স্বপ্ন যখন বাংলাদেশ ব্যাংক
আমি ২০১৮ সালের মাঝামাঝি স্নাতক পাস করি। ২০১৯ সালের শুরু থেকেই সরকারি চাকরির ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠি। মূলত তখন থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পর্কে অনেক ইতিবাচক তথ্য জানতে পারি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজের পরিবেশ ভালো, উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে ও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা যায়—এসব আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির ব্যাপারে। সে সময় থেকেই আমি বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির স্বপ্ন দেখি।
চাকরি ছেড়ে প্রস্তুতি কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল ২০১৯ সালের মাঝামাঝি থেকে আমি বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। ২০২০ সালে আমি সোনালী ব্যাংকে অফিসার পদে যোগদান করি। বাবা-মা ঢাকায় বসবাস করলেও আমার পদায়ন ছিল নোয়াখালীতে। এর মাঝে করোনা মহামারি শুরু হয়। একই সঙ্গে চাকরি করে পড়াশোনা করা এবং কর্মস্থল থেকে দূরে থেকে মা-বাবার খেয়াল রাখা খুবই কষ্টকর ছিল। অফিস করে খুবই কম সময় পেতাম পড়াশোনা করার জন্য। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির ভূতটা তখনো আমার মাথা থেকে যায়নি। সে জন্য যতটুকু সময় পেতাম, চেষ্টা করতাম পড়াশোনার সঙ্গে যোগাযোগটা ধরে রাখতে।
চাকরি ছেড়ে নতুন করে আবার প্রস্তুতি গ্রহণের চ্যালেঞ্জটাই ‘টার্নিং পয়েন্ট’ ছিল। আর এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ ছিল, ওই সময়টায় চাকরির চেয়েও আমি পড়াশোনা করা বেশি উপভোগ করতাম।
তবে একটা সময় আমি অনুভব করি, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো তুমুল প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষায় উতরে যেতে হলে আমাকে পড়াশোনায় পুরো মনোনিবেশ করতে হবে। তাই ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। তখন অনেকে নিরুৎসাহিত করলেও মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন, কিছু কাছের বন্ধুবান্ধব সাহস জুগিয়েছেন। বাবা-মা আমাকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন। বাবা সব সময় বলতেন, ‘তুমি পারবে’। এরপর আমি ঢাকায় এসে আবার প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ। বাংলাদেশ ব্যাংকে আমার চাকরি হয়ে যায়। আমার চাকরি ছেড়ে নতুন করে আবার প্রস্তুতি গ্রহণের চ্যালেঞ্জটাই ‘টার্নিং পয়েন্ট’ ছিল। আর এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ ছিল, ওই সময়টায় চাকরির চেয়েও আমি পড়াশোনা করা বেশি উপভোগ করতাম।
প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি
প্রিলিমিনারিতে সাধারণত বাংলা সাহিত্য ও বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান ও আইসিটি বিষয়ে ৮০টি বা ১০০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকে। বাংলা সাহিত্য ও বাংলা ব্যাকরণ অংশে সাধারণত ব্যাকরণ থেকেই বেশি প্রশ্ন এসে থাকে। ব্যাকরণের জন্য নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ পাঠ্যবই পড়তে হবে। তবে শব্দভান্ডার, সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বাংলা বানানের নিয়ম, বাগ্ধারা, বাক্য সংকোচন—এসব অন্য বই থেকেও অনুশীলন করতে হবে। বাংলা সাহিত্য অংশের জন্য প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ সম্পর্কে এবং আধুনিক যুগের গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের সম্পর্কে জানতে হবে। ইংরেজির প্রস্তুতিকে ভোকাবুলারি এবং ইংলিশ গ্রামার এই দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। ভোকাবুলারির পাশাপাশি Synonym, Antonym জানতে হবে। আর গ্রামার অংশের Sentence Correction, Error Detection, Sentence Completion-এর নিয়মাবলি জানা জরুরি। ইংরেজি পত্রিকা থেকে নিবন্ধ পড়ার অভ্যাস ইংরেজির দক্ষতা বাড়ানোর জন্য খুবই কার্যকর। গণিতের প্রস্তুতি শুরু করা যেতে পারে ৮ম, ৯ম, ১০ম শ্রেণির বই থেকে টপিকভিত্তিক অঙ্ক করার মাধ্যমে। অঙ্ক করার সময় শর্টকাট নিয়ম না খুঁজে অঙ্ক বোঝার দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সাধারণ জ্ঞানের জন্য বাজারে প্রচলিত যেকোনো বই থেকে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি খুব ভালো করে পড়তে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে। এ ছাড়াও আইটিসির ওপর ধারণা রাখতে হবে।
লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি
লিখিত পরীক্ষার জন্য পত্রিকা পড়ার অভ্যাস জরুরি। এ পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের জন্য গণিত, বাংলা ও ইংরেজি রচনা, Passage, Translation, Summary Writing, Letter Writing এসব নিয়েই প্রশ্ন এসে থাকে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক এবং ব্যাংকবিষয়ক সাধারণ জ্ঞান পড়ে যেতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হলে নিয়মিত সংবাদপত্র পাঠের বিকল্প নেই। সংবাদপত্র থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর তথ্য নোট করে রাখা খুবই কার্যকর।
মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি
মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি অনেকখানি ব্যক্তিকেন্দ্রিক। এ পরীক্ষায় ২৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে। এর প্রস্তুতি অনেকখানি ব্যক্তিকেন্দ্রিক। নিজের সম্পর্কে, নিজের পঠিত বিষয় সম্পর্কে, নিজের জেলা, নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নিজের শখ সম্পর্কে প্রশ্ন হতে পারে। পাশাপাশি, ব্যাংক, ব্যাংকিং সেক্টর, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, দেশের অর্থনীতি, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে প্রস্তুতি আবশ্যক। সাম্প্রতিক দেশ-বিদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি সম্পর্কে জেনে যেতে হবে। এ ছাড়া মৌখিক পরীক্ষার নমুনা পড়ে ধারণা লাভ করা যাবে। মৌখিক পরীক্ষায় পরিপাটি পোশাক পরিধান করে যেতে হবে এবং ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করতে হবে।
Collected from ajkerpatrika