
২. হাঁটুন
টানটান বা সোজা অঙ্গভঙ্গি, সরাসরি চোখের দিকে তাকানো এবং মাথা উঁচু করে রাখা এই সবগুলো দেহভঙ্গিই আত্মবিশ্বাসের লক্ষণ। আর নিজেকে প্রকাশে এবং নজরে পড়ারও উপায় এটি; যা অন্তর্মুখী স্বভাবের লোকরা প্রায়ই যেকোনো মূল্যে এড়িয়ে যেতে চান।
গবেষণায়ও দেখা গেছে, বেশির ভাগ সময় মুখের কথার চেয়ে বরং দৈহিক অঙ্গভঙ্গি দেখেই লোকে আমাদের সম্পর্কে মূল্যায়ন করে থাকেন। আর এটি আত্মসম্মানবোধ এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেও যুক্ত। আর মনে রাখবেন সব সময় জবুথবু হয়ে থাকার মানে এমন নয় যে আপনি কারো নজরে পড়ছেন না বা কেউ আপনাকে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। এত বরং আপনাকে আরো বেশি অনিরাপদ মনে হবে এবং পিঠে অযাচিত ব্যথার সৃষ্টি হবে! যে কারণে আপনাকে বিশাল পরিমাণ চিকিৎসা ব্যয়ও বহন করতে হতে পারে!
৩. কথা বলুন
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কারো ওপর আপনার দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলতে চাইলে দ্রুত কথা বলার অভ্যাস এড়িয়ে চলতে হবে। শব্দ চয়নে সাবধান এবং গলার স্বরের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। বহুসংখ্যক শ্রোতার সামনে কথা বলা এবং সকলের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকার ভয় বেশির ভাগ অন্তর্মুখী স্বভাবের লোকদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভয়। আর নিজেকে প্রাকাশের শিল্প একটি অমূল্য দক্ষতা। দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে ছোট হলেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আমাদের মু্খের কথা। সূতরাং সুযোগ পেলেই বহুসংখ্যক শ্রোতার সামনে কথা বলার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৪. সামাজিক অন্তর্মুখী লোক হন
অন্তর্মুখী স্বভাবের লোক হলেই যে, সারাক্ষণ নিজের ডেস্কে কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে হবে এবং অন্যদের সঙ্গে কথা বলা যাবে না এমনটা ভাবা ঠিক নয়। তবে অপ্রয়োজনীয় আলাপে সময় নষ্ট করাও ঠিক নয়। কিন্তু প্রতিদিন যদি কয়েক মিনিট অফিস নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য ব্যয় করা যায় তাহলে ক্যারিয়ারে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করা সম্ভব। এতে অন্তত আপনার অস্তিত্ব সম্পর্কে সহকর্মীরা ওয়াকিবহাল থাকবেন এবং সত্যিকার অর্থেই কিছু বন্ধু তৈরি হবে আপনার। আর আপনি যদি না জানেন কী বলতে হবে তাহলে অন্যদেরকে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন। এই ধরনের কৌশল সব সময়ই জয়ী হয়।
৫. নমনীয়তা
এর সরল মানেটি হলো, নমনীয়তা শিখুন। হ্যাঁ, এ ধরনের পরামর্শের মাধ্যমে অন্তর্মুখী লোকদেরকে তাদের খোদ স্বভাবের বিরুদ্ধেই যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে সামান্য একটু সামাজিকতা আপনার জন্য বড় কোনো উপকারিতা বয়ে আনতে পারে। এটা করার জন্য এমন নয় যে, নিজেকে আপনার বদলে ফেলতে হবে বা আপনার নীতিগুলো বিসর্জন দিতে হবে। এর মাধ্যমে মূলত ভিন্ন ভিন্ন লোকের সঙ্গে আপনার ব্যক্তিত্বের ভিন্ন ভিন্ন অংশ প্রদর্শন করবেন। যাতে তাদের সঙ্গে আরো ভালো যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারেন। এ ব্যাপারে একটি সহজ সূত্র হলো, অন্যরা কোনো বিষয়ে আগ্রহী হলে সে বিষয়ে আলোচনা করুন। আর এর মাধ্যমেই আপনি সহজে অন্যদের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন।
বহির্মুখী স্বভাবের লোকদের আধিপত্যে থাকা দুনিয়ায় অন্তর্মুখী স্বভাবের হওয়াটা খুব একটা সহজ কাজ নয়। আর এই ধরনের পরিবেশে অন্তর্মুখী স্বভাবের লোকদের জন্য ক্যারিয়ারে সাফল্য লাভ করা আরো কঠিন। কিন্তু আশার কথা হলো দুনিয়া সব সময়ই এক জায়গায় বসে থাকে না। জনমত বদলাতে শুরু করেছে।
বহু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, অন্তর্মুখী স্বভাবের লোকরাই সধারণত কর্মক্ষেত্রে ভালো পারফর্ম করেন। আর তা ছাড়া বহির্মুখী স্বভাবের লোকদের তুলনায় এরা অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য এবং সৃজনশীলও হয়ে থাকেন। তবে অন্তর্মুখী স্বভাবের লোকদের ব্যাপারে দুনিয়ার দৃষ্টিভঙ্গিতে পুরোপুরি বদল আসার আগেই আপনি নিজেকে বদলানোর উদ্যোগ নিয়ে আরো দ্রুত উপকৃত হতে পারেন। নিজেকে অন্যদের সামনে আরেকটু ঠেলে দিয়ে আপনি অন্যদেরকে আপনার প্রকৃত মূল্যায়নে বাধ্য করা এবং আপনার দক্ষতাগুলোকেও মেলে ধরতে পারবেন।
Collected from kalerkantho