তাহলে এখনই বসে পড়ুন ক্যারিয়ার পরিকল্পনা নিয়ে। পরিকল্পনাই এগিয়ে রাখবে আপনাকে।
অনেকে পড়াশোনা শেষ করে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করতে বসেন। স্বাভাবিকভাবেই তখন প্রতিযোগিতার দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে হয়। অথচ ছাত্রাবস্থাতেই কর্মজীবনের পরিকল্পনা করে নিলে পস্তাতে হয় না। তাই এখনই সাজিয়ে নিন নিজের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা। পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কোনো ভুল করা যাবে না। সঠিক পরিকল্পনা ও সে অনুযায়ী নিজেকে যদি তৈরি করতে পারেন, চাকরির জন্য আপনাকে হন্যে হয়ে ঘুরতে হবে না। চাকরিই আপনাকে খুঁজে নেবে।
পরিকল্পনা শুরু থেকেই
ক্যারিয়ার পরিকল্পনা শুরু হয় অষ্টম শ্রেণি পাশের পর থেকেই। এ সময় বিভাগ ও বিষয় নির্বাচনের উপর ক্যারিয়ারের অনেক কিছু নির্ভর করবে। অনেকেই লক্ষ্য স্থির না করেই মাধ্যমিক পর্যায়ে মানবিক, বাণিজ্য বা বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। ভালো করে বুঝেশুনেই বিভাগ নির্বাচন করা উচিত। আবার অনেকেই যেকোনো বিষয় পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যায়। পড়া শেষ করার পর বুঝতে পারে, তার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। তখন আর কিছুই করার থাকে না। ভালো চাকরি পেতে বেগ পোহাতে হয়। কেউ কেউ অতিরিক্ত যোগ্যতা বা ভাগ্য সহায় হওয়ার কারণে ভালো চাকরি জুটিয়ে নিতে সক্ষম হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সে পেশার জন্য যে ব্যক্তিত্ব, দক্ষতা দরকার তা তার নেই। তাই নিজের আগ্রহ, যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব, রুচি, দক্ষতা, পারিপার্শিক অবস্থা প্রভৃতি বিবেচনায় এনে পরিকল্পনা করতে হবে।
কী এই ক্যারিয়ার পরিকল্পনা
ক্যারিয়ার পরিকল্পনাআপনার কোন বিষয়ে আগ্রহ বেশি, কোন পেশার সঙ্গে যুক্ত হলে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারবেন, সে বিষয়টি আপনাকেই স্থির করতে হবে। যে বিষয়টিতে ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছা, তা ভবিষ্যতে কতটুকু সুবিধাজনক হবে, তাও ভাবতে হবে। এ ছাড়া সমাজে সে পেশার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু তাও আমলে নিতে হবে। কেউ যদি প্রশাসক হতে চান, তার জন্য হয়তো মানবিক বিভাগ বেছে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলে তো আর কলা বা বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হওয়া যাবে না! আবার কেউ যদি বিজনেস এক্সিকিউটিভ হতে চান, বাণিজ্য বিভাগ বেছে নেয়াই তার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত। আর এই দিকগুলো আগে থেকেই ভাবতে হবে। তারপর লক্ষ স্থির করতে হবে। আমাদের দেশে যদিও নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো করলে যেকোনো বিভাগ থেকেই বেশির ভাগ পেশায় যাওয়া যায়।
নিজেকে জানতে হবে সবার আগে
বিশ্বখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস বলেছিলেন, ‘নিজেকে জানো।’ ক্যারিয়ার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে নিজেকে জানতে হবে সবার আগে। নিজেকে জানার মাধ্যমেই আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, কোন বিষয়ে নিজের আগ্রহটা বেশি। পাশাপাশি সামর্থ্যের বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। বুঝতে হবে প্রতিযোগিতায় অন্যদের সঙ্গে আপনি কতটুকু পেরে উঠতে পারবেন। এরপর সিদ্ধান্ত নিন নিজের ক্যারিয়ারটাকে কীভাবে সাজাবেন, কোন দিকে মোড় নেবে আপনার পেশাজীবন। লক্ষ্য নির্ধারণের আগে নিজের সম্পর্কে জানতে হবে। নিজের সম্পর্কে জানা মানে নিজের আগ্রহ, কৌতূহল, আকাঙ্ক্ষা, পছন্দ-অপছন্দ, মানসিকতা এসব বিষয় বুঝতে হবে।
বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত
আমাদের দেশে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা না থাকায় মাধ্যমিক পর্যায়ে শাখা নির্বাচনের সময়ই শিক্ষার্থীদের একটি পথ বেছে নিতে হয়। মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, বিজ্ঞান-এই তিনটি শাখার মধ্যে যেকোনো একটিকে নির্বাচন করার আগে নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত হতে হবে। আমাদের দেশে অভিভাবকদের মধ্যে ছেলেমেয়েদের ওপর জোর করে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়; যা অনেক ক্ষেত্রে মঙ্গলজনক হয় না। যদিও মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজেই সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো পরিপক্বতা আসে না, তারপরও তাদের মতকে একেবারেই অগ্রাহ্য করা ঠিক হবে না। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি শিক্ষার্থী ও অভিভাবক একসঙ্গে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়।
সংশোধনের সুযোগ
এসএসসি পাসের পর উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি হওয়ার সময় শাখা পরিবর্তনের একটি সুযোগ থাকে। বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করে শিক্ষার্থীরা শাখা পরিবর্তনের মাধ্যমে মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষা শাখায়, মানবিক বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে শিক্ষার্থীরা মানবিক বিভাগে ভর্তি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে মাধ্যমিক পর্যায়ে যে শাখা ছিল, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে সে শাখায় ভর্তি হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে যদি মনে হয়, শাখা পরিবর্তনের মাধ্যমে আরও ভালো বা সুনিশ্চিত ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব, সে ক্ষেত্রে শাখা পরিবর্তন করা যেতে পারে। আর যদি মনে হয়, শাখা নির্বাচন ভুল ছিল বা যে শাখায় আপনি পড়াশোনা করেছেন তা সহজে আত্মস্থ করতে পারছেন না, তবে শাখা পরিবর্তনের মাধ্যমে তা সংশোধন করে নেয়াই ভালো।
চূড়ান্ত ধাপ
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় বিষয় নির্বাচনে কোনোক্রমেই ভুল করা যাবে না। এ সময় সিদ্ধান্ত নিতে হবে অনেক ভেবেচিন্তে। আর সিদ্ধান্তের আগে অভিজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে নেয়া ভালো। ব্যক্তিগত ধ্যান-ধারণা ও আকাঙ্ক্ষার চেয়ে যে বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তা হলো, বাস্তব ক্ষেত্রে বিষয়টির গুরুত্ব কতটুকু। বিষয়টি কতটুকু সময়োপযোগী ও সম্ভাবনাময় সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। নিজের আগ্রহ ও পছন্দের বিষয়টি তো প্রাধান্য পাবেই। আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকেও শিক্ষা নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এ বিষয়ে সবার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করাই ভালো।
স্বপ্ন সত্যি করার পালা
