চাকরি মানে শুধু বিসিএসকেই মনে হতো
11/08/2024
220 Views
র্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন যখন বাস্তব রূপ লাভ করে, তখন সেটার অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তবে আমার থেকে বেশি খুশি হয়েছেন আমার বাবা-মা। মনে হচ্ছিল আমার নয় বরং বাবা-মায়ের স্বপ্নটাই পূরণ হয়েছে। রেজাল্ট শুনে তারা অনবরত কান্না করছিলেন। স্বপ্ন ছিল আমার সফলতার খবরটা প্রথমে আমার বাবাকে জানাব, সেই সৌভাগ্য হয়েছে। আমার বাবা খুশিতে অঝোরে কেঁদেছেন। সেই সময়কার অনুভূতিটা ছিল আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুভূতি’।
ইসলাম, ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। আবেগাপ্লুত পারভীন ইসলামই জানিয়েছেন তার ক্যাডার পাওয়ার এই অনুভূতি। জন্মস্থান কিশোরগঞ্জ, বাবা- কাজল মিয়া, মা- মরিয়ম আক্তার। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে ৯ম ব্যাচে সম্মান এবং পরে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৮ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়েছিলেন জীবনের কঠিন একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে। স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষে ভালো চাকরি করা। এতদূর গিয়ে সেখান থেকে খালি হাতে ফিরে আসাটাও ছিল তার জন্য অসম্ভব। তাই এই পথটা একটু বেশিই রিস্কি ছিল। পরিশেষে আমি সেই দিনটার দেখা পেয়েছেন, সেটাই তার সফলতা। বিসিএস থেকে প্রত্যাশাটাও একটু