পরিবারের অনুপ্রেরণায় সেই লেখাই পাঠিয়ে দিলেন প্রকাশকের কাছে। তারপর লেখিকা হিসেবে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয় নি।
অজ্ঞাত একটি উক্তি আছে-
“আমরা সবাই আমাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিভাবান। আমাদের শুধু আমাদের প্রতিভা ও সামর্থ্যকে চিনতে হবে এবং মেধাকে পূর্ণ সম্ভাবনায় বিকশিত করতে হবে।”
অন্যদিকে লেখক ডীন কুন্টজের ভাষ্যমতে, “আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে প্রত্যেকে মানুষেরই প্রতিভা, ক্ষমতা বা দক্ষতা আছে যার মাধ্যমে সে নিজেকে সমর্থন করতে পারে এবং জীবনে সফল হতে পারে।”
নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভাকে চিনে নেয়াটা বেশ শক্ত কাজ। গতানুগতিক ধারার জীবনযাপন, পড়াশোনা কিংবা ক্যারিয়ারে মনোনিবেশ করতে গিয়ে নিজের প্রতিভাকে বেশিরভাগ মানুষই অবহেলা করে। নিজের ভেতরে থাকা ভিন্ন একজন ‘আমি’-কে আর আবিষ্কার করা হয়ে ওঠে না। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, অনেক শিক্ষার্থী, পেশাজীবী থেকে শুরু করে একজন সফল ক্যারিয়ারধারীও তার নিজের অবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকেন। অনেকে তো আবার মনে করেন তার জীবনের আসল উদ্দেশ্য তিনি যা করছেন তা নয়। এতে যেমন হতাশার সৃষ্টি হয় তেমনই কাজের প্রতি আগ্রহ বা স্পৃহাও নষ্ট হয়।
অথচ নিজের মাঝে লুকিয়ে থাকা প্রতিভার হাত ধরেই বিকশিত হতে পারে নতুন সম্ভাবনা। তাছাড়া সেই পথ ধরে নিজের স্কিল ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে উন্মোচিত হতে পারে ক্যারিয়ারের নতুন দ্বার।
প্রতিভা এবং প্রতিভাবানদের নিয়ে অনেক কথা হলেও প্রত্যেকের মাঝে থাকা সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ কীভাবে করতে হবে তা নিয়ে খুব কমই কথা হয়। দেখে নেয়া যাক নিজের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের ৭টি সহজ উপায়–
১। নিজেকে পর্যবেক্ষণ করুন
এই প্রতিযোগিতামূলক পৃথিবীতে ছুটতে ছুটতে আমরা এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে নিজেদের দিকে নজর দিতেই ভুলে যাই। সেখানে নিজেদের শখ,আহ্লাদ বা আগ্রহের পিছে সময় ব্যয় করাটা যেন রীতিমতো সময় নষ্ট!
নিজের মধ্যে থাকা দক্ষতা, সম্ভাবনা বা প্রতিভা নিজেকে ঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ না করা বা নিজেকে নিয়ে না ভাবার জন্যই বেশিরভাগ সময় বিকশিত হয়ে উঠতে পারে না।
নিজেকে প্রশ্ন করুন, নিজের আগ্রহকে মূল্যায়ন করুন, নিজের শখকে গুরুত্ব দিন; সেটা যত ছোটই হোক না কেনো। এমনকি আপনার শখ যদি হয় সিনেমা দেখা তবে হয়তো আপনার গল্প বলা বা কোনো কিছু ভালো বিশ্লেষণ করার প্রতিভা রয়েছে। চলচ্চিত্র সমালোচকরাও কোনো না কোনোভাবে তাদের যাত্রাটা শুরু করেছিলেন।
প্রয়োজনে আপনার আগ্রহের বিষয়গুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন। এতে আপনি আসলে কোন ক্ষেত্রে ভালো বা প্রতিভাবান তা বুঝতে সহজ হবে।
২। স্রোতের বিপরীতে ভাবতে ভয় নয়
আমরা আসলে পরিবর্তন পছন্দ করিনা। যত খারাপই লাগুক গতানুগতিক জীবনধারার বাইরে বের হওয়ার কথা ভাবিই না। অথচ আমরা যা জানি তার মধ্যেই যদি সীমাবদ্ধ রাখি নিজেদের তাহলে সেলফ ডেভেলপমেন্ট কীভাবে হবে? কীভাবেই বা তৈরি হবে নতুন সম্ভাবনা?
একবার ভেবে দেখুন, হাঁটার দক্ষতা তো আমাদের সবারই আছে কিন্তু প্রথমবার হাঁটতে গিয়ে ঠিক কতবার পড়ে গিয়েছিলেন? তখন যদি আপনি আর না হাঁটার সিদ্ধান্ত নিতেন তাহলে কি সারাজীবন হামাগুড়ি দিয়েই পার করতে হত না?
