করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর দেশে শিক্ষিত বেকারের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই বেকারত্ব থেকে দেশকে ফিরিয়ে আনতে সরকারের পাশাপাশি আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে আত্মকর্মসংস্থানে।
আত্মকর্মসংস্থান হচ্ছে, ব্যক্তির নিজের কর্মের ব্যবস্থা নিজে করা এবং স্ব-চেষ্টায় স্বাবলম্বী হওয়া। অল্প পুঁজি নিয়ে, নিজের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে কিংবা স্বল্প পরিসরে ঋণ নিয়ে আত্মপ্রচেষ্টায় যে কর্মব্যবস্থা করা হয় তা আত্মকর্মসংস্থান। এই কাজটি করতে নেই কোনো বয়সে বাধা। করোনার পরবর্তী তরুণ প্রজন্মের মাঝে আত্মকর্মসংস্থানের চিন্তাভাবনা ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলছে এবং জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজের খরচ বহন করছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীর আত্মকর্মসংস্থান এর মাধ্যমে পুরো বিশ্বে সুনাম অর্জন করছে এবং প্রায়ই নিজ দেশের জন্য মর্যাদা বয়ে আনছে।
আত্মকর্মসংস্থান এর মাধ্যমে একজন মানুষ নিজেই নয়, এর পাশাপাশি আরো অনেক বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে সমাজ তথা রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। আত্মকর্মসংস্থান রাষ্ট্রের চাকরির চাহিদার ওপর চাপ কমাতে পারে এবং বেকার সমস্যার মতো রাষ্ট্রীয় সমস্যা নিরসনে অবদান রাখতে পারে। আত্মকর্মসংস্থানকে একটু ব্যাপক অর্থে আমরা দেখতে পারি। নিজেই নিজের কর্মসংস্থানকে আমরা যদি আত্মকর্মসংস্থানই বলি, কিন্তু ব্যাপারটা কিন্তু একেবারে সহজ কাজ নয়। এটাকে আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসাও বলতে পারি।
তাই নিঃসন্দেহে আত্মকর্মসংস্থান তরুণ-তরুণীদের জন্য উপযুক্ত একটি কর্ম ব্যবস্থা। বর্তমানে আত্মকর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় বাজার হলো, প্রযুক্তি। সহজলভ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েই মানুষ হয়ে উঠছে স্বাবলম্বী এবং উন্মোচিত হচ্ছে, আত্মকর্মসংস্থানের নতুন নতুন সব দ্বার। আত্মকর্মসংস্থানে অনলাইন যেন হয়ে উঠেছে আলাদিনের চেরাগ, যার মাধ্যমে ঘরে বসেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় খুব সহজেই এবং সংশ্লিষ্ট সকল প্রকার তথ্য, সহযোগিতা পাওয়া যায় মুহূর্তের মধ্যেই। আত্মকর্মসংস্থানের এই ধারণাটি নারী শিক্ষার্থীদের আর্থিক নিশ্চয়তাকে আরও সুদৃঢ় করেছে, কারণ এখানে ছেলে মেয়ে উভয়েরই রয়েছে অংশগ্রহণের সমান সুযোগ।
বর্তমানে বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষের মধ্যেই স্মার্টফোনের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো। ইন্টারনেটে কিছু জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে থাকে, যার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো, ফেসবুক এবং ইউটিউব। সেই মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজে লেনদেন হচ্ছে, দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। অনেকে বাংলাদেশে বসবাস করে বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানিতে কর্মের ব্যবস্থা করছে। সেসব কর্মক্ষেত্রে নিজেকে প্রমাণ করার মধ্য দিয়ে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে, যা ক্যারিয়ার গঠনেও বড় অবদান রাখে।
বর্তমানে বাস্তবতায় গতানুগতিক চাকরির বাজার অনেকটাই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিযোগিতা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলছে। যে পরিমাণ বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই তুলনায় কর্মসংস্থানও হচ্ছে না। প্রতিবছরই স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস করে অনেক ছেলেমেয়ে বেকারত্ব বরণ করে চলছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপের তথ্য দিয়ে বলা যায়, দেশে বেকারত্বের সংখ্যা তিন কোটি ৩৯ লাখ ৮৭ হাজার, এর মধ্যে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ১৯ লাখ ৫১ হাজার। অন্যদিকে, ২০২২ সালে বিশ্বে বেকার মানুষের সংখ্যা ২০ কোটি ৭০ লাখে দাঁড়াবে বলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে যেমন বেকারত্ব সমস্যা দূর করা যায়, তেমনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিকও উন্নতি করা সম্ভব। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে অনেক ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি-আধাসরকারি সংস্থা, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিও তরুণদের দিয়ে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে, স্বাবলম্বী হওয়ার অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। তাই এ দেশের তরুণ সমাজ আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে সময়কে উপযুক্ত কাজে লাগাতে পারছে এবং তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত থাকছে। আত্মকর্মসংস্থান যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মব্যবস্থা করে থাকে, তারই সঙ্গে প্রকাশ করে অনেক নতুন কর্মের সন্ধানও।
আমাদের মনে রাখতে হবে, আত্মকর্মসংস্থান এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা একই সঙ্গে আমাদের সমাজ থেকে দূর করে দিতে পারে দারিদ্র্য ও বেকারত্বের মতো বড় জাতীয় সমস্যাকে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে পরিচিত এক উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে। এ উন্নয়নশীল দেশে আমাদের সবাইকে আগাতে হবে সমান তালে। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে চাকরি না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হলে চলবে না। আমাদের দারিদ্র ও বেকারত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়ে সামনে অগ্রসর হতে হবে। এতে এগিয়ে যাবে দেশ, এগিয়ে যাবে তরুণ প্রজন্ম। আগামীতে হ্রাস পাবে বেকারত্বের হার, সরকারের পাশাপাশি তরুণদের চেষ্টায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
Collected From Risingbd