পৃথিবীর সব দেশেই শিক্ষার্থীরা ক্যারিয়ার নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেন। স্কুল পর্যায়ে সাবজেক্ট পছন্দ করা আর ৪ বছরের স্নাতক কোর্স নির্বাচন করার মধ্যে যথেষ্ট তফাৎ রয়েছে। স্কুল পর্যায়ের সাবজেক্ট নির্বাচন একজন ছাত্রের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারকে পরোক্ষ ভাবে প্রভাবিত করলেও ৪ বছরের স্নাতক কোর্স ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নির্বাচনে একটা বিরাট ভূমিকা পালন করে। তাই স্কুলের সাবজেক্ট নির্বাচনের মত করে স্নাতক কোর্স নির্বাচন করা মোটেও উচিৎ না। স্নাতক কোর্স বা ক্যারিয়ার সেক্টর মন চাইলেই যখন তখন পরিবর্তন করা যায় না। কোন কারণে যদি আপনি স্নাতক কোর্স নির্বাচনে ভুল করেন, যদি পরবর্তীতে তা পরিবর্তন করতে হয় তবে এই ভুলের জন্য আপনাকে মারাত্মক মূল্য দিতে হতে পারে। তাই স্নাতক কোর্স নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে গভীর ভাবে চিন্তা করা অত্যন্ত জরুরী।
কোর্স নির্বাচনের সময় শিক্ষার্থীর সে বিষয়ে পড়াশুনা করার আগ্রহ ছাড়াও আরো বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে যেমন শিক্ষার্থীর দক্ষতা, ওই কোর্স সংক্রান্ত ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ, ভর্তি প্রক্রিয়া, ওই বিষয়ে ভর্তির জন্য যোগ্যতা, ওই সেক্টরের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ ইত্যাদি। এসব ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য শিক্ষার্থীরা সাধারণত বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু, আত্মীয় ও শিক্ষকদের আশ্রয় নেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল হয়তো তারা কেউই ওই কোর্সটি সম্পর্কে ভাল জানেন না। তিনি হয়তো তার ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে একটা মন্তব্য করবেন। সব বিশ্ববিদ্যালয় সব কোর্সের জন্য ভাল হয় না, অনেক শিক্ষার্থী নিজের জন্য সঠিক কোর্স নির্বাচন করলেও ভুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তার আকাংখিত ক্যারিয়ার গঠনে ব্যর্থ হয়।
কোন কোর্স ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের আগে যেসব বিষয় জানা জরুরীঃ
১। কোন বিষয়ে আপনার আগ্রহ রয়েছে?
প্রত্যেকটা মানুষের আগ্রহের একটা জায়গা থাকে। কোন বিষয়ে যদি আপনার স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ থাকে তবে সে বিষয় শিখতে বা মুখস্ত করতে আপনাকে বাড়তি শ্রম দিতে হবে না। স্বয়ংক্রিয় ভাবেই আপনার মাথায় ঢুকবে। আপনি যদি অন্যের পছন্দ করে দেয়া কোন কোর্সে পড়াশুনা শুরু করেন যেটিতে আপনার আগ্রহ নেই তাহলে শত চেষ্টা করেও আপনি সে বিষয়ের পড়াশুনা মাথায় ঢুকাতে পারবেন না। অনেকের মুখস্ত করার দক্ষতা ভাল থাকে। মুখস্তকে পুঁজি করে হয়তো আপনি মোটামুটি ভাবে কোর্স শেষ করে ফেলবেন কিন্তু সেই সেক্টরে কাজ করে আপনার উন্নতি করার সম্ভাবনা কম। কাজটিকেই আপনার বোঝা মনে হবে কারণ আপনি কাজটিকে ভালোবাসেন না। আর ভুল কোর্স নির্বাচন করার কারণে সারাজীবন আপনাকে এই বোঝা ঘাড়ে নিয়ে কাটাতে হবে। তাই কোর্সের তালিকাতে একবার চোখ বুলিয়ে নিন ও নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কি শিখতে ও কি করতে ভালোবাসেন।
প্রচলিত বিভাগ সমূহঃ
ইঞ্জিনিয়ারিং এর মধ্যে রয়েছে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার ইত্যাদি।
বিজ্ঞান বিভাগে রয়েছে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি, বোটানি, মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মাসি ইত্যাদি।
কম্পিউটার বিজ্ঞান বর্তমানে জনপ্রিয় একটি সাবজেক্ট। এই সাবজেক্টের উপশাখা গুলোর মধ্যে সফটওয়্যার ডেভেলপিং, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং, ওয়েব ডিজাইনিং, গেম ডেভেলপিং, ডাটাবেজ ম্যানেজিং ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
আর্টস ও ডিজাইন সংক্রান্ত বিষয়ে পড়াশুনা ও ক্যারিয়ার এখন যথেষ্ট জনপ্রিয় ও সম্ভাবনাময়। সাবজেক্ট গুলো হল ইন্টেরিওর ডিজাইনিং, স্কাল্পচার, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ফ্যাশন ডিজাইন, ক্রাফট, সিরামিক ইত্যাদি।
আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে চাকরির বাজারের অসামঞ্জস্যতার কারণে গ্র্যাজুয়েট বেকারদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। অবাক করা ব্যাপার হলো- দেশের প্রায় ৪৭% গ্র্যাজুয়েট তার যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি না পাওয়ায় বেকারত্বের খাতায় নাম লিখিয়েছে (সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান)।
আরো অবাক করা বিষয় হলো- প্রতিবছর এইচএসসি পাসকৃতদের মধ্যে থেকে মাত্র ১২% শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়। যার ২০% সৌভাগ্যক্রমে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবলিক/প্রাইভেট) এবং বাকি ৮০% শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে থাকেন।
চিন্তার কারণ হলো- এইচএসসির পর যে ১২% শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা তথা গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার সুযোগ পান তার প্রায় ৪৭% বেকার। তার মানে দাঁড়ায়‚ দেশের সবচেয়ে মেধাবীদের প্রায় ৫০ শতাংশকেই আমরা কাজে লাগাতে পারছি না যা অত্যন্ত হতাশাজনক। এই মেধাবীদেরকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশে একটি দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে উঠতো। যারা পরবর্তীতে কর্পোরেট তথা দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতো। উল্টো বিদেশ থেকে এতো অধিকসংখ্যক বিশেষজ্ঞ ম্যানেজার আনতে হতো না।
আবার আমাদের দেশে এন্ট্রি লেভেলে প্রচুর মেধাবী আর ক্রিয়েটিভ ছেলেমেয়ে আছে যা মিড লেভেলে খুব একটা নেই বলে বিশেষজ্ঞরা প্রায়শই মতামত দিয়ে থাকেন। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা মেধাবী বেকারদের যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা গেলে ভবিষ্যতে এরাই দক্ষ মিড লেভেল ম্যানেজারে পরিণত হতো। যা থেকে দেশের সব ইন্ডাস্ট্রিই কমবেশি উপকৃত হতো।
উচ্চশিক্ষিত- মেধাবী তরুণদের নিয়ে রাষ্ট্রের পাশাপাশি কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। যারমধ্যে রয়েছে জব ফেয়ার‚ জব রিলেটেড সেমিনার আয়োজন আর লেখনীর মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণ ও দক্ষতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান।
তবে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদেরও কিছু দায়বদ্ধতা থেকে যায়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা তথা পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় ছাত্রাবস্থায়ই পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরির বাজার সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা। সে অনুযায়ী নিজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাওয়া। যা তাদেরকে বেকারত্বের হাত থেকে বাঁচাতে কিছুটা হলেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা রাখি।
Collected From jagojobs