একাধিক মানুষ যখন একসঙ্গে বসবাস করেন বা কাজ করেন, তখন তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। মতবিরোধ যে শুধু পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী, আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের মধ্যেই দেখা দেয়, তা নয়, কর্মক্ষেত্রেও মতবিরোধ দেখা দেয়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্রে প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে মতবিরোধের মুখোমুখি হন। মতবিরোধ দেখা দিলে ব্যক্তি পর্যায়ে ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে কর্মক্ষমতা ও উৎপাদন হ্রাস পায়।
অনেক ক্ষেত্রেই মতবিরোধকে চিরস্থায়ীভাবে শেষ করে ফেলা সম্ভব হয় না। কারণ, নানা বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে মতবিরোধ তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মতবিরোধকে সহ্যসীমার মধ্যে রাখার চেষ্টা করতে হয়। মতবিরোধ কমানোর কিছু কৌশল এখানে তুলে ধরা হলো।
মতবিরোধের মূল কারণ শনাক্ত
প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে সুনির্দিষ্ট কোন কারণে মতবিরোধ হচ্ছে। সমস্যার মূলে প্রবেশ করে তা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। মূল কারণ খুঁজে বের করতে পারলে সমাধান অনেকাংশে হয়ে যায়।
সহনশীল মনোভাব
মতবিরোধ এড়িয়ে চলার জন্য সহনশীল মনোভাব তৈরির চর্চা করতে হবে। কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে চাইবেন। তাঁদের যথাসম্ভব এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। ছোটখাটো এমন অনেক কিছুই আপনি এড়িয়ে যেতে পারেন, যেন তা পরবর্তীকালে কোনো বড় ক্ষতির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।
আলোচনার মাধ্যমে মতবিরোধ নিষ্পত্তি
দ্বিধা না করে মতবিরোধ নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা করুন। আলোচনার থেকে মতবিরোধের অনেক কারণ বেরিয়ে আসবে এবং তার সমাধানও বেরিয়ে আসবে। আলোচনার সময় অপর পক্ষকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে আপনি বিষয়টির সমাধান চান এবং যৌক্তিক যেকোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিতে প্রস্তুত আছেন। তাহলে তিনিও মতবিরোধ সমাধানের চেষ্টায় সহযোগিতা করবেন।
নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষের সাহায্য
মতবিরোধ ব্যবস্থাপনার জন্য আপনি ব্যক্তি পর্যায়ে চেষ্টা করার পরও যদি বিফল হন, সে ক্ষেত্রে একটি নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষের সাহায্য নিতে পারেন। তবে এমন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে হবে, যাঁর কথা অপর পক্ষও গুরুত্বসহকারে নেবেন ও মানবেন।
যৌক্তিক মতামতকে গুরুত্ব দিন
কর্মক্ষেত্রে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় যৌক্তিক মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে। কেউ যদি আপনার থেকে পদ বা বয়সে ছোটও হয়ে থাকেন, তাঁর পরও যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় তাঁর যৌক্তিক মতামতের গুরুত্ব দিন। মনে রাখতে হবে, পরিকল্পনা গ্রহণের সময় যদি মতবিরোধ তৈরি হয়, তবে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।
অন্যের আবেগকেও বুঝুন
অনেক সময় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যখন আপনি কাউকে ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে বা ছোট করার উদ্দেশ্যে কোনো কথা না বললেও আপনার কথায় অন্য ব্যক্তি মনে কষ্ট পেতে পারেন। আপনাকে ভুল বুঝতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অন্যের আবেগকে গুরুত্ব দিতে হবে। যদি কখনো ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়, তখন তাঁকে সহজভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে যে আপনি তাঁকে কষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্যে বা ছোট করার উদ্দেশ্যে কিছু বলেননি এবং ব্যাপারটিকে ওই পর্যায়ে সমাধান করে ফেলতে হবে। অহংকার ভুলে যেতে হবে।
পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণ করা
অনেক সময় মতবিরোধ এত তীব্র পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে তা আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। তাই মতবিরোধ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই তা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। নিরপেক্ষভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে।