Facebook Youtube Twitter LinkedIn
Career Advice

কী করে নিতে হয় একটি ভাল, বুদ্ধিদীপ্ত ও স্মার্ট ডিসিশন?

image

একজন প্রতিষ্ঠান মালিক কিংবা বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিশ্চই আপনাকে প্রতিদিন প্রচুর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেটা হতে পারে অপারেশনাল, হতে পারে স্ট্র্যাটেজিক, কিংবা হতে পারে নীতিগত সিদ্ধান্ত। আবার ব্যক্তিগত জীবনেও আমাদেরকে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কখনো সিদ্ধান্ত নেবার প্রেক্ষাপট থাকে খুবই সহজ ও সাদামাটা। আবার কখনো সেই প্রেক্ষাপট হয় খুবই জটিল, মিশ্র, মাল্টিডাইমেনশনাল। হয়তো কখনো কখনো আপনি সিদ্ধান্ত নেবার জন্য যথেষ্ট ব্রিদিং টাইম পান। কিন্তু আবার সেই আপনাকেই কখনো কখনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় দ্রূততম সময়ে। যেমনটাই হোক, সিদ্ধান্ত নেয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি কাজ। সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার উপরে নির্ভর করে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির ভবিষ্যত গতিপথ।

একটি সঠিক ও সময়োচিত সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারে দৃশ্যপট। আবার ভুল সিদ্ধান্ত ধ্বংস করে দিতে পারে একটি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে। জানেন কিনা? প্রতিষ্ঠানের টপ পজিশনের ব্যক্তিরা কিন্তু মূলত সিদ্ধান্ত প্রণয়নের জন্যই বেশিরভাগ দায়ীত্বপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। সিদ্ধান্ত প্রণয়ন নিয়ে আমরা একাডেমিতে রীতিমতো আস্ত একটি কোর্সই করেছিলাম। সেই কাটখোট্টা একাডেমিক পড়াশোনা আর আমার একযুগের বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আজ খুব সংক্ষেপে ধাপে ধাপে বলার চেষ্টা করছি, কীভাবে সিদ্ধান্ত প্রণয়ন করতে হয়:-

১.আপনি আগে নিয়ত ঠিক করুন। সিদ্ধান্তটি আপনি কোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিচ্ছেন-সেই লক্ষ্যটি আগে স্থির করুন। নিয়ত শুধু নামাজ পড়তেই লাগে না। নামাজের নিয়তের মধ্য দিয়ে বিধাতা আমাদের প্রাত্যহিক ইহলৌকিক জীবনের অনেক শিক্ষাই দিয়ে দিয়েছেন। আপনি একটি ভাল ও স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিতে সবার আগে ভেবে নিন, আপনি যে বিষয়/সমস্যা/ইস্যূটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন-সেটি আপনি নিশ্চিত কিনা।

২.সিদ্ধান্ত নেবার চুড়ান্ত কর্তৃত্ব কার-সেটি নির্ধারন করুন। সিদ্ধান্ত নিতে কার কার সাহায্য বা মতামত নেয়ার আনুষ্ঠানিক নিয়ম রয়েছে-তা নির্ধারন করুন।

৩.সিদ্ধান্তটি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও তার সুবিধাভোগী-সবগুলো বিভাগের প্রতিনিধিদেরকে সিদ্ধান্ত প্রণয়ন প্রক্রিয়াতে অন্তর্ভূক্ত করুন। প্রয়োজনে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ আনান।

৪.গণতান্ত্রীকভাবে সিদ্ধান্ত নিন। যারা সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়ার বৈধ স্টেকহোল্ডার, তাদের মতামত নিন, বিশ্লেষণ করতে বলুন আর তারপর সেগুলোকে আমলে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিন।

৫.ইস্যূটির ইতিবাচক ও নেতিবাচক-উভয়রকম প্রভাব বিশ্লেষণ করুন। চিন্তার অবারিত দ্বার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীন পরিবেশ সেজন্য নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে আপনি আপনার টীমের থেকে ভুল পরামর্শ পাবেন।

৬.খুব বেশি জরুরী বা ব্যস্ততা না থাকলে কিংবা স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, বাস্তবায়নের আগে কমপক্ষে একদিন অপেক্ষা করুন। হতে পারে, এর মধ্যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার কোনো উপযুক্ত কারন হাতে পেয়ে যাবেন।

৭.সিদ্ধান্ত গৃহীত হবার পরে, সিদ্ধান্তটি লিখে সংশ্লিষ্ট সকলের সাক্ষর নিতে পারলে সবচেয়ে ভাল হয়। যাতে ভবিষ্যতে সেই সিদ্ধান্তের দায় সকলের কাঁধে বর্তায়।

৮.ভবিষ্যতের জন্য সিদ্ধান্তটি নথিবদ্ধ রাখুন যাতে সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে সংরক্ষিত হয়। সংশ্লিষ্ট সকলকে সিদ্ধান্তটি মেইল/চিঠি/মুদ্রীত কপি আকারে পাঠান।

