রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ। তবে কোথায় কার রিজিক লেখা আছে তা কেউ জানে না। এজন্য চেষ্টা করে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
প্রত্যেক ব্যক্তিরই প্রত্যাশা ভালো একটা চাকরির। কিন্তু বর্তমান সময়ে চাকরি হয়ে গেছে সোনার হরিণ। অনেকে শত চেষ্টা করেও চাকরি না হতাশ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিচ্ছেন।
আপনার সকল চেষ্টা যখন ব্যর্থ। কোনা দিক থেকেই যখন আশারবাণী শুনতে পাচ্ছেন না। তখন আশারবাণী শুনতে সাহায্য চাইতে পারেন মহান রবের কাছে। তিনি মানুষের সব দুঃখ বোঝেন।
উত্তম রিজিকের ব্যবস্থার জন্য এই দোয়াটি আল্লাহর নবী মুসা (আ.) করেছিলেন।
আরবি : رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ
উচ্চারণ : রাব্বি ইন্নি লিমা- আনজালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফাকির।
অর্থ : হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ পাঠাবে, আমি সেটার মুখাপেক্ষী। (সুরা আল-কাসাস, আয়াত : ২৪)
ভালো চাকরি লাভ অনেকের জন্য এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা ধরনের অসুবিধা ও বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই ভালো ও মানসম্পন্ন চাকরি লাভের প্রত্যাশার আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। তার মহান গুণবাচক নামের আমল করা এবং বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা চাই। গুণবাচক নামগুলোর একটি হলো-
يَا وَهَّابُ
উচ্চারণ : ‘ইয়া ওয়াহহাবু’
অর্থ : কোনোরূপ প্রতিদান ব্যতীত অধিক দানকারী।
উলামায়ে কেরাম বলেন, যারা এসব আমল বেশি বেশি করবেন; আল্লাহ তাআলা তাদের রিজিকে বরকত দান করবেন। তাদের কোনো অভাব-অনটন ও প্রয়োজন থাকলে, দ্রুত সবকিছুর সমাধান দেবেন।
মুসা (আ.)-এর দোয়ার প্রেক্ষিত ঘটনা
মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে মুসা (আ.) বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করেছেন। বিশেষভাবে বলতে গেলে, আল্লাহ তাআলা কোরআনে সবচেয়ে বেশি আলোচনা করেছেন তার বিষয়ে। সেখানে আল্লাহর প্রতি তার আকুতি ও আশ্রয় লাভ এবং কাজ অনুসন্ধানের আহ্বান উঠে এসেছে। পবিত্র কোরআনে ও তাফসিরের গ্রন্থগুলোতে সেই ঘটনাটি যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, তার সংক্ষিপ্ত রূপ এখানে উল্লেখ করা হলো—
ফেরাউনের রোষানলে পড়ে মুসা আলাইহিস সালাম মিশর থেকে দূরে চলে যান। মাদায়িন শহরে গিয়ে পৌঁছান তিনি। সেখানে তার কোনো আশ্রয়ের কিংবা জীবিকার কোনো সংস্থান ছিল না। সেই ঘটনা কোরআনে উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন তিনি মাদইয়ান অভিমুখে রওয়ানা হলেন; তখন বললেন, আশা করা করছি— আমার পালনকর্তা আমাকে সরল পথ দেখাবেন। যখন তিনি মাদইয়ানের কূপের ধারে পৌঁছলেন, তখন কূপের কাছে একদল লোককে পেলেন— যারা পশুদের পানি পান করানোর কাজে ব্যস্ত এবং তাদের পেছনে দুইজন নারীকে দেখলেন— তারা তাদের পশুগুলোকে আগলিয়ে রাখছে। তিনি বললেন, তোমাদের কী ব্যাপার? তারা বললেন, রাখালরা ওদের পশুগুলোকে নিয়ে সরে না গেলে— আমরা আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করাতে পারি না। আর আমাদের বাবা অশীতিপর বৃদ্ধ।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ২২-২৩)
যেভাবে মুসা (আ.) আশ্রয় ও কর্মসংস্থান লাভ করেন
এরপরের আয়াতেই মুসা (আ.) কাজ চেয়ে আল্লাহর মুখাপেক্ষী হওয়ার বিনীত নিবেদন এসেছে। আল্লাহ তাআলা মুসা আলাইহিস সালামের সেই আহ্বান এভাবে তুলে ধরেন, ‘অতঃপর মুসা তাদের (দুই নারীর) জন্তুদের পানি পান করালেন। এরপর তিনি ছায়ার দিকে ফিরে গেলেন এবং বললেন, ‘হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ অবতীর্ণ করবে, আমি সেটার মুখাপেক্ষী।” (সুরা কাসাস, আয়াত : ২৪)
অর্থাৎ আমার আশ্রয়, কাজ ও কর্মসংস্থান দরকার। আর তুমি আমার জন্য যে কাজ বা জীবিকার ব্যবস্থা করবে, আমি তোমার ব্যবস্থা করা সে কাজের বা জীবিকার মুখাপেক্ষী।
ভালো চাকরি ও উত্তম কর্মসংস্থান পেতে যে এ দোয়া কার্যকরী— তা পরের আয়াতেই বর্ণিত ঘটনায় প্রমাণিত। আল্লাহ বলেন, ‘তখন (ওই) দুই নারীর একজন লজ্জাজড়িত পদে তার কাছে এসে বলল, আপনি যে আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করিয়েছেন— তার পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য আমার বাবা আপনাকে ডাকছেন। অতঃপর মুসা আলাইহিস সালাম তার কাছে এসে সব ঘটনা বর্ণনা করলে বৃদ্ধ বললেন, ‘ভয় করো না, তুমি জালিম সম্প্রদায়ের কবল থেকে বেঁচে গেছ। ওদের (দুই নারীর) একজন বলল, হে আব্বা! আপনি একে মজুর-কর্মী হিসেবে নিযুক্ত করুন। কারণ, আপনার চাকর-মজুর হিসেবে নিশ্চয় সে (মুসা) উত্তম হবে, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত।’ (সুরা কাসাস : আয়াত : ২৫-২৬)
আল্লাহর নবী হজরত মুসা (আ.) এভাবেই আল্লাহর কাছে দোয়া ও অন্যকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তম কর্মক্ষেত্র, জীবিকা ও আশ্রয় লাভ করেছিলেন। অতএব, যাদের উত্তম চাকরি ও কর্মক্ষেত্র ও কর্মসংস্থানের প্রয়োজন— তাদের উচিত সার্বিক চেষ্টা-প্রচেষ্টার পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে এসব আমলের মাধ্যমে সহযোগিতা কামনা করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Collected From Rtvonline