ভাইভার প্রস্তুতিকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন: ১. অবচেতন মনের প্রস্তুতি; ২. তথ্যগত প্রস্তুতি ৩. বোর্ডের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি
অবচেতন মনের প্রস্তুতি:
ব্যক্তির সারা জীবনের বিভিন্নভাবে অর্জিত জ্ঞান, এটার ওপরে কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ভাইভার অনেক কিছুই নিজের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা থেকে থাকবে।
তথ্যগত প্রস্তুতি:
(ক) নিজের সম্পর্কে: নিজের নামের অর্থ, নিজের নামে কোনো স্বনামধন্য ব্যক্তি, নিজ জন্মদিনের বাংলা বর্ষপঞ্জি কত তারিখ ও মাস, নিজ স্কুল-কলেজ, নিজ বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগের চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য, নিজ স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা বিখ্যাত ব্যক্তি এবং নিজ পঠিত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন থাকবে বেশি।
(খ) নিজ এলাকা সম্পর্কে: আপনি স্থায়ী ঠিকানা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য: যেমন—প্রতিষ্ঠা সাল, জনসংখ্যা, শিক্ষার হার, প্রধান ধর্ম ও উপজাতি, উপজেলা, বিখ্যাত ব্যক্তি, নদ-নদী, দর্শনীয় স্থান, পত্রপত্রিকা, সংসদের আসন ও সংসদ সদস্যদের নাম, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধে কোন সেক্টরে ছিল, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ও খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন ঘটনা, শত্রু মুক্তির তারিখ, ভাষাসৈনিকদের নাম, চিহ্নিত রাজাকারদের নাম, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনওর নাম জেনে যেতে হবে।
(গ) বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নিয়ে ভাইভাতে বিস্তারিতভাবে প্রশ্ন করা হয়। যেমন-জন্মস্থান, পারিবারিক ইতিহাস, শৈশব, রাজনৈতিক জীবন, কর্মজীবন ও লেখা বইগুলো নিয়ে ভাইভা বোর্ডে নিয়মিতভাবে প্রশ্ন আসে। ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কোনো উত্তর আপনি না পারলে ভাইভা বোর্ড প্রার্থী সম্পর্কে নেগেটিভ ইম্পেরেশন সৃষ্টি হবে। তাই এ ধরনের প্রশ্নগুলোর ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ভুল করা যাবে না। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, উনসত্তরের গণ-আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনাবলি, অপারেশন সার্চলাইট, স্বাধীনতার ঘোষণা, মুজিবনগর সরকার, অপারেশন জ্যাকপট, সেক্টর, সেক্টর প্রধান, মুক্তিযুদ্ধের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা, বীরশ্রেষ্ঠর নাম, পদবি, জন্মস্থান, জন্ম-মৃত্যুর তারিখ, বীরাঙ্গনা, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড, আত্মসমর্পণ চুক্তি, জাতীয় চার নেতা সম্পর্কে বিস্তারিত, (নাম, জেলা, অবদান, জন্ম ও মৃত্যু সাল) মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন দেশের ভূমিকা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারের ভূমিকা ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে। এ ছাড়া বিশেষ কিছু সংবিধানের ধারা বাংলা এবং ইংলিশ উভয়ভাবেই মুখস্থ করে রাখতে হবে। পাশাপাশি সংবিধানের বিভিন্ন ধারার প্রয়োগ বিষয়েও প্রশ্ন হয়ে থাকে।
(ঘ) ক্যাডার চয়েজ: প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় চয়েজ নিয়ে সাধারণত প্রশ্ন জানতে চাওয়া হয়। প্রথম চয়েজের সঙ্গে নিজের পঠিত বিষয়ের সম্পর্ক কী, পুরো ক্যাডার চয়েজ লিস্ট, লাস্ট চয়েজ কী ও কেন দেওয়া হয়েছে, ক্যাডারগুলোর পদসোপান, সাংগঠনিক কার্যক্রম, কাজের কাঠামো, চ্যালেঞ্জ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সচিবের নাম, ট্রেনিং একাডেমি, নিজ পদায়নস্থল ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত পড়াশোনা করে যাবেন।
(ঙ) সাম্প্রতিক ঘটনাবলি: নিয়মিত পত্রিকা পড়াসহ দেশে-বিদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাবলি, মেগা প্রজেক্ট, বাংলাদেশের অর্থনীতি ইত্যাদি নিয়ে প্রচুর পরিমাণে প্রশ্ন হয়। তাই ভাইভার আগে থেকেই নিয়মিতভাবে সাম্প্রতিক ঘটনার দিকে নজর রাখবেন। সাম্প্রতিক ২-৩ মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়তে পারেন। ভাইভার দিন পত্রিকার হেডলাইনগুলো চোখ বুলিয়ে নেওয়া উচিত।
ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি:
আঞ্চলিকতা পরিহার করবেন।
পরিচ্ছন্ন পোশাক ও স্যুটেড ব্যুটেড থাকুন।
পরীক্ষকের প্রশ্ন মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। শোনার পর একটু সময় নিয়ে গুছিয়ে উত্তর দিতে হবে।
ভাইভাতে কোনো প্রশ্ন ইংরেজিতে করলে উত্তরটাও ইংরেজিতেই দিতে হবে। অনেক সময়ই বাংলায় প্রশ্ন করে ইংরেজিতে উত্তর দিতে বলা হয়। কোনোভাবেই বাংলায় উত্তর করার জন্য অনুমতি চাইবেন না।
কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে সেটি বিনীতভাবে বলুন। একটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মাঝখানে অন্য একজন প্রশ্ন করলে প্রথমজনের কাছ থেকে অনুমতি নিন।
একাডেমিক রেজাল্ট এতটা ভালো না হলে ওটার সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য একটা কারণ তৈরি করে রাখবেন।
মুদ্রাদোষ সম্পর্কে সচেতন থাকবেন।
ড্রেসআপ: পুরুষেরা ফরমাল হয়ে যাবেন অবশ্যই। হালকা রঙের (সাদা/আকাশি/এক কালার) ফুল হাতা শার্ট, কালো/নেভি ব্লু প্যান্ট, টাই, ফরমাল জুতা, জুতার কালারের সঙ্গে মিলিয়ে বেল্ট। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ব্লেজার পরতে পারেন। আর শীতকাল হলে সেটা আবশ্যক বলে মনে করি। মহিলাদের ক্ষেত্রে শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ যেটা মানানসই এবং পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
গেটআপ: পুরুষদের ক্ষেত্রে দাড়ি নিয়ে কনফিউশনে পড়ে যান। মূলত দাড়ি যদি সুন্নতি দাড়ি হয় কোনো সমস্যা নেই, অন্যথায় ক্লিন শেভ বাঞ্ছনীয়। ড্রেস ভালোভাবে আয়রন করা থাকলে সুন্দর দেখায়। টাই পরলে বেল্টের হালকা ওপর পর্যন্ত রাখবেন। শার্ট ফুল হাতা থাকবে। স্যুট পরলে স্যুটের হাতার বাইরে শার্টের হাতা দেখা যাবে। মেয়েরা অতিরিক্ত অলংকার পরবেন না, বেশি মেকআপের প্রয়োজন নেই।
Collected from ajkerpatrika