আর যদি সেই বিশেষক্ষেত্রে কাজ করার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকে, তাহলে দক্ষতা কিংবা পারদর্শিতা যাই বলো না কেনো, তা অর্জন করা সম্ভব নয়। আর এই অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য শিক্ষার্থী জীবনটাই হলো সেরা সময়।
শিক্ষার্থী জীবনে অনেক কিছুই একসাথে সামলে চলতে হয়। পড়ালেখা, বন্ধু, পরিবার এবং তারপর নিজের কাজ। কিন্তু এতো কিছুর মাঝেও নিজেকে সামনের জীবনের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে হয়। ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে বীজ বোনার কাজটা করতে হয় শিক্ষার্থী জীবনেই। আরও নির্দিষ্ট করে বললে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা। কারণ এখানে একজন শিক্ষার্থী যেই ৪ থেকে ৫ বছর সময় পাড় করে, তার পুরোটা জুড়েই রাস্তা খোলা থাকে বিশ্বজগতের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার। এই ৪ বছর কিংবা ৫ বছর সময়ের মধ্যে একজন শিক্ষার্থীর সামনে অনেক সুযোগ আসে নিজেকে অন্য সবার থেকে উন্নত করার। নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এই সময়টা একদম মোক্ষম। ক্লাবিং করে কিংবা কোনো ধরণের সংস্থার সাথে যুক্ত থেকে বিভিন্ন ধরণের কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব। তবে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো কোনো ইন্টার্নশিপের সাথে যুক্ত হওয়া।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় এমন প্রায় সব বিষয়েই ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা রয়েছে। এই ইন্টার্নশিপ হলো নির্দিষ্ট বিভাগ ভিত্তিক গড়ে তোলা। এখানে শিক্ষার্থীরা তাদের একাডেমিক বিষয় নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা লাভ করে। তবে বর্তমানের প্রতিযোগিতামূলক দুনিয়ায় টিকে থাকার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে একাডেমিক অভিজ্ঞতার পাশাপাশি আরও অনেক ক্ষেত্রে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। এটা নির্ভর করে একজন শিক্ষার্থী তার ক্যারিয়ার কোন দিকে পরিচালনা করতে চায় তার উপর। কেউ হয়তো চায় ব্যাংকিং ক্যারিয়ার তৈরি করতে, কেউবা চায় নিজের বিজনেস শুরু করতে, কেউ চায় শিক্ষকতা করতে কিংবা কেউ চায় অফিস ম্যানেজমেন্টের কাজ করতে। যে ধরণের কাজই হোক না কেনো, সবক্ষেত্রেই ইন্টার্নশিপ এক বিশেষ ভূমিকা রাখে।
তুমি যখন কোনো কাজের অথবা চাকরির জন্য আবেদন করবে অর্থাৎ নিজের ক্যারিয়ার শুরু করতে যাবে, তখন দেখা হবে এধরণের কাজে তোমার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে কিনা। সবে মাত্র শিক্ষা জীবন শেষ করে একজন তো হঠাৎ করেই সব কাজে অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলতে পারবে না। এখানেই ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতাটি কাজে লাগে। এখানে কাজ করার অভিজ্ঞতাই তোমাকে অন্য সবার থেকে এগিয়ে রাখবে। একাডেমিক রেজাল্টই যে সবসময় কাজে ভালো হবার ইঙ্গিত দেয় তা কিন্তু না। একজনের একাডেমিক রেজাল্ট অনেক ভালো। কিন্তু তার বাস্তবিক জীবনে কাজ করার তেমন কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। আর তোমার ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে কাজ করার বেশ ভালো একটি অভিজ্ঞতা রয়েছে। রেজাল্ট যদি তুলনামূলক খারাপ হয়েও থাকে, অভিজ্ঞতার বিচারে তোমাকেই অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
