এসব খাবার যেখানে তৈরি করা হয় তার নাম বেকারি। বেকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ইদানীং তাদের পরিবেশিত পণ্যে যুক্ত করেছে ফাস্টফুড, মিষ্টি এবং হরেক রকম স্বাদের খাদ্য। এসব পণ্যের মূল্য সব ধরনের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকায় দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় স্বল্প পুঁজিতে শুরু করা যায় এই ব্যবসা। এতে করে তৈরি করা যায় বেশ কিছু লোকের কর্মসংস্থান।
প্রাথমিক পুঁজি
যে কেউই ইচ্ছে করলে বেকারির ব্যবসায় নামতে পারেন। তবে শুরুর আগে বেকারি ব্যবসায়ী এবং যে সব প্রতিষ্ঠান বা দোকানে পণ্য সরবারহ করবেন তাদের সঙ্গে কথা বলে নিলে এ বিষয়ে একটি স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাবে। বুঝেশুনে না নামলে এ ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। চাইলে বড়সড় কারখানা দিতে পারেন, আবার শুরু করতে পারেন ছোট পরিসরেও। সবটাই নির্ভর করবে আপনার পুঁজির ওপর। প্রথমেই কারখানা ভাড়া নিয়ে মিকশ্চার মেশিন, ওভেনসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে হবে। স্বল্প পরিসরে শুরু করলে প্রথমে একটি ছোটখাটো কারখানা আর চার-পাঁচজন দক্ষ কর্মচারী নিলেই চলবে। এরপরে প্রয়োজন অনুপাতে কর্মচারীর সংখ্যা ও কারখানার পরিসর বাড়ানো যেতে পারে। পণ্য সরবারহ করার জন্য ভ্যানের প্রয়োজন হবে। প্রাথমিকভাবে একটা বেকারির ব্যবসা দাঁড় করাতে মোটামুটি দুই লাখ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকা লাগতে পারে।
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র
আপনার একটি কারখানাতেই বিস্কুট, কেক, বিভিন্ন ধরনের রুটিসহ সব ধরনের বেকারি পণ্য বানাতে পারেন। প্রাথমিকভাবে বিস্কুট তৈরিতে লাগবে ওভেন, বিশেষ ধরনের টেবিল, ছাঁচ, পাতা মেশিন (যেখানে বিস্কুট কেটে রাখা হয়) এবং মিকশ্চার মেশিন। কেক বানাতে লাগবে ছাঁচ, বিশেষ ধরনের কাগজ, ছুরি। পাউরুটি বানাতে কিনতে হবে এক বা দুই পাউন্ডের ছাঁচ ও ব্রাশ। এসব যন্ত্রপাতি রাজধানীর বংশাল, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়। কিছু যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয় ভারত ও চীন থেকে। এছাড়াও লাগবে প্যাকেটজাত করা মেশিন, আটা, ময়দা, চিনি, তেলসহ প্রয়োজনীয় পণ্য।
প্রশিক্ষণ
সরকারের এসএমই ফাউন্ডেশনও বেকারি পণ্য তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে, যা মানসম্পন্ন খাদ্য তৈরি, প্রক্রিয়াকরণ, স্বাস্থ্যগত ও পরিবেশগত উপাদান, খাদ্য নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নে কাজে লাগে। তবে এসব কাজের ক্ষেত্রে ভালো প্রতিষ্ঠানে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ নিলেই ভালো হয়। এজন্য বিভিন্ন কারখানা থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।
বাজারজাতকরণ
বেকারি ব্যবসায় বাজারজাতকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য দু-তিনজন দক্ষ লোক রাখতে হবে, যারা বিভিন্ন দোকানে পণ্য সরবরাহ করবেন। এছাড়া বড় হাসপাতাল, কর্পোরেট অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে পণ্য সরবরাহ করা গেলে ব্যবসা বাড়বে। আবার ব্যবসা বাড়লে নিজেদের শো রুম নিয়ে সেখানেও বিক্রি করা যেতে পারে।
উৎপাদন ব্যয় ও লাভ
সাধারণত আট কেজি বিস্কুট বানাতে প্রায় ৮শ টাকা খরচ হবে। বিক্রি করা যাবে প্রায় ২ হাজার টাকা। লাভ হবে প্রায় ১২শ টাকা। ১৮ পাউন্ড কেক বানাতে ১ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। বিক্রি করা যাবে প্রায় ৩ হাজার টাকা। এতে লাভ থাকবে প্রায় ২ হাজার টাকা। তিন পাউন্ড পাউরুটি বানাতে ৬০ টাকা খরচ হয়। বিক্রি করা যায় ১২০ টাকায়। এতে লাভ থাকে ৬০ টাকা। মাঝারি একটি কারখানা থেকে সব খরচ বাদে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় করা কঠিন কোনো বিষয় নয়।
সাবধানতা
ময়দা, ডিম থেকে শুরু করে সব উপাদান যখন একত্র করা হয়, তখন খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোনো উপাদানই পরিমাণের চেয়ে কম বা বেশি না হয়। ওভেনে বেকারি সামগ্রী রাখার পর তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। বেশি তাপে বিস্কুট পুড়ে নষ্ট হয়। আর পণ্যের গুণগত মানের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ একবার বাজারে সুনাম পেয়ে গেলে যেমনি খুব আল্প সময়ের মধ্যে সাফল্য অর্জন করা যায় ঠিক তেমনি দুর্নাম হলে উল্টো ঘটনা ঘটতে পারে।
Collection From dailyinqilab