বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের রচনা লিখতে হয়। লিখিত পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি নম্বর বরাদ্দ থাকে রচনার জন্য। তাই রচনা লেখার সময় অনেকগুলো দিকে নজর দিতে হয়। বিশেষ করে কিছু কলাকৌশল অবলম্বন করলে রচনায় ভালো নম্বর পাওয়া যায়।
সাধারণ নির্দেশনা
● সব প্রশ্নের উত্তর শেষ করার পর রচনা লেখা শুরু করতে হবে।
● যে রচনাটি ভালো পারেন, সেটির উত্তর করবেন।
● বেশিসংখ্যক সংকেত (পয়েন্ট) এবং উপসংকেতের (সাব-পয়েন্টের) মাধ্যমে রচনাটি উপস্থাপন করবেন।
● একটি সংকেত বর্ণনা বা ব্যাখ্যা করার জন্য একাধিক অনুচ্ছেদ লেখা যাবে।
● রচনাটি তথ্যবহুল হবে। যত দূর সম্ভব সাম্প্রতিক তথ্য দিতে হবে। তথ্যকে সহজ করে মুখস্থ করবেন। যেমন: ‘৩ কোটি ৪৬ লাখ ২২ হাজার ৫৯৬’ এই সংখ্যাটিকে ৩ কোটি ৫০ লাখ (প্রায়) হিসেবে উপস্থাপন করুন।
● রচনার নির্দিষ্ট আয়তন নেই। সময়ের সঙ্গে তাল রেখে লিখবেন। যেমন, বিসিএস বাংলা লিখিত পরীক্ষায় রচনার জন্য ৪৫-৫০ মিনিট সময় পাওয়া যায়। সেখানে রচনার আয়তন হতে পারে ৮-১০ পৃষ্ঠা।
● রচনার প্রস্তুতি হিসেবে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকুন এবং তথ্যগুলোকে একটি ফাইলবন্দী করুন।
● ভূমিকা ও উপসংহার শব্দ দুটি ব্যবহার করবেন না। তবে ভূমিকা ও উপসংহার অবশ্যই লিখবেন।
● প্রতিটি সংকেতকে আকর্ষণীয় শিরোনামে লিখতে পারেন। যেমন: ‘গণতন্ত্রে নির্বাচনের ভূমিকা’র বদলে লিখতে পারেন ‘তাই সবার আগে চাই সুষ্ঠু নির্বাচন’।
রচনার সংকেত
বেশিসংখ্যক সংকেত ও উপসংকেতের মাধ্যমে রচনার বিষয়টি উপস্থাপন করতে হবে। কোন কোন পয়েন্টের ভিত্তিতে রচনাটি লিখবেন, সেটি আগেই ঠিক করে রাখুন। নিচে কয়েকটি রচনার সংকেত দেওয়া হলো।
১. জলবায়ু পরিবর্তন
ভূমিকা: জলবায়ু পরিবর্তন বলতে কী বোঝায়; জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ (মানবসৃষ্ট কারণ, প্রাকৃতিক কারণ); জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক প্রভাব (মানুষের ওপর প্রভাব, প্রকৃতির ওপর প্রভাব, বাস্তুসংস্থান ও জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব, কৃষিতে প্রভাব, উদ্বাস্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি); বাংলাদেশে জলবায়ু পরবর্তনের প্রভাব (সুন্দরবন, কক্সবাজার, পাহাড় কাটা, খরা, নদীদূষণ, নদীভাঙন, বন্যা); জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ী দেশ এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশ; আন্তর্জাতিক উদ্যোগ, সম্মেলন ও চুক্তি; জলবায়ু পরিবর্তন রোধে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ; জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সুপারিশমালা বা ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা; সামাজিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও কর্মসূচি (বৃক্ষরোপণ করা, জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া, যেখানে–সেখানে ময়লা না ফেলা, পানির অপচয় রোধ করা, পলিথিন ব্যবহার না করা); উপসংহার।
২. বেকারত্ব ও কর্মসংস্থান
ভূমিকা; বেকারত্ব ও কর্মসংস্থান বলতে কী বোঝায়; বাংলাদেশের বেকারত্ব পরিস্থিতি; বেকারত্বের ধরন; বেকারত্বের কারণ; কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব; শিক্ষা ও জীবিকার সমন্বয়হীনতা; অর্থনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বেকারত্বের প্রভাব; জনসংখ্যা: সমস্যা না সম্ভাবনা; জনশক্তি রপ্তানি; আমাদের জনশক্তি আমাদের সম্পদ; বেকারত্ব দূরীকরণের উপায় (শিক্ষাবিস্তার করা, কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার, জনশক্তি রপ্তানি, আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, চাকরির বাজার বড় করা, বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি ইত্যাদি); বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির তুলনা; সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ; যুব উন্নয়ন কর্মসূচি; বেকারত্ব দূরীকরণে চ্যালেঞ্জ; দারিদ্র্য বিমোচনের কৌশল ও সুপারিশ; একবিংশ শতাব্দীর বিশ্ব; উপসংহার।
৩. গণতন্ত্র ও বাংলাদেশ
আকর্ষণীয় সূচনা; গণতন্ত্র কী (মনীষীদের সংজ্ঞা); গণতন্ত্রের প্রকারভেদ; গণতন্ত্রের সূচক এবং এ সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ও মূল্যায়ন; গণতন্ত্র কী কী ধারণ করে/ গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য; অন্যান্য শাসনব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা; গণতন্ত্রের ভালো দিক; গণতন্ত্রের সমস্যা কোথায়; বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ইতিহাস (স্বাধীনতার আগে-পরে থেকে এ পর্যন্ত রাজনীতি); সংবিধান ও গণতন্ত্র; দুর্নীতি ও সুশাসন; গণতন্ত্রে নির্বাচনের ভূমিকা; গণতন্ত্রে সরকার ও বিরোধী দলের ভূমিকা; গণতন্ত্রে সংসদ, সুশীল সমাজ ও শ্রমিকশ্রেণির ভূমিকা; গণতন্ত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা; গণতন্ত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি; গণমাধ্যম, বিচার বিভাগ, পুলিশ: ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায়; গণতন্ত্রের সমস্যা; করপোরেট বাংলাদেশ অথবা তৃতীয় বিশ্বে বিদেশি হস্তক্ষেপ; বর্তমানে বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের অবস্থা; গণতন্ত্রের সুফল পেতে করণীয়; উপসংহার।
ভূমিকার বদলে
রচনার শুরুতে গতানুগতিক ভূমিকার বদলে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যায়। এ রকম চারটি কৌশল নিচে দেওয়া হলো।
কৌশল ১: দৃশ্যপট তৈরির মাধ্যমে পরিবর্তন দেখানো।
● দৃশ্য ১: ১৯৮০ সাল
গাঁয়ের পথে কৃষক চলছে লাঙল কাঁধে। শহরের রাস্তায় দু-চারটি ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে। দুমুঠো অন্নের জন্য মানুষকে প্রাণান্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে।
● দৃশ্য ২: ২০২২ সাল
চাষাবাদে ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। ব্যক্তিগত গাড়ির চাপে শহরের রাস্তা স্থবির। এখনো দুমুঠো অন্নের জন্য কিছু মানুষকে প্রাণান্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে।
চার দশকের বেশি সময় পার হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রসরতা দৃশ্যমান হয়েছে বিশ্ববাসীর কাছে। অথচ এখনো কিছু মানুষ ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু কমেছে মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য, সহিষ্ণুতা ও মনুষ্যত্ব।
কৌশল ২: উক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে বিষয়ে ঢোকা।
● সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার আরেকজনের বক্তব্যের সূত্র ধরে বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি হতে যাচ্ছে’।
● স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায়, এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘এই স্বাধীনতা তখনই আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলার কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে।’
● ২০১৩ সালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ খাদ্যবিপ্লবের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিপ্লবে জয়ী হতে চলেছে।’
স্বাধীনতার পরে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশ পেয়েছিল বিদ্রূপের হাসি। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি টিকবে কি না, এমন সন্দেহ ছিল খ্যাতনামা অনেক অর্থনীতিবিদের বিশ্লেষণে। অথচ এখন ১৯৭২ সালের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ পৃথিবীর ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের ওপর ভর করে গড়ে ৭ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে এগিয়ে চলেছে দেশ। ২০১৮ সালে তাই জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি জানিয়েছে, বাংলাদেশ আর স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় থাকছে না।
কৌশল ৪: কোনো গল্প বা বাস্তব ঘটনার মাধ্যমে বিষয় উপস্থাপন।
ময়মনসিংহের একটি অবহেলিত উপজেলা ফুলপুর। এ উপজেলার ভাগ্যবদলে যাওয়া এক নারীর গল্প এটা। ধরা যাক, তাঁর নাম ফুলজান বিবি। ফুলজান বিবি বিয়ের পরে নিজের ভাগ্য বদলের জন্য নিজেই উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি তাঁর জমানো টাকা দিয়ে কয়েকটি হাঁস পালতে শুরু করেন। এরপর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ শেষে ঋণের টাকায় ১০০ হাঁস নিয়ে একটি ছোট খামার গড়ে তোলেন। সেই ঋণ শোধ করে এখন স্বাবলম্বী। নিজের টাকায় গড়ে তুলেছেন প্রায় এক হাজার হাঁসের বিশাল খামার। ফুলজান বিবির এ সাফল্য কোনো গল্প নয়, বাস্তব। ফুলজানের মতো আরও অনেক নারী-পুরুষ উদ্যোক্তা তাঁদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। এভাবেই বদলে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্র।
Collected from prothomalo