উচ্চ মাধ্যমিকের পরেই শিক্ষার্থীদের উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের জন্য আলাদা আলাদা বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে হয়। ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের শীর্ষে থাকা বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যারা মেধা তালিকায় প্রথম সারিতে অবস্থান করে তাদের মধ্য থেকে কিছু নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীরা ফিন্যান্স-এ পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকে।
প্রতিযোগিতার এ যুগে ভালো মানের বিষয় পাওয়া যেনো আরেকটি বড় প্রতিযোগিতা। কারন ভালো বিষয়ের উপর ভালো ক্যারিয়ার অনেকটা নির্ভরশীল। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ। বিভাগটিতে বর্তমানে মোট ১০জন শিক্ষক রয়েছে। বিভাগের শিক্ষগণ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পাঠদান সম্পন্ন করেন। প্রত্যেকটি শিক্ষকই বাংলাদেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে এসেছেন, অনেকেই দেশের বাইরে থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন এবং করছেন। বর্তমানে ভালো ক্যারিয়ার গড়ার জন্য ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগে পড়ার গুরুত্ব অপরিহার্য।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করার পর ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের স্নাতক ডিগ্রীর জন্য। প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় ঊত্তীর্ণ হয়ে অনেকেই স্নাতক পড়ার বিষয় নির্ধারণ করতে দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যায়। ছাত্র-ছাত্রীদের স্নাতক বিষয় নির্ধারণ সহজতর করার লক্ষ্যে এই লেখা।
ফিন্যান্স বিষয়টি মূলত বিভিন্ন বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সহায়তা করে। এই বিষয়টি বিভিন্ন গাণিতিক বিশ্লেষণ ও তত্ত্বের (থিওরির) সাহায্যে ব্যবহারিক জীবনে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
প্রতিটি কোর্সে মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন থাকার দরুন উপস্থাপন করার জড়তা ও ভয় কাটবে। কোর্সের সমাপ্তিতে বাস্তব জীবনে থিওরির প্রয়োগের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে পড়ার সুবাদে দেশের অর্থনীতি, শেয়ার বাজার, শিল্পায়ন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং আয়কর, বাজেট ইত্যাদি সম্পর্কে সুদৃঢ় জ্ঞান অর্জন হবে। গাণিতিক বিষয়গুলিতে দক্ষ হলেই কেবল ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে পড়া সহজতর মনে হবে।
ফিন্যন্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে বি.বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করলে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে অগ্রাধিকার পাওয়া যায়। বি.সি.এস.-এ সকল ক্যাডারের পাশাপাশি বি.সি.এস. শিক্ষা- ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং (প্রভাষক) পদে শুধুমাত্র ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরাই আবেদন করতে পারে। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সহকারী পরিচালক (অর্থ) পদে শুধুমাত্র ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরাই আবেদন করার সুযোগ থাকে। দেশীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে (এম.এন.সি.) চাকুরির সুযোগ রয়েছে।
বিদেশে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রির ক্ষেত্রে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। শুধুমাত্র ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং-এ স্নাতক ডিগ্রীধারীরা প্রফেশনাল ডিগ্রি সি.এফ.এ. গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া, সি.এ, এ.সি.সি.এ, এ্যাকচুয়ারী, সি.এস. প্রফেশনাল ডিগ্রি অর্জনের পথও সহজ হয় এবং রেয়াত (এ্যাকজিমশন) পাওয়া যায়।
শেয়ার বাজারের বোকারেজ হাউজে, মিউচুয়াল ফান্ডের অফিসে, ক্রেডিট রেটিং প্রতিষ্ঠানে, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে, এ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানিতে এ্যানালিস্ট হিসেবে শুধুমাত্র ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং-এর গ্রাজুয়েট রিক্রুয়েট করা হয়।
ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে পড়ার দরুন কম্পিউটারে দক্ষ হওয়া ছাড়াও বিশেষ করে স্পেডশিট ( মাইক্রোসফট এক্সেল) ব্যবহারে দক্ষ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে পড়লে আপনি নিজেকে এই প্রতিযোগিতামূলক চাকুরির বাজারে নিজেকে একজন দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলার সুযোগ তো থাকছেই।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
Collected from
sarabangla