ইন্টার্নশিপে কাজ করলে আরও কী কী সুবিধা পাওয়া যায় ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে তা এক নজরে দেখে নেয়া যাক।
নেটওয়ার্ক তৈরিতে সাহায্য করে
কোনো জায়গায় ইন্টার্নশিপে যুক্ত হলে সেখানে তোমার সহকর্মীদের সাথে এবং ইন্টার্নশিপের দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের সাথে বেশ ভালো একটি সম্পর্ক তৈরি হয়। ভালো সম্পর্কটি যে এমনিতেই তৈরি হয়ে যায় তা না, সম্পর্কটি তৈরি করে নিতে হয়। এটি নিজের ভালোর জন্যই করা উচিৎ। কারণ ইন্টার্নশিপের সময় তাদের সাথে যেই সম্পর্কটি তৈরি হয়েছে, তা পরবর্তীতে যেকোনো কাজে লাগতে পারে। ইন্টার্নশিপ শেষ হয়ে যাওয়া মানে কিন্তু সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়া বোঝায় না। পরবর্তীতে সিভি তৈরির সময় কিংবা অন্য কোনো কাজে রেফারেন্সের সাহায্য লাগলে এখান থেকে অবশ্যই সাহায্য পাবে।
কর্মজগৎ কীরকম তা বুঝতে সহজ হয়
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তরুণরা কোনো রকম পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই কর্মজগতে ঢুকে পড়ে। এই নতুন পরিবেশটি কীরকম বা এখানে কীভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়, সে ব্যাপারে অনেকেরই কোনো ধারণা থাকে না। তাই শুরুতে নিজেকে ঠিকমতো মানিয়ে নিতে প্রায় সবারই কষ্ট হয়। ইন্টার্নশিপের ব্যাপারাটা এখানে একটি সমাধান হয়ে দাঁড়ায়। তুমি যেই কর্মক্ষেত্রে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চাও, তার ব্যাপারে আগে থেকে ধারণা থাকলে তুমি সহজেই বুঝতে পারবে সেখানকার পরিবেশ কীরকম বা কীভাবে সেখানে মানিয়ে চলতে হয়। আবার যেখানে কাজ করতে যাচ্ছো, সেখানে তোমার থেকে কী আশা করা হচ্ছে তা বুঝতেও সুবিধা হয় অনেক।
ইন্টার্নশিপ থেকেই রিক্রুট হবার সুযোগ থাকে
ইন্টার্নশিপে যদি আশানুরূপ ফল দেখাতে পারো, তাহলে অনেক সময় তোমাকে পার্ট টাইম কিংবা ফুল টাইম কাজের জন্য রিক্রুট করা হতে পারে। এটা নির্ভর করে তুমি কাজের প্রতি কতটুকু আগ্রহ দেখাচ্ছো তার উপর। ইন্টার্নশিপ শেষে যদি রিক্রুট হবার সুযোগ নাও থাকে অথবা পড়ালেখার জন্য যদি কাজে যোগ দিতে নাও পারো, তখন পরবর্তীতে সরাসরি কাজে জন্য আবেদন করলে তোমাকে অগ্রাধিকার দেয়া হতে পারে। কারণ তারা তো জানে যে তুমি তাদের সাথে আগে কাজ করেছো। তাদের কাজের ধরণ তুমি বোঝো। একারণে ইন্টার্নশিপের সুযোগ থাকলে তা কখনোই হাতছাড়া করতে হয় না।
সত্যিকার পরিবেশে কাজ করার একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়
এই অভিজ্ঞতাটি অত্যন্ত দরকারি। উপরে একবার বলেছি যে, বেশিরভাগ তরুণ নতুন পরিবেশে কাজ করতে এসে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে না। আসলে পড়ালেখার পরিবেশ ছেড়ে কাজ করার জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার জন্য সবসময়ই কারো না কারো সাহায্য প্রয়োজন। তবে এধরণের পরিবেশে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে মানিয়ে নেয়ার কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। পাশাপাশি ইন্টার্নশিপ শেষে যখন ফুল টাইমার হিসেবে কাজে যোগ দিবে, তখন সহজেই বুঝতে পারবে তোমার কোন সময় কী করা উচিৎ আর কী করা উচিৎ না।
নিজের দক্ষতাকে ঝালিয়ে নেয়ার সুযোগ হয়
