নিয়োগকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চমৎকার কভার লেটার লেখার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। প্রত্যাশিত চাকরি পেতে হলে শুধু সিভি জমা দিলেই হবে না। সিভির সাথে একটি চমৎকার কভার লেটারও থাকতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো কভার লেটার কিভাবে লিখতে হয়? কভার লেটার লেখা খুবই বিচক্ষণতার কাজ। এমনকি অভিজ্ঞ পেশাদারদের জন্যও ভালো কভার লেটার লেখা খুব চ্যালেঞ্জিং।
কভার লেটারের গুরুত্ব: কভার লেটারের মাধ্যমে খুব সংক্ষেপে তুলে ধরা হয় আবেদনকারী সুনির্দিষ্ট কোনো পোস্টের জন্য কেন যোগ্য। আরেকটি দিক হলো, কভার লেটার মূলত সম্পূর্ণ সিভির সারসংক্ষেপ। কভার লেটার পড়ার মাধ্যমে নিয়োগকর্তা আবেদনকারীর সব যোগ্যতা এক দৃষ্টিতে দেখতে পারেন। যা আবেদনকারীর ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে তাকে উৎসাহিত করে।
কভার লেটার কেন: আপনাকে মনোনীত করার জন্য আপনার সিভিটি ভালোভাবে পর্যালোচনা করা হয়। কিন্তু সিভি পর্যালোচনার পর নিয়োগকর্তা সিদ্ধান্ত নিতে ৩-৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে থাকেন। এই কম সময়ের মধ্যে তিনি আপনার সম্পূর্ণ বায়োডাটা মস্তিষ্ক দিয়ে স্ক্যান করেন এবং একদৃষ্টিতে আকর্ষণীয় কিছু খোঁজেন। যার উপর ভিত্তি করে তিনি আপনাকে নির্বাচন করবেন।
ঠিক এ মুহূর্তে কভার লেটারটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সুতরাং সিভিতে কভার লেটার গৌণ বিষয় হলেও শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্তের জন্য এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অতএব আকর্ষণীয় বায়োডাটা তৈরির জন্য কভার লেটারে সবচেয়ে বেশি সময় দিন। কেননা এই কভার লেটারই ৩-৬ সেকেন্ডের মধ্যে আপনার ভাগ্য নির্ধারণ করবে।
বেশি না, ৩টি নিয়ম অনুসরণ করলেই আপনার সিভি হয়ে উঠবে দারুন স্মার্ট ও আকর্ষণীয়। নিচে তা উপস্থাপন করা হলো-
সহজ শব্দ ব্যবহার: শব্দবাহুল্য এবং ঝরঝরে গদ্যের ধরন সিভি বা কভার লেটারের জন্য প্রযোজ্য নয়। আপনার শব্দ ভান্ডার কতটা সমৃদ্ধ এবং কত উচ্চমার্গীয় শব্দ ব্যবহার করে আপনি মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন তা প্রদর্শনের জায়গা সিভি বা তার কভার লেটার নয়। উচ্চমার্গীয় শব্দ ব্যবহার এবং কথার বাহুল্য আপনার দাম্ভিকতা প্রকাশ করে, যা আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত করে। যেমন- কভার লেটার লিখতে গিয়ে কোথাও ‘utilize’ শব্দটি ব্যবহার করবেন না। কারণ এই শব্দে আপনার দাম্ভিকতা প্রকাশ পায়। সহজভাবে ‘utilize’ শব্দের জায়গায় ‘use’ শব্দটি ব্যবহার করুন। আবার কোনো একটি বাক্যে ‘In my humble opinion, mobile apps’ এভাবে লেখার বদলে বরং লিখুন ‘I believe that mobile apps’.
সিভি এবং কভার লেটার লেখার সময় শব্দচয়ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কেমন শব্দ ব্যবহার করছেন তার উপর ভিত্তি করে নিয়োগকর্তা আপনার দৃষ্টিভঙ্গি মূল্যায়ন করে থাকেন। ভুলে গেলে চলবে না- আপনি চাকরিদাতা নন, চাকরিপ্রার্থী। কোনো কিছু প্রার্থনা কখনো দাম্ভিকতা দিয়ে প্রকাশ করতে নেই।
সুতরাং সিভির কভার লেটার লেখার সময় সবচেয়ে সহজ শব্দ ব্যবহার করে অকপটে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করুন, যা নিয়োগকর্তার সাথে আপনার যোগাযোগ সহজ করে দিবে। এমন শব্দ ব্যবহার করুন যার মধ্য দিয়ে আপনার বিনয়ী, নম্রতা এবং প্রার্থিতা প্রকাশ পায়।
সহজ অক্ষর বিন্যাস: কভার লেটার লেখার ফরমেট অর্থাৎ অক্ষর বিন্যাস কী হবে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবসময় চেষ্টা করুন সহজ অক্ষর বিন্যাস ব্যবহার করার। Time New Roman ফরমেটের অক্ষর সাইজ ১২ অন্যান্য সব ফরমেটের চেয়ে অধিক গ্রহণযোগ্য। বিশ্বব্যাপী সরকারি-বেসরকারি দফতরগুলোতে এটি বহুল ব্যবহৃত।
তাছাড়া দুটি লাইনের মাঝে যৌক্তিক ব্যবধান রাখুন। দুটি লাইনের মাঝে স্পেস কখনো বেশি রাখবেন না, আবার দুটি লাইন এতটাই কাছাকাছি রাখবেন না যেন পড়তে অসুবিধা হয়। কভার লেটারে বক্স বা ফ্রেম ব্যবহার না করাই উত্তম। কেননা সিভি জমা দেওয়ার পর আবেদন মূল্যায়নকারী অন্য ফরমেট ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে বক্স এবং ফ্রেম হারানোর সম্ভাবনা বেশি। সুতরাং বক্স বা ফ্রেম ব্যবহার করলে আপনার ফরমেটটি ভেঙেও যেতে পারে।
সঠিক নিয়ম অনুসরণ: বেশিরভাগ আবেদনকারী ইন্টারভিউ পর্যায় পর্যন্ত উন্নীত হতে ব্যর্থ হয় শুধু মনোযোগের অভাবে। তারা সিভি এবং কভার লেটার মনোযোগ দিয়ে প্রস্তুত করে না। সিভি এবং কভার লেটারের খুঁটিনাটি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখতে হবে। কেননা এই মনোযোগের অভাবে সিংহভাগ আবেদনকারী আবেদনের পর কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো ফোন কল পান না।
নিয়োগকর্তারা কোনো সিভির কভার লেটার পিডিএফ ফরম্যাট বা ই-মেইলের বডিতে পেলে আবেদনকারীকে বাদ দেওয়ার আগে আবেদনকারীর কম্পিউটার সেন্স নিয়েও মনে মনে প্রশ্ন তোলেন! সুতরাং কভার লেটারের খুঁটিনাটি বিষয়ের দিকে নজর রাখুন। সবসময় চাকরিদাতার চোখ দিয়ে সবকিছু মূল্যায়ন করুন।
Collected From Jagojobs