নিজেকে যাচাই করতে, নিজের দক্ষতা বিকাশ করতে সর্বোপরি নিজের প্রতিভাকে খুঁজে পেতে ঝুঁকি নিতে হবে, স্রোতের বিপরীতে ভাবতে কখনোই ভীত হওয়া যাবে না।
৩। নিজের দক্ষতা ও দুর্বলতাকে জানতে হবে
কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা ভালো এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা খারাপ তা সম্পর্কে আসলে খুব কমই আমরা ভেবে দেখি।
নিজের শক্তি, দক্ষতা এবং দুর্বলতার জায়গাগুলো ধরতে পারলে নিজের প্রতিভার খোঁজ পাওয়াটাও সহজ হয়ে যায়।
হতে পারে আপনি খুব ভালো দাবা খেলেন কিংবা খুব দ্রুত শিখে ফেলতে পারেন একটা নতুন ভাষা। এমনও হতে পারে আপনি খুব ভালো নেতৃত্ব দেন কিংবা পড়তে পারেন খুব দ্রুত। সেই এক আপনিই হয়তো আবার টাইম ম্যানেজমেন্টে কাঁচা কিংবা হিমশিম খান সামান্য চা বানাতে!
একটু ধৈর্য, চিন্তা ও একাগ্রতার মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার দক্ষতা ও দুর্বলতাগুলোকে চিহ্নিত করতে পারবেন। এটি সেলফ ডেভেলপমেন্টেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৪। পেছনে ফিরে দেখুন
একবার একটু পেছনে ফিরে ভাবুন তো, কোন কাজগুলোর জন্য আপনি খেতে কিংবা ঘুমাতে ভুলে যেতেন? কোন অভিজ্ঞতাগুলো এখনো আপনার অন্যতম সেরা স্মৃতি? এমনকি সেটা হতে পারে শৈশব কিংবা কৈশোরের কোনো স্মৃতি। স্কুলে কেন বেশি পরিচিত ছিলেন? জীবনে এই পর্যন্ত আসতে কী কী অর্জন করেছেন? হতে পারে সেটা খুব ছোট কোনো কিছু যেমন: খুব সাধারণ কোনো অ্যাওয়ার্ড কিংবা কন্টেস্টে জয় লাভ। আবার জীবনের কোনো চ্যালেঞ্জিং মুহুর্ত যা আপনি অতিক্রম করে এসেছেন তা নিয়েও ভেবে দেখুন।
বড় হওয়ার সাথে সাথে হয়তো আপনি এই দক্ষতাগুলো হারিয়ে ফেলেছেন। সেই অভিজ্ঞতাগুলো কিংবা পছন্দগুলোকে আরেকবার সুযোগ দেয়া যায় কিনা ভেবে দেখুন।
৫। ডায়েরি লিখুন
খুব অপ্রয়োজনীয় মনে হলেও ডায়েরি লেখাটা বেশ কাজে দেয়। দিনশেষে অথবা সুবিধাজনক সময়ে লিখতে বসুন। নিজের পর্যবেক্ষণ, প্রবৃত্তি, অনুভূতি কিংবা শুধু দৈনন্দিন অবস্থাই লিখে ফেলুন। এটি আপনাকে আপনার দক্ষতা, আগ্রহ কিংবা অনুভূতি সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা দেবে।
৬। কথা বলুন পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে
আমরা আমাদের দক্ষতা উপেক্ষা করে গেলেও সেগুলো কিন্তু কাছের মানুষের চোখ এড়ায় না। আপনাকে নিয়ে আপনার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব কিংবা বিশ্বস্ত ব্যক্তির মতামত এবং পর্যবেক্ষণ আপনার সম্পর্কে নতুন ধারণা দিতে পারে। তাই কথা বলুন তাদের সাথে।
৭। নিজের প্রতিভার যত্ন নিন
কোনো মানুষই আসলে জন্ম থেকে ভালো লিখতে, খেলতে, নেতৃত্ব দিতে কিংবা অন্যান্য যেকোনো কাজ করতে পারার প্রতিভা নিয়ে আসে না পৃথিবীতে। ক্রমান্বয়ে তার আগ্রহকে নিয়ে কাজ করতে করতে সক্ষমতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্দোর একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে,
“পরিশ্রমবিহীন প্রতিভা আসলে কিছুই নয়।”
নিজের সক্ষমতার জায়গাগুলো চিহ্নিত করার পর তার পরিচর্যা করাটা সবচেয়ে জরুরি। তাকে সময় এবং শ্রম দিয়ে পরিণত করে তোলার কাজটি করতে হবে আপনাকেই। সবাই কী বলবে, হাসবে কিনা এসব নেতিবাচক চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে হবে।
বিখ্যাত মার্শাল আর্টিস্ট ব্রুস লী-র মতে,
“আমাদের সবসময় বলা হয় যে প্রতিভা সুযোগ সৃষ্টি করে, অথচ ইচ্ছাই প্রতিভা সৃষ্টি করে।”
সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটানো সহজ না হলেও আপনার ইচ্ছা ও চেষ্টা আপনাকে সেই পথে নিয়ে যাবে। নিজের প্রতিভার পথ ধরে এগিয়ে চলাটা যেমন আপনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে তেমনই আপনাকে করে তুলবে একজন সফল ব্যক্তিত্ব!
collection from 10minuteschool