সমস্যার কথা জেনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হয়। দিন শেষে কাজের মূল্যায়ন। সবাইকে ছেড়ে দিয়ে পরের দিনের কর্মপরিকল্পনা করে যখন ঘরে ফিরেন তখন ঘড়িতে সময় রাত ৮টা। এর মধ্যে কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফোন করে স্বামীর খোঁজ নেয়া, সন্তান বাড়ি ফিরেছে কিনা সেটি নিশ্চিত হওয়া সবই এক হাতে করতে হয় রুমানা রশীদকে। প্রতিদিনের এ রুটিন মানতে মানতে একঘেয়েমি এসে গেছে। রুমানা লক্ষ করছেন ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মাঝে মধ্যেই তিনি অধীনস্থদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। দিনদিন খিটখিটে হয়ে উঠছেন, যেটি প্রকাশ পাচ্ছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।
রুমানা রশীদের এ আচরণকে কর্পোরেট ব্যক্তিত্বরা খুব স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তারা বলেছেন, টানা কাজ করলে একঘেয়েমি আসা ও মেজাজ হারিয়ে ফেলাটা অস্বাভাবিক নয়। আইটি ও সেবা শিল্প প্রতিষ্ঠান ‘আমরা কোম্পানিজ’র গ্রুপ চিফ পিপল অফিসার অজেয় রোহিষাশ্ব-আল্কাযী বলেন, দিনের বড় একটা অংশ কর্মজীবীদের অফিসে কাটাতে হয়। দীর্ঘসময় কাজের মধ্যে থাকায় ক্লান্তি আসাটা স্বাভাবিক। কর্মস্থলে কাজের চাপ মানসিক চাপ বাড়ায়। অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে অফিসে যেমন কাজে মন দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে, ঠিক তেমনি বাড়ি ফিরেও অন্য কোনো কাজে মন দেয়া সম্ভব হয় না। এতে কাজের ক্ষতি হয়। শরীরেও এর প্রভাব পড়ে। এসব কারণে অফিসে সতেজ থাকাটা জরুরি।
বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- অফিসে ফুরফুরে থাকার জন্য যেমন কাজের অভ্যাসে পরিবর্তন আনা দরকার তেমন লাইফস্টাইলেও ভিন্নতা আনা দরকার। ২-৩ ঘণ্টা কাজ করার পর অন্তত ৫ মিনিট হলেও বিরতি নেয়া উচিত। ওই সময়টাতে চুমুক দিতে পারেন এককাপ গরম চায়ে। কিংবা করিডোরে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। আরও ঘণ্টা দুয়েক কাজ করার পর সহকর্মীর সঙ্গে একটু গল্প করে নিতে পারেন। মজার কোনো ঘটনা মনে করে প্রাণ খুলে হেসে নির্ভার হতে পারেন।
আরও কিছু নিয়ম মেনে চললে এই ক্লান্তি-অবসাদ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব -
* রাতের বেলা সময় মতো ঘুমানোটা অনেক বেশি জরুরি। ছয় থেকে আট ঘণ্টা সাউন্ড স্লিপ হলে সকালে ওঠে সতেজ ভাব কাজ করবে এবং কর্মক্ষেত্রেও ক্লান্তি কাজ করবে না।
* রোজ একই সময় ঘুমিয়ে সকালে একই সময়ে ওঠে পড়ার অভ্যাস করুন। ঘুমের পরিবেশটা নিরিবিলি কি না, তা নিশ্চিত করুন।
* দিনটা শুরু করার চেষ্টা করুণ ব্যায়াম দিয়ে। তবে সারা দিন ফুরফুরে থাকতে পারবেন।
* অফিসে একটানা বসে কাজ করবেন না। কাজের ফাঁকে ফাঁকে মাঝেমধ্যে ব্যায়াম করুন, উঠে হাঁটাহাঁটি করুন।
* খাদ্যাভ্যাসও অফিসে সতেজ থাকতে আপনাকে সহায়তা করবে। প্রতিদিন সকালে ভালোভাবে ভারী নাশতা করুন। অনেক সময় অনেকে তাড়াহুড়া করে সকালের খাবার খেতে ভুলে যান। কিন্তু এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সকালে ভালোভাবে খাবার খেলে সহজে ক্লান্ত হবেন না।
* দুপুরে হালকা তবে রুচিসম্মত খাবার খান। প্রয়োজনে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনুন। পারলে অফিসে ফল-ভালো বিস্কুট ইত্যাদি খাবার রাখুন।
* বারবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। অর্থাৎ কাজের ফাঁকে ফলমূল, বাদাম অথবা সবজি খাওয়া যেতে পারে।
* অফিসে চা-কফি পান করুন। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় নয়, অর্থাৎ তিন কাপের বেশি নয়। কারণ, কফিতে অতিরিক্ত ক্যাফেইন থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
* শরীরের ওজন কমিয়ে ফেলুন। অতিরিক্ত ওজন ক্লান্তি-অবসন্নতার মূল কারণ হয়ে যায়। ওজন কম থাকলে এমনিতেই ফুরফুরে থাকবেন।
* অফিসে অনেকক্ষণ কাজ করার ফলে অনেক বেশি ক্লান্ত লাগলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নেবেন। আধাঘণ্টা বড় চেয়ারে বসে ঘুমিয়ে নিলে ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। এটি নতুন উদ্যম নিয়ে কাজে মনোযোগী হতে সাহায্য করবে।
* প্রতিটা কাজ করার আগে একটা পরিকল্পনা রাখা উচিত। কোন কাজটা আগে করা হবে, কোন কাজটা পরে করা হবে, এভাবে পরিকল্পনা মাফিক গুছিয়ে নিলে চাপ কম পড়ে।
* বেশি বোর হয়ে গেলে ছুটি নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসুন। এছাড়া সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে পরিবার নিয়ে পছন্দের জায়গায় ঢু মেরে আসুন। দেখবেন বিষণ্নতা কেটে যাবে। নতুন উদ্যমে সপ্তাহটা শুরু করা যাবে।
Collected from jugantor