৯.প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেবার আগে তার পটভূমি, বিষয়টির আর্থ-সামাজিক ও মানবীয় দিকগুলো ও তার প্রভাব বিবেচনায় রাখুন। শুধুমাত্র যেই প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্ত নেয়া, সেই দিকটি এককভাবে দেখবেন না।

১০.সিদ্ধান্তটি কেমন হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন শুরুর কিছুদিন পরে মূল্যায়ন করুন। তাতে সিদ্ধান্ত পরিমার্জন করতে পারবেন।

১১.সিদ্ধান্ত গ্রহন হয়ে গেলে, সকলে তার ওপর সার্বজনীন ভোট নিতে পারাটা সবচেয়ে ভাল একটি অভ্যাস। বিশ্লেষণ ও বিতর্কের পরে সিদ্ধান্ত গ্রহন হয়ে গেলে সকলে তার ওপর ঐক্যবদ্ধ থাকুন।

১২.সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকলে, সেই সিদ্ধান্তের ইতিবাচক ফলাফলে সবাইকে ক্রেডিট দিন। তেমনি বিপরীতক্রমে কোনো নেতিবাচক ফলাফল হলে তার দায় সবাই একত্রে নিন। কারো একার ওপর চাপিয়ে দেবেন না।

১৩.সিদ্ধান্ত নিতে মিটিং করতে চাইলে, (যদি সেটি জরুরী না হয়) কমপক্ষে ১ দিন সময় দিয়ে অগ্রপশ্চাতের সব তথ্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করে তার ওপর নিজস্ব বিশ্লেষণ তৈরী করে সভায় আসার সংস্কৃতি অনুসরন করুন।

১৪.সবচেয়ে বড় কথা, দ্রূত সিদ্ধান্ত নিন। স্মার্ট সিদ্ধান্ত মানেই দ্রূত সিদ্ধান্ত। তবে হ্যা, দ্রূত মানে, সিদ্ধান্ত নেবার সবকটি প্রক্রিয়া নিয়ম মেনে দ্রূত শেষ করা। দ্রূত মানে এটা নয়, ওই প্রক্রিয়া এড়িয়ে দ্রূত সিদ্ধান্ত নেয়া।

১৫.সিদ্ধান্ত গ্রহন একটি শিল্পও। যারা সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়াতে জড়িত, তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষন দিন। তাদের ইতিবাচক মোটিভেশন নিশ্চিত করুন। মনে রাখবেন, ভাল সিদ্ধান্ত প্রণয়ন করতে হলে সিদ্ধান্ত গ্রহনকারীকে অবশ্যই নিরপেক্ষ, আপডেটেড, ভাবাবেগমুক্ত ও নন-বায়াজড হতে হবে।

সবশেষে বলি, একটি পুরোনো কথা আছে-ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। বিজ্ঞজনেরা বলেছেন, অতি রাগান্বিত ও অতি খুশি অবস্থাতে সিদ্ধান্ত নেবেন না। কারন ওই অবস্থায় ভুল সিদ্ধান্ত বেশি হয়।

মোঃ ওয়ালিদুর রহমান বিদ্যুৎ

এইচআর/এ্যাডমিন প্রফেশনাল, ক্যারিয়ার/সোশ্যাল কাউন্সেলর ও লেখক
Collected From jagojobs



Related Posts

image

যে ৩ দক্ষতা জীবনে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন আনে

24/09/2024

Career Advice

কর্মজীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনে সাফল্য কেবল কঠোর পরিশ্রম এবং ত্যাগের মাধ্যমেই আসে না, প্রয়োজন আরও বেশি কিছু। কিছু বেসিক স্কিল আমাদের জীবনযাত্রার মান এবং ব্যক্তিগত বিকাশকে উন্নত করতে পারে। এই প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো আয়ত্ত

image

প্রতিদিনের যেসব অভ্যাস আপনাকে সফল করবে

24/09/2024

Career Advice

সাফল্য একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং অবিচলিত প্রচেষ্টা। একবারে সবকিছু করার চেষ্টা করার পরিবর্তে, প্রতিদিন একটু একটু কাজ করলে তা আপনাকে আপনার লক্ষ্যের দিকে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। এটি আপনার স্বপ্নকে বাস্তবে

image

৫ মাসে আপনার জীবন পরিবর্তন করবেন যেভাবে

24/08/2024

Career Advice

২০২৪ শেষ হতে আর মাত্র ৫ মাস বাকি আছে। আসলে ৫ মাসও নেই, আরও কম। আমাদের মধ্যে অনেকেই বছরের শেষে নিজেকে আরও ভালো অবস্থানে দেখতে চান নিশ্চয়ই? সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি। সবার আগে ঝেড়ে ফেলতে হবে হতাশা। আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে