বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীদের বিনা খরচে আমেরিকায় মাস্টার্সের সুযোগ দিচ্ছে আমেরিকা। মার্কিন দূতাবাসের আমেরিকান সেন্টার বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রামের জন্য আবেদন চেয়েছে। এই শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় স্নাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীরা সম্পূর্ণ বিনা খরচে যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কনিষ্ঠ অনুষদ সদস্য এবং সরকারি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন ও এনজিওতে কর্মরত কনিষ্ঠ থেকে মধ্য পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার জন্য অগ্রাধিকার পাবেন। ফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রামটি যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে ইচ্ছুক উচ্চাকাঙ্ক্ষী তরুণ পেশাজীবীদের জন্য। শিক্ষার সব শাখার আগ্রহী শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন এ প্রোগ্রামে। তবে মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, বিশেষভাবে শিক্ষার কয়েকটি শাখার ওপর তারা জোর দিতে চায়।
নিম্নলিখিত বিষয়ের জন্য অনুদান পাবেন শিক্ষার্থীরা
শিক্ষা: উচ্চশিক্ষা প্রশাসন/শিক্ষানীতি, পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা/পাঠ্যক্রম ও নির্দেশনাসংক্রান্ত সব বিষয়
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিজ্ঞান: চিকিৎসাবিজ্ঞান/জনস্বাস্থ্য
জীববিজ্ঞান ও ভৌতবিজ্ঞান: জীববিদ্যা/রসায়ন/পদার্থবিজ্ঞান/ফার্মাসি
সমাজবিজ্ঞান ও মানবিক শাখা: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক/রাষ্ট্রবিজ্ঞান/সমাজবিদ্যা/ইতিহাস/সাহিত্য/ভাষা ও সংস্কৃতি
ব্যবসায়: মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর এমবিএ/আন্তর্জাতিক ব্যবসায়/পরিচালনা ব্যবস্থাপনা/স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা
অর্থনীতি: আন্তর্জাতিক অর্থনীতি/বাণিজ্য ও সম্পদসংস্থান/অর্থনৈতিক নীতি/পরিবেশগত অর্থনীতি/প্রাকৃতিক সম্পদবিষয়ক অর্থনীতি
নগর–পরিকল্পনা: সাধারণ পরিকল্পনা/ভূমির ব্যবহার ও পরিবেশগত পরিকল্পনা/পরিবহনব্যবস্থা/নগর–পরিকল্পনা/কমিউনিটি উন্নয়ন
পরিবেশগত অধ্যয়ন (পরিবেশ বিদ্যা) ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
জনপ্রশাসন/জননীতি (পাবলিক পলিসি)
মনোবিজ্ঞান: ক্লিনিক্যাল/কাউন্সেলিং
নিরাপত্তা অধ্যয়ন (নিরাপত্তাবিষয়ক বিদ্যা)
কারা এ বৃত্তির জন্য যোগ্য হবেন
এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।
*বাংলাদেশের স্বীকৃত সরকারি কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বপূর্ণ ফলসহ ন্যূনতম চার বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে।
*পূর্বে কোনো আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেননি কিংবা বর্তমানে আমেরিকায় কোনো শিক্ষা কার্যক্রমে ভর্তি নন।
*বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে পূর্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেননি। (তবে যাঁরা বাংলাদেশ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন, তাঁরা যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।)
*যে বিষয়ে পড়তে যেতে ইচ্ছুক, সেই বিষয়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক/সংশ্লিষ্ট কর্মক্ষেত্রে ন্যূনতম দুই বছরের পূর্ণকালীন কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
*ইংরেজিতে সাবলীল ও পারদর্শী হতে হবে। ইন্টারনেটভিত্তিক (আইবিটি) টোয়েফলে (TOEFL) ন্যূনতম ৯০ কিংবা আইইএলটিএস (IELTS)-এ ন্যূনতম ৭ (সাত) স্কোর থাকতে হবে।
*সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে।
*আবেদনের সময় বাংলাদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে।
*ডিগ্রি শেষ করার আগেই বাংলাদেশে (বাড়িতে) ফিরে এলে ফিরতি বিমানের টিকিটের মূল্য ফেরত দিতে সম্মত থাকতে হবে।
আবেদনের সঙ্গে যা যা থাকতে হবে
*অনলাইনে পূরণের আবেদন ফরম পাওয়া যাবে: https://apply.iie.org/ffsp2022 তে।
*আবেদনকারী উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা–পরবর্তী সময়ে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট (শিক্ষা প্রতিলিপি) ও সনদ সংগ্রহ করবেন।
