Islamic Development Bank-Bangladesh Islamic Solidarity Education Wakf (IsDB-BISEW) বাংলাদেশ সরকার এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জেদ্দা, সৌদি আরবের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। তথ্যপ্রযুক্তি এবং কারিগরি শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের যুবসমাজের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে IsDB-BISEW নিজস্ব অর্থায়নে কর্মমুখী শিক্ষা ও বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন, অর্থায়ন এবং বাস্তবায়ন করে থাকে।
IsDB-BISEW পরিচালিত প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে আইটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম অন্যতম। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রতিবছর সহস্রাধিক প্রশিক্ষণার্থী সফলতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে সুদক্ষ তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হিসেবে আকর্ষণীয় ক্যারিয়ার গড়ে তুলছেন। তাঁরা নিয়োজিত আছেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে এবং অনেকেই উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে দেশের জন্য নিয়ে আসছেন রেমিট্যান্স।
প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা শতকরা ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী Web Developer, Software Developer, Database Developer, Network Engineer, Visual & Graphics Engineer, CAD Engineer ছাড়াও অন্যান্য আইটি পেশায় কর্মরত আছেন।
উল্লেখ্য, IsDB-BISEW আইটি স্কলারশিপ বাংলাদেশের একমাত্র আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম, যেখানে যেকোনো বিভাগ (বিজ্ঞান, বাণিজ্য বা মানবিক) থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে, আন্তর্জাতিক মানের ও পেশাদার আইটি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে তথ্যপ্রযুক্তিতে একাডেমিক ডিগ্রি অর্জন করতে না পারলেও আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তিতে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ করে দেয় IsDB-BISEW।
আবেদনের যোগ্যতা: স্নাতক/ফাজিল পাস বা মাস্টার্স/কামিলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং (শুধু কম্পিউটার/টেলিকমিউনিকেশন/ সিভিল/আর্কিটেকচার/সার্ভে/কন্সট্রাকশন) পাস প্রার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন।
অনলাইনে আবেদন করার ঠিকানা : apply.isdb-bisew.info।
সফল কয়েকজনের কথা
‘উন্নত ক্যারিয়ার এবং ভবিষ্যৎ জীবনকে গড়ার জন্য একটি কার্যকর প্রশিক্ষণই যথেষ্ট’ বলছিলেন গ্রামীণফোনে কর্মরত আইটি প্রফেশনাল মো. বাবুল আখতার। তিনি পাবনার একটি সরকারি কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করে IsDB-BISEW আইটি স্কলারশিপ প্রোগ্রামের অধীনে এক বছর মেয়াদি ‘ডেটাবেইস ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ কোর্সটি সম্পন্ন করেন। প্রথমে তিনি বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট টিমে চাকরি শুরু করেন এবং পরবর্তী সময়ে লিডস করপোরেশনে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিযুক্ত হন। বর্তমানে তিনি গ্রামীণফোনে বিজনেস ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করছেন।
আ ক ম রফিকুল আলম, ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটারের বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে এই বিষয়ে পড়াশোনা বা প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাননি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর তিনি IsDB-BISEW আইটি স্কলারশিপ প্রোগ্রামের ‘Enterprise Systems Analysis & Design with C#.NET’ কোর্সটি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে রফিকুল KAZ Software-এ একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছেন। IsDB-BISEW আইটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম তাঁর ক্যারিয়ার বদলে দিতে সাহায্য করেছে।
আ ক ম খাদেমুল হাসান, ঢাকা কলেজে পদার্থবিদ্যায় (সম্মান) পড়ার সময় তিনি তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতে তাঁর ক্যারিয়ার পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। কারণ তিনি জানতেন, তথ্যপ্রযুক্তি বাংলাদেশের একটি অন্যতম উদীয়মান খাত এবং এখানে যোগ্য ব্যক্তিদের আকর্ষণীয় চাকরির সুযোগ রয়েছে। তিনি IsDB-BISEW আইটি স্কলারশিপ প্রোগ্রামের অধীনে এক বছর মেয়াদি ‘ডেটাবেইস ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ কোর্সটি সফলভাবে সম্পন্ন করেন। কোর্সটি শেষ করার ১৫ দিন আগেই খাদেমুল স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়ামে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই জুনিয়র ডেটাবেইস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিতে তাঁর চাকরি নিশ্চিত হয়। খাদেমুল বর্তমানে মধুমতি ব্যাংক লিমিটেডের আইটি ডিপার্টমেন্টে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার (Database Administrator) হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আজ আমার এ সাফল্যের জন্য IsDB-BISEW আইটি স্কলারশিপ প্রোগ্রামটি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।’
IsDB-BISEW-এর অন্যান্য কার্যক্রম: আইটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম ছাড়াও IsDB-BISEW বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষাভিত্তিক আরও চারটি প্রোগ্রাম চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে ২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া ভোকেশনাল ট্রেনিং প্রোগ্রাম অন্যতম। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে মূলত হাইস্কুল বা এসএসসি পরীক্ষার পর ঝরে পড়া ছাত্রদের ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন, মেশিনিস্ট ও ইলেকট্রনিকস—এই ৫টি ট্রেডের যেকোনো একটিতে ছয় মাসের হাতে-কলমে ফ্রি প্রশিক্ষণ (থাকা-খাওয়াসহ) দেওয়া হয়। এখান থেকে যাঁরা সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন, তাঁদের প্রায় শতভাগ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে যুক্ত আছে।
IsDB-BISEW বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ৬টি মাদ্রাসা ও ১টি এতিমখানা স্থাপন করেছে এবং মাদ্রাসাসমূহে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সর্বপ্রথম ২০০৮ সালে দাখিল ভোকেশনাল কোর্স শুরু করে। মাদ্রাসা প্রোগ্রামের আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩২ হাজার ২৫০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন শ্রেণিতে পড়াশোনা করে সুফল ভোগ করেছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৩২ জন দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষায় পাস করেছে এবং পাসকৃতদের মধ্যে ২৩১ জন ছাত্রছাত্রী IsDB-BISEW–এর অর্থায়নে, সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন বিষয়ে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং করছেন। IsDB-BISEW–এর এই প্রোগ্রাম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পথ খুলে দিয়েছে। IsDB-BISEW কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন প্রোগ্রামের তথ্য প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট পাওয়া যাবে।
Collected from prothomalo