আপনিও ইচ্ছে করলে অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করে একজন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারি হয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।
কাজের ধরন
কাজের ধরন হিসেবে এই শিল্পেকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন উৎপাদন, সেলস এবং সাার্ভিসিং। উৎপাদন ক্ষেত্রে কাজের আবার কয়েকটি ভাগ আছে। যেমন-ডিজাইন, ড্রয়িং ও ক্যালকুলেশন ইত্যাদি। কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ইঞ্জিনিয়াররা এক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা দেখানোর ব্যাপক সুযোগ পান।
সেলস বিভাগে গাড়ি বিপণন, বিক্রয় ও বিতরণের কাজ করা হয়ে থাকে। এই বিভাগে ভালো করতেও কারিগরি জ্ঞান খুব ভালো রাখতে হয়। গ্রাহকের চাহিদা বুঝে, সে অনুযায়ী গাড়ি সম্পর্কে ভালো ধারণা, ইঞ্জিন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা এই বিভাগের মূল দায়িত্ব।
এরপর বিক্রয় এবং সার্ভিসিং বলতে ওয়ারেন্টিযুক্ত বা সার্ভিস ফি দিয়ে গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশের মেরামত ও সার্ভিসিং করা হলো এই বিভাগের প্রধান কাজ।
কাজের ক্ষেত্র
অটো মোবাইল শিল্পে কাজের ক্ষেত্র এখন বেশ বিস্তৃত। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে যেভাবে ইঞ্জিনের ব্যবহার বাড়ছে সে ক্ষেত্রে দক্ষ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় ২৫টিরও বেশি গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যারা প্রতিনিয়ত বিদেশ থেকে গাড়ি আমদানি করছে এবং এই শিল্পকে সমৃদ্ধ হতে সাহায্য করছে। এর ফলে আমাদের দেশে গাড়ি উৎপাদনের বিরাট সুযোগের সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের দেশে কার সার্ভিস সেন্টারের তুলনায় অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা বেশ কম। তাই এ সেক্টরে কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেশি। ফলে এ বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য বসে থাকতে হয় না।
পরিবহন প্রতিষ্ঠান কিংবা যারা ট্রাকের ব্যবস্থা করেন, তাদের অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন। এছাড়া বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালনের জন্য অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করে থাকেন। গাড়ি বিক্রির দোকানগুলোতেও কাজ করা যেতে পারে। আমদানি করা নতুন গাড়ি কিংবা রিকন্ডিশন গাড়ির ত্রæটি সারাতে কাজ করেন তারা। এছাড়া এ বিষয়ে লেখাপড়া করে বিদেশে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগও আছে। বিদেশে গাড়ির কারখানা থেকে শুরু করে গাড়ি মেরামতের গ্যারেজে অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের রয়েছে প্রচুর চাহিদা।
সাভিংসিং সেন্টার
অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়াররা চাইলে নিজেরাই প্রতিষ্ঠা করতে পারেন একটি কার সার্ভিস সেন্টার। এজন্য প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। এ পুঁজি সংগ্রহ করতে পারবেন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকেও। প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণ করতে পারলেও এখাতে দেশের প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণ দেবে।
উপার্জন
সদ্য পাস করা অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষানবিস ইঞ্জিনিয়ারের পদে যোগ দিয়ে প্রতিষ্ঠান ভেদে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পেতে পারেন। একজন অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারেরর বেতন সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা হয়ে থাকে। এছাড়া গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানিতে অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ন্যূনতম বেতন এক লাখ টাকার বেশিও হতে পারে। মূলত দক্ষতার ওপর আপনার বেতন নির্ভর করবে। কেউ যদি নিজেই গাড়ি মেরামতের গ্যারেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তাহলে সব খরচ মিটিয়ে স্থান ভেদে মাসে ৫০ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। তাছাড়া দেশের বাইরে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের চাহিদা বেশি। এসব জায়গায় গাড়ি তৈরির কারখানা ও গাড়ি মেরামতের দোকানে বড় অঙ্কের বেতনের চাকরি করা সম্ভব।
পড়াশোনা
আমাদের দেশে বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠা আছে, যেখানে অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। আজকাল মেয়েরাও এ বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে ন্যূনতম এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কোর্স করতে সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকা প্রয়োজন হবে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা করতে খরচ লাগবে প্রায় তিন লাখ টাকা।
যেখানে পড়তে পারবেন
১। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। তেজগাঁও, ঢাকা-১২০৮।
২। শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ১৬/সি-ডি, বøক-ডি। নূর জাহান রোড মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
৩। মটর্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, পল্লবী, মিরপুর-১২, ঢাকা।
৪। চিটাগাং টেকনিক্যাল কলেজ, ১২৯, মুরাদপুর বিশ্বরোড, চট্টগ্রাম।
Collection from dailyinqilab