যদিও ইন্টার্নশিপে যোগ দিচ্ছ কাজ করার দক্ষতা অর্জনের জন্য, কিন্তু এখানে তুমি বুঝতে পারো যে ক্যারিয়ার হিসেবে তুমি যেই জগৎটাকে বেঁছে নিতে চাচ্ছো তা তোমার জন্য ভালো হবে কিনা। ক্যারিয়ারের লক্ষ্য পূরণের জন্য তোমার কোথায় কোথায় নিজেকে সংশোধন করা উচিৎ তা বোঝার সুযোগ পাবে এখান থেকে। পরবর্তীতে এই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যৎ জীবনে নিজেকে এগিয়ে নেয়ার কাজটা অনেক সহজ করে ফেলতে পারবে।
একাডেমিক গ্রেড ক্যারিয়ার গড়তে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে সেখানে গ্রেডটি যদি কেবল পড়ালেখা নির্ভরই হয়ে থাকে, তবে তা বাস্তবিক জীবনে তেমন কোনো সাহায্য করতে পারবে না। দলগত কাজ, সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার অভিজ্ঞতা, নতুন সহকর্মীদের সাথে মিলে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এসকল দক্ষতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। তাহলেই একাডেমিক শিক্ষাটি ফলপ্রসূ হয়ে উঠে। শুধু মাত্র দক্ষতা জানলেই হবে না। দক্ষতাকে কীভাবে কাজে লাগাতে হয়, সে ব্যাপারেও ধারণা থাকা আবশ্যক।
ইন্টার্নশিপ কেনো করা উচিৎ বা ইন্টার্নশিপ করলে সুবিধা কী কী পাওয়া যায় সেই ব্যাপারে তো জানা গেলো। এবার আসা যাক ইন্টার্নশিপ বাছাই করার ক্ষেত্রে কী কী বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিৎ তা নিয়ে। শুরুতেই বলেছি যে, ইন্টার্নশিপের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হলো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। তবে ক্ষেত্র বিশেষে যদি কারো কাজ করার মতো সময় ও সুযোগ হয়, তাহলে এর আগেও সে করতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ইন্টার্নশিপ করাটা সবচেয়ে উপযুক্ত। এসময় বহিঃবিশ্বের সাথে মিলিত হবার এক বড় সুযোগ থাকে হাতের কাছে। সুযোগটি অবশ্যই একজন শিক্ষার্থীর কাজে লাগানো উচিৎ।
যখন ইন্টার্নশিপ বাছাই করবে, তখন খেয়াল রাখা উচিৎ তুমি কোন দিকে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে চাও। তোমার ক্যারিয়ারে লক্ষ্য একটা। কিন্তু তুমি এমন এক ইন্টার্নশিপ বাঁছাই করলে যা তোমার ক্যারিয়ারের সাথে কোনোভাবেই যায় না। ধরো তুমি চাচ্ছো বড় হয়ে একজন ব্যাংকার হবে। কিন্তু তুমি ইন্টার্নশিপ করলে হোটেল ম্যানেজমেন্টের উপর। অথবা ধরো তুমি চাচ্ছো লেখালেখিকে নিজের পেশা হিসেবে বেঁছে নিবে। কিন্তু তুমি ইন্টার্নশিপ করলে এমন কিছুর উপর যা তোমার লেখালেখির দক্ষতার সাথে যায় না। এরকম ভুল করা যাবে না। কোথায় কোন সময় কী রকম ইন্টার্নশিপের অফার করছে তা খোঁজ রাখা উচিৎ।
আর সর্বশেষ গুরত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, ইন্টার্নশিপ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কখনও অর্থলাভের কথা চিন্তা করা যাবে না। ইন্টার্নশিপ হলো এক প্রকার ট্রেইনিং। এখানে কাজ করার বিনিময়ে তুমি তোমার ক্যারিয়ার গড়ার ব্যাপারে অভিজ্ঞতা লাভ করছো। যদি তুমি চিন্তা করো যে, “এখানে কাজ করে অনেক কষ্ট করবে, কিন্তু কোনো টাকা না পেলে লাভ কী!” তাহলে তুমি মস্ত বড় ভুল করছো। অর্থ উপার্জনের পথ সুগম করার জন্যই হলো ইন্টার্নশিপের সুবিধা। এখান থেকে যেই অভিজ্ঞতা লাভ করবে, তাই কাজে লাগিয়ে তুমি ভবিষ্যতে অর্থ উপার্জন করবে। তাই অর্থ উপার্জনের বিষয়টি যেন কখনও ইন্টার্নশিপ বাছাইয়ের অন্তরায় হয়ে না দাঁড়ায়।
collection from 10minuteschool