ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে। মিলেমিশে কাজ করতে তার যেন কোনো ক্লান্তি নেই। সে যখন থার্ড ইয়ারে পড়ত, তখন থেকেই কম্পিউটারে বিভিন্ন সার্কুলার দেখত, আবেদন করত। বন্ধুরা তাকে এ জন্য কম তিরস্কার করেনি। পাস করার পর লুথার ব্যাপক চিন্তায় পড়ে গেল। কীভাবে সিভি বানাব, কীভাবে আবেদন করব, কোথাও তো কেউ চেনা জানা নেই। লুথারের হতাশা চরমে গিয়ে ঠেকল, যখন সে দেখল, তার চেয়ে ঢের বাজে রেজাল্ট নিয়েও ইথারের একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি হয়ে গেছে। ফেসবুকে এই পোস্ট দিয়েছে ইথার। যাকে পাগল বলা হতো, সেই বন্ধুর সাফল্যের সংবাদ পেয়ে লুথার তাজ্জব বনে গেল। কি করত ইথার? বাজে রেজাল্ট নিয়েও কীভাবে তার চাকরি হল? চলুন, জেনে নিই ইথার আসলে কী করত।
১। ইথার ফেসবুকে বাজে সময় কাটাত না। সে প্রায় ২৫০টির মতো গ্রুপে অ্যাড ছিল। আপনি আসলে অন্যের চেয়ে এক্সট্রা কী করছেন তা নির্ধারণ করে দেবে আপনি কি এক্সট্রা অর্ডিনারি নাকি অর্ডিনারি। মনে রাখবেন, নয় সাধারণ যারা তারাই কিন্তু অসাধারণ। আপনাকে বিজয়ী হতে চাইলেও সাধারণের চেয়ে একটু বেশি করতে হবে। যে সময় লুথার নষ্ট করেছে গেম খেলে, ঘুমিয়ে হেলে দুলে সেই সময়টা ইথার দিয়েছে চাকরি খোঁজার জন্য। লুথামি (অলসতা) লুথারের ক্যারিয়ারে হতাশা ছাড়া আর কিছুই অ্যাড করতে পারেনি। আমাদের দেশে এখন প্রায় সব ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেমেয়েরাই এখন ফেসবুক ইউজার। অনেকে ফেসবুকে লম্বা সময়ও কাটান। তাই ফেসবুককে চাকরি খোঁজার মাধ্যম করে নিতে পারেন। খুব সাধারণ একটা টিপস দিচ্ছি। ফেসবুকে "Career, Job, Professional, Training, HR" এ শব্দগুলো লিখে সার্চ করুন। যত গ্রুপের নাম আসবে, সব গ্রুপে অ্যাড হোন। গ্রুপগুলোয় সব সময় সার্কুলার আসে।
২। পরিকল্পনা জিনিসটা আসলে খুব জরুরি। একটা কথা আছে ইংরেজিতেঃ "If you fail to plan, you will plan to fail" অজানা গন্তব্যে পাড়ি দেয়া আত্মঘাতী। নিজেকে প্রশ্ন করুন। আপনি জীবনে কী হতে চান? কী করতে আপনার ভালো লাগে? আপনি ৫ বছর পর কোথায় দেখতে চান নিজেকে? আপনি কাল মারা গেলে আপনার চারপাশের লোকদের কাছ থেকে কী ধরনের কমেন্ট, আশীর্বাদ আশা করেন? পরিকল্পনা করুন। ইথার পরিকল্পনা করে নিয়েছিল, তৃতীয় বর্ষে থাকতেই যে সে পাস করে বেরিয়েই মার্কেটিং জব করবে। তাই সে বিভিন্ন সেমিনারে যেত। সিভি তৈরি করিয়ে নিয়েছিল প্রফেশনাল রাইটারকে দিয়ে। সর্বোত্তম জিনিসটিই তার চাই। তার মতে সিভি ভালো হলেই ইন্টারভিউ কল পাওয়া সম্ভব। তাই এ ব্যাপারে মোটেই গাফিলতি নয়। তার লক্ষ্য ছিল অটুট, আত্মবিশ্বাস ছিল, চেষ্টা ছিল, ধৈর্য ছিল। সব কিছু তাকে দিয়েছিল প্রবল মনোবল। তাই খারাপ রেজাল্ট আর বাদ সাধতে পারেনি। লুথার কিন্তু ভালো ফল নিয়েও কিছুই করতে পারছে না। হতাশার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। সঙ্গে আছে ক্যান্ডি ক্রাশ, ক্লাস অফ ক্লাউন। তারাও কিছু করতে পারছে না লুথারের জন্য। বাজে সঙ্গী আপনার বাজে সময়ে আপনাকে কিছুই দিতে পারবে না। সাফল্যের সময় সবাই বাহবা দেয়, কিন্তু ব্যর্থতার দায় কেউ নেয় না।
২। ইথার বিভিন্ন পেপারে আসা সার্কুলারগুলোর দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখত, যুগান্তরের চাকরির খোঁজ নামক পেজে কী কী আর্টিকেল আসে, কী কী উপদেশ ছাপা হয়, সবই সে পড়ত। চাকরির নিউজ, চাকরি বাকরি নামধারি সব পেজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
৩। লিঙ্কডইনের কোনো বিকল্প নেই। লিঙ্কডইনে আপনি শুধু চাকরির সার্কুলারই পাবেন না, কোনো চাকরি আপনার সঙ্গে ম্যাচ করে, সেটাও লিঙ্কডইন আপনাকে জানিয়ে দেবে। ইথার লিঙ্কডইন তৈরি করেছিল ভার্সিটির তৃতীয় বর্ষে। এখন তার সেখানে দেড় হাজার কানেকশান। তাই, আজই লিঙ্কডইন প্রোফাইল আপডেট করুন। দৈনিক যুগান্তরে ২৮ জানুয়ারি ছাপা হয়েছিল, ‘কীভাবে লিঙ্কডইন তৈরি করতে হয়?’ লেখাটি পড়ে নেবেন। ভেবে দেখুন, লুথার যদি আজ লিঙ্কডইন খোলে, সে কি পারবে ইথারের মতো রাতারাতি দেড় হাজার কানেকশন করতে? লুথার সব ক্ষেত্রেই দেড় বছর পিছিয়ে পড়েছে।
Collection From Jugantor