মনে রাখবেন নতুন প্রতিষ্ঠানে প্রথম ছয় মাস থেকে এক বছর সময়টা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় অফিস আপনার ব্যাপারে একটা প্রাথমিক ধারণা পেয়ে যায়, যার ওপর ভিত্তি করে আপনার ভবিষ্যৎ উন্নতি। আপনার বেতন বৃদ্ধি, প্রমোশন, আপনাকে স্থায়ী করা না করা এসব কিছুই নির্ভর এ সময়টায় আপনার কার্যক্রমের ওপর। আর তাই মানবসম্পদ পরামর্শকরা বলছেন, নতুন চাকরি পাওয়ার পর কিছু ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া জরুরি।
আচরণে যৌক্তিক
নতুন কর্মক্ষেত্রে শুধু কাজ জানলেই হবে না, আচরণেও সংযত ও কুশলী হওয়া জরুরি। থাকতে হবে সময়ানুবর্তিতা আর নিষ্ঠা। আচরণে যেমন ঔদ্ধত্য থাকা যাবে না, তেমনি নিজেকে লুকিয়ে রাখাও একধরনের অযোগ্যতা। আচরণ হবে খুবই যৌক্তিক। প্রত্যেকেই ভুল করে, আর কর্মক্ষেত্রে নতুন কর্মীদের ভুল করাই স্বাভাবিক। এসব ক্ষেত্রে কোনোভাবেই ভুল স্বীকার না করার ভুল করা যাবে না। নতুন চাকরিতে এমন অনেক ব্যাপার আছে, যা মেনে চললে সুগম হবে আগামীর পথচলা।
মানিয়ে নেয়া
নতুন চাকরিজীবীদের জন্য কর্মক্ষেত্র এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। ‘অফিস’ ব্যাপারটাই তো তাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা! এ কারণে অনেকেরই মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব মানিয়ে নিতে পারাটাও এক ধরনের যোগ্যতা। অফিস চায় যত দ্রুত সম্ভব আপনি তাদের ‘অংশ’ হয়ে উঠুন। সেই ‘অংশ’ হয়ে ওঠার পথে জ্যেষ্ঠ সহকর্মীদের মজাসুলভ টিপ্পনিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে না দেখে কৌশলী হয়ে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রতিটি অফিসেরই ভেতরকার কিছু অনানুষ্ঠানিক আচরণবিধি রয়েছে, যার মধ্য দিয়ে একজন নতুন কর্মী নিজেকে মানিয়ে নেন। কিছুদিন পর নিজেকে যাচাই করুন আপনি কতটা মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। কী ঘাটতি আছে। সেগুলো পূরণের চেষ্টা করুন।
সময়জ্ঞান
চাকরি জীবনে সময়ানুবর্তিতার বিকল্প নেই। শুরু থেকেই সঠিক সময়ের ১০ মিনিট আগে অফিসে আসার অভ্যাস তৈরি করুন। বের হবেন নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট পরে। কোনোভাবে দেরি হয়ে গেলে সেটা আপনার ‘বস’কে জানানোও অফিস-আচরণবিধির আওতাভুক্ত। অফিসে যেতে প্রায় প্রতিদিনই দেরি করলে, স্বয়ং ‘বস’ই আপনার ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলবেন। তখন কোনো অজুহাতই কাজে আসবে না। আর হ্যাঁ, অফিসে সঠিক সময়ে যাওয়া যেমন জরুরি, তেমনি সঠিক সময়ে বেরিয়ে আসাও এক ধরনের ‘স্মার্টনেস’। দেরিতে অফিস ত্যাগ করা এক ধরনের ব্যক্তিত্বের দুর্বলতাও। অফিসে সময়ানুবর্তিতা বজায় রাখলে আপনার একটা গুড-উইল তৈরি হবে, যা আপনার ক্যারিয়ার বহু দূর নিয়ে যাবে।
ঝালাই দিন দক্ষতায়
চাকরির শুরুতে আপনি সব কাজ পারবেন না, এটা কিন্তু অফিস জানে। আর শিক্ষানবিস হলে তো কথাই নেই, কর্তৃপক্ষের শ্যেন দৃষ্টি থাকবে আপনার ওপর। এ কারণে চাকরিতে যোগদানের পর যত দ্রুত সম্ভব নিজের কাজ বুঝে নিন এবং সেসব কাজ সম্পাদনে নিজের দক্ষতা বাড়ান। মনে রাখবেন, সব কাজ পারবেন না, এটা অফিস জানে বলেই দেখতে চায়, কত দ্রুত আপনি নিজের দক্ষতা বাড়াচ্ছেন। নিজেকে নির্দিষ্ট গতির মধ্যে বেঁধে না রেখে বাড়তি দায়িত্ব নিতে শিখুন। এতে আপনার দক্ষতা বাড়বে বই কমবে না। দক্ষতা কম বলে কাজের স্বীকৃতি পাচ্ছেন না, কেউ সেভাবে দাম দিচ্ছে না এসব নিয়ে একদম ভেঙে পড়বেন না। দক্ষতা বাড়াতে থাকুন, স্বীকৃতি কিংবা সাফল্য আপনাই ধরা দেবে।
সৎ থাকুন
অফিসের দৈনন্দিন কোনো কাজ আপনি নাও করতে পারেন। এমনটা দোষের কিছু নয়। এক্ষেত্রে সৎ থাকুন, সহকর্মীর সঙ্গে শেয়ার করে শিখে ফেলুন। অযথা পাণ্ডিত্য জাহির করতে গিয়ে কাজে ভুল করে বিরাগভাজন হবেন না।
সুসম্পর্ক
অফিস মানেই ‘টিমওয়ার্ক’। তাই কোনো কাজ সফলতার সঙ্গে শেষ করতে সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা জরুরি। এখানে ‘ভালো সম্পর্ক’ বলতে চাটুকারিতা কিংবা দেয়া-নেয়ার সম্পর্ক নয়; এটা আসলে ভালো বোঝাপড়ার সম্পর্ক। মনে রাখবেন, সহকর্মীদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়ার সম্পর্ক থাকলে সবচেয়ে লাভবান হয় অফিস। কেননা, তখন যে কোনো কাজই নিখুঁত ও সফলভাবে শেষ করা যায়। এ কারণে একজন নতুন কর্মী হিসেবে সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো বোঝাপড়ার সম্পর্ক গড়তে নিজের ভেতরটা উন্মোচন করুন। কেননা, সুসম্পর্ক গড়তে অন্যদের আগ্রহ না থাকলে নতুন কর্মীকেই এগিয়ে আসতে হবে। পরে এসব ক্ষেত্রে আপনি অন্তত দায়মুক্ত থাকতে পারবেন। কেউ বলতে পারবে না, অফিসের ওই নতুন ছেলে কিংবা মেয়েটা একেবারেই আত্মকেন্দ্রিক।
আত্মসচেতনতা
সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে আত্মসচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য নিজেকে জানতে হবে এবং নিজের সব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। নিজের যোগ্যতা ও মেধা কাজে লাগিয়ে সাফল্যেও চূড়া উঠা সম্ভব এ আত্মবিশ্বাসটুকু আজীবন লালন করতে হবে।
Collection From Jugantor