*তিনজন সুপারিশকারী পৃথকভাবে অনলাইন আবেদন পোর্টালে সরাসরি তিনটি সুপারিশপত্র (Letters of Reference) আপলোড/উপস্থাপন করবেন (সম্ভাব্য প্রার্থীরা অবশ্যই অনলাইন আবেদন সাইটে ‘Recommender Registration’ বাটনের মাধ্যমে নিজ নিজ সুপারিশকারীদের নিবন্ধন করবেন)।
*একাডেমিক রেকর্ডবিষয়ক তথ্যাদির পূরণকৃত ফরম (অনলাইন আবেদন সাইটে পাওয়া যাবে)
*টোয়েফল (TOEFL)/আইইএলটিএসের (IELTS) বৈধ স্কোর (যে স্কোর মেয়াদোত্তীর্ণ হয়নি)।
টোফেল–জিআরই–জিম্যাট লাগবে কি
যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা জিআরই (GRE) কিংবা জিম্যাট (GMAT) স্কোর থাকা বাধ্যতামূলক। যদি কোনো আবেদনকারী ইতিমধ্যে জিআরই কিংবা জিম্যাট পরীক্ষা দিয়ে থাকেন, তাহলে তাদের সেই পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরসংক্রান্ত তথ্য অনলাইন আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় কারও এ ধরনের (জিআরই বা জিম্যাট) স্কোর না থাকলে আমেরিকান সেন্টার শুধু প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের জন্য পরীক্ষার আয়োজন করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য TOEFL এবং GRE বা GMAT স্কোর থাকা আবশ্যক বিধায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের অবশ্যই ভালোভাবে এসব পরীক্ষার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে।
প্রার্থীদের অবশ্যই আবেদন করার সব নির্দেশনা ও আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সব নির্দেশিকা অনুসরণ করতে হবে। কোনো আবেদনকারীর আবেদন করার যোগ্যতা পূরণ না হলে সেই আবেদনপত্র বাছাই কমিটিতে পাঠানো হবে না। সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হবে এবং সাক্ষাৎকার ইংরেজিতে হবে।
ফেলোশিপের সুবিধা
জে-১ ভিসার জন্য সহায়তা; ঢাকায় যাত্রাপূর্ব পরিচিতিমূলক অনুষ্ঠান; যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া-আসা উভয় পথের বিমানভাড়া; টিউশন (শিক্ষাদান) ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট খরচ; থাকা, খাওয়া ও আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটানোর জন্য মাসিক বৃত্তি; বইপত্র কেনার জন্য ভাতা; স্বাস্থ্য ও দুর্ঘটনা বিমা, ভ্রমণ ও ব্যাগেজ (অতিরিক্ত লাগেজের জন্য) ভাতা ফলাফল কবে
অনলাইন আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল এ বছরের ১৫ মে। আবেদনের সময় বাড়ানো হয়েছে এক মাস। আগ্রামী ১৫ জুন পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন আগ্রহীরা। আগের যাঁরা আবেদন করেছিলেন কিন্তু কৃতকার্য হননি, এমন প্রার্থীরাও এ বছর পুনরায় আবেদন করতে পারবেন। সব আবেদনকারীকে এ কথা মনে রাখতে হবে যে এটি একটি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা (বাংলাদেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশের নাগরিকেরা এই ফেলোশিপের জন্য আবেদন করে থাকেন) এবং প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কঠোর বাছাইপ্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি ২০২১ সালের জুলাই মাসের শেষ নাগাদ জানানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রে এই কার্যক্রম শুরু হবে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে।
নির্বাচিত প্রার্থীদের মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের পরপর অবশ্যই বাংলাদেশে ফিরে আসতে হবে। দেশে এসে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স সেকশনে তাঁদের দেশে ফিরে আসার বিষয়টি অবগত করতে হবে এবং একটি ব্রিফিং সভায় যোগ দিতে হবে।
*ফুলব্রাইট কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে https://bd.usembassy.gov/education-culture/student-exchange-programs/ এ ঢু মারতে পারেন আগ্রহীরা।
*ফুলব্রাইট বৃত্তির আবেদনের ফরমগুলো https://apply.iie.org/ffsp2022। পাওয়া যাবে।
সমস্যা হলে যোগাযোগ
ফুলব্রাইট বৃত্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অসুবিধায় পড়লে [email protected] ই–মেইল ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারবেন আবেদনকারী।