ছোটকাল থেকেই অনেকের মনে রঙিন স্বপ্ন গেঁথে যায়-কেউ ডাক্তার হবে, কেউ পাইলট হবে, কেউ প্রকৌশলী, আবার কেউ হতে চায় শিক্ষক। পরিকল্পনা অনুযায়ী সঠিক পথে এগিয়ে যেতে পারলে স্বপ্নকে বাস্তবের রেখায় দাঁড় করানো কঠিন কোনো বিষয় নয়। সবকিছু ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত যখন নিয়েই ফেলেছেন, এর সঙ্গে আরও একটি বিষয় যোগ করুন, তা হলো আত্মবিশ্বাস। বিশ্বাস রাখবেন, ছাত্রজীবনে যদি ভালো ফলাফল থাকে বা আপনি নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে পারেন, তবে উপযোগী বা চাহিদা অনুযায়ী চাকরি নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। আর যে পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান, সে ক্ষেত্রে কর্মরতদের সঙ্গে মিশতে পারেন। এতে পেশাটি সম্পর্কেও পূর্ব ধারণা পাওয়া যাবে। আর একটি বিষয়, শুধু পরিকল্পনা করলেই কি হলো? সে অনুযায়ী নিজেকে কিন্তু তৈরিও করে নিতে হবে।
সময় ব্যবস্থাপনা
জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে হলে সবার আগে সময়কে গুরুত্ব দিতে হবে। যে যত বেশি সময়ের সদ্ব্যবহার করতে পারবে, সফল হওয়ার সম্ভাবনাও তার তত বেশি। ‘আগামীকাল করব’ বলে কোনো কাজ ফেলে না রেখে প্রত্যেক দিনের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। প্রয়োজনে প্রতিদিনের কাজের রুটিন করে নিন। এতে আপনি সহজেই সময়কে কাজে লাগাতে পারবেন। আর একটি বিষয়, অনেকেই একটি কাজে অনেক সময় নিয়ে ফেলেন। যা সঠিক ক্যারিয়ার পরিকল্পনার অন্তরায়। সময় ব্যবস্থাপনা যদি সঠিকভাবে করতে পারেন, আপনি সাফল্যের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেলেন।
যোগাযোগ দক্ষতা
সাফল্যের পেছনে যোগাযোগ দক্ষতা অনেক বেশি কাজ করতে পারে। দেখা গেল, একটি ভালো চাকরির বিজ্ঞাপন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আপনি সেই চাকরির জন্য যোগ্য, অথচ বিজ্ঞাপনটি আপনার চোখেই পড়েনি। অথচ বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে কিন্তু আপনি সহজেই বিষয়টি জানতে পারতেন। তাদের আলোচনাতেই হয়তো উঠে আসত বিষয়টি। এভাবে যোগাযোগ দক্ষতার অভাবেও কিন্তু আপনি চাকরির সুযোগ হারাতে পারেন। এ জন্য আপনি সমাজের নানা পেশাজীবী ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মিশতে পারেন। নিয়মিত পত্র-পত্রিকা পড়া, টেলিভিশনে খবর শোনা, জব সাইট ভিজিট, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্যারিয়ার বিষয়ক বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে চোখ রাখা ক্যারিয়ার পরিকল্পনার অংশ হতে পারে।
আপনি প্রস্তুত তো?
শুধু লক্ষ স্থির করে বসে থাকলে হবে না, নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। দলগতভাবে পড়াশোনা বেশ কাজে দেবে। চাকরি ক্ষেত্রে ভালো করার জন্য ইংরেজিতে ভালো দখল থাকতে হবে। মায়ের ভাষা বাংলাও অতটা সহজ নয়। সেটিও ঝালিয়ে নিতে হবে। আর আজকাল প্রায় সব চাকরির পরীক্ষায়ই সাধারণ জ্ঞান থাকে। এ বিষয়েও জানতে হবে। এ ছাড়া গণিতে অনেকেরই ভীতি আছে, সেটিও দূর করতে হবে। দৈনন্দিন বিজ্ঞানও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর মৌলিক সব বিষয়েই মোটামুটি দখল থাকতে হবে। এ ছাড়া অনার্সের বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঠগুলো বেশ ভালো করেই আত্মস্থ করতে হবে। আজকাল চাকরিতে শর্তই জুড়ে দেওয়া হয়, কম্পিউটার জানতে হবে। এ ছাড়া আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরিতে কী ধরনের যোগ্যতা চাওয়া হয় বা কী ধরনের প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়-এসব বিষয় জেনে সে অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।
চাকরিই আপনাকে খুঁজবে
বর্তমান সময়ে শোনা যায়, ‘চাকরি, সে তো সোনার হরিণ! তার দেখা মেলাই ভার।’ এ কথা মোটেও বিশ্বাস করবেন না। অযোগ্য লোকেরাই এসব কথা বলে। আবার অনেকের কথা থেকে মনে হয়, চাকরি পাওয়ার চেয়ে দুঃসাধ্য কিছু বুঝি আর নেই। এ কথা পুরোপুরি ঠিক নয়। আগে চাকরির বাজারের জন্য নিজেকে তৈরি করুন, তারপর আর আপনাকে বেকার বসে থাকতে হবে না।
Collection From newsbangla24