সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন গ্রেডে বেতন নির্ধারিত হলেও বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে আমাদের দেশে নির্দিষ্ট কোনো বেতনকাঠামো নেই। এ কারণে চাকরির সাক্ষাৎকারে বেতন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন অনেক চাকরিপ্রার্থী। বিশেষ করে সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পাস তরুণ চাকরিপ্রার্থীরা বেতন নিয়ে কথা বলতে বেশি অসুবিধায় পড়েন। নিয়োগকারীদের বেতনসংক্রান্ত প্রশ্নে বিস্মিত বা লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। তবে ভাইভা বোর্ডে বেতনসংক্রান্ত উত্তর দিতে গিয়ে হতে হবে কৌশলী। কারণ, বেশি বেতন চাইলে আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে বাদ দিতে পারে, আবার কম বেতন চাইলে আপনাকে অযোগ্যও মনে করতে পারে।
মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞদের মতে, চাকরির সাক্ষাৎকারের শুরুতেই বেতন নিয়ে আলোচনা করতে হয়। কারণ, এতে সময় নষ্ট হয় না এবং প্রত্যাশা তৈরি হয় না। তবে অন্যরা সাক্ষাৎকারের শেষে বেতন নিয়ে আলোচনা করার পরামর্শ দেন। দ্য বিগ ইন্টারভিউয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও ইন্টারভিউ কোচ পামেলা স্কিলিংসের মতে, বেতন নিয়ে আলোচনা যত দেরিতে করা যায়, তত ভালো। বেতনসংক্রান্ত আলোচনা পিছিয়ে যদি সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে পারেন, তাহলে তাঁরা আপনার ওপর খুশি হবে এবং আপনি ভালো অবস্থানে থাকবেন।
চাকরির সাক্ষাৎকারে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে বেতনসংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কয়েকটি পরামর্শ তুলে ধরা হলো—
১. যখন বেতন নিয়ে কথা বলতে প্রস্তুত নন
যদি আপনি বেতনসংক্রান্ত বিষয়ে দেরিতে আলোচনা করতে চান, তাহলে যখন নিয়োগকারী আপনাকে বেতন নিয়ে প্রশ্ন করবেন, তখন পরিবেশ ঘোলাটে করবেন না। এতে নিয়োগকারী বিরক্ত হতে পারেন। বরং কৌশলী হয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা দীর্ঘায়িত করতে পারেন। আপনি বলতে পারেন, বেতন নিয়ে আলোচনা করার আগে দেখাতে চাই, আমি আপনাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য কতটা উপযুক্ত। এভাবে তাঁদের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন।
তবে সাক্ষাৎকার যদি কয়েকটি ধাপে নেওয়া হয়, তাহলে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথম ধাপেই চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে বেতন সম্পর্কে জানতে চায়। বেতন সম্পর্কে না জেনে পরবর্তী ধাপে ডাকে না। চাকরি খোঁজার প্রতিষ্ঠান ইনডিডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান পল উলফ বলেন, নিয়োগকারী প্রথমেই বেতন সম্পর্কে জানতে চান। কারণ, তাঁরা নিশ্চিত হতে চান, প্রার্থীদের চাহিদার সঙ্গে তাঁদের বেতন কাঠামোর যেন বড় পার্থক্য তৈরি না হয়।
২. বেতন কত চাওয়া উচিত
বেতন চাওয়ার আগে যে প্রতিষ্ঠানে ভাইভা দিচ্ছেন, সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হবে। সেই প্রতিষ্ঠানে আগে থেকে চাকরি করছেন, এমন কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তাহলে প্রতিষ্ঠানের বেতনকাঠামো সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাবেন। ফলে ভাইভা বোর্ডে আপনাকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে না।
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কেউ পরিচিত না থাকলে লিংকডইন বা ফেসবুক থেকেও সাহায্য নিতে পারেন। প্রতিষ্ঠানের নাম ধরে লিংকডইন ও ফেসবুকে সার্চ করলে কাউকে না কাউকে পাবেন। নিজের পরিচয় দিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এ ছাড়া গুগলে অনেক ওয়েবসাইট আছে, যেগুলো বিভিন্ন পেশার সঙ্গে বেতনকাঠামোর গড় ধারণা দিয়ে থাকে। সেগুলো থেকেও মোটামুটি ধারণা নিতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, চাকরি পরিবর্তন করার সময় প্রার্থীরা আগের প্রতিষ্ঠানের চেয়ে সাধারণত ১৫-২০ শতাংশ বেশি বেতন চান এবং জ্যেষ্ঠ পদবি দাবি করেন। চাকরি পরিবর্তন করার সময় বেতন বেশি চাওয়া খুবই যৌক্তিক। কিন্তু আপনি কেন বেশি চাচ্ছেন, তা আপনাকে সুন্দরভাবে তুলে ধরতে হবে। ভাইভা বোর্ডে নিজেই নিজের উকিল সাজতে হবে। উকিল যেভাবে আদালতে যুক্তি দিয়ে বোঝান, তেমনি আপনাকেও নিয়োগকর্তাকে বোঝাতে হবে, আপনি বেশি বেতনের যোগ্য।
ইউর নেক্সট জাম্প ডটকমের সহপ্রতিষ্ঠাতা টিম লো বলেন, ভাইভা বোর্ডে আপনার অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা উকিলের মতো যুক্তি দিয়ে তুলে ধরতে হবে, যাতে এটা স্পষ্ট হয়, আপনি বেশি বেতনের যোগ্য।
৩. যোগ্যতার চেয়ে কম বেতন পেলে
পৃথিবীর অনেক দেশে ভাইভা বোর্ডে আগের প্রতিষ্ঠানের বেতন জানতে চাওয়া আইনসম্মত নয়। কিন্তু আমাদের দেশে এটা খুবই প্রচলিত বিষয়। অনেকে মনে করেন, তিনি তাঁর যোগ্যতার চেয়ে কম বেতন পাচ্ছেন, এ জন্য প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করা দরকার। কিন্তু নিয়োগকারীরা আগের প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি বেতন দিতে চান না। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীদের যোগ্যতার পুরো বিবরণ তুলে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন ইন্টারভিউ কোচ পামেলা স্কিলিংস।
পামেলা স্কিলিংস পরামর্শ দিয়েছেন, ভাইভা বোর্ডে লিস্ট আকারে নিজের কাজ ও যোগ্যতা তুলে ধরুন। বোঝাতে হবে, আপনি যেসব কাজ করেন, সেগুলোর বাজারমূল্য কত বেশি। এমনভাবে নিজেকে তুলে ধরবেন, যেন নিয়োগকারীরা মনে করেন, আপনার বেতন আসলেই বেশি হওয়া উচিত।
৪. প্রত্যাশার চেয়ে কম বেতন অফার করলে
ভাইভা বোর্ডে নিয়োগকারীরা আপনার প্রত্যাশার চেয়ে কম বেতন দিতে চাইলে বেশি বেতন চাইতে ভয় পাবেন না। তাঁদের অফার পর্যালোচনার জন্য সময় নিন। কিছু না ভেবেই উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন নেই। সময় নিন এবং ভাবুন। প্রতিষ্ঠানটিতে বেতনের বাইরেও অন্যান্য সুবিধা আছে কি না, পদোন্নতির সম্ভাবনা কেমন—এসব বিষয় পর্যালোচনা করুন।
ইন্টারভিউ কোচ পামেলা স্কিলিংস মনে করেন, যখন কোনো প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশার চেয়ে কম বেতন অফার করে, তখন ঘাবড়ে না গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি যেন ৩-৬ মাসের মধ্যে বেতন বাড়ায়, সেদিকে আলোচনা এগিয়ে নেওয়া উচিত।
Collected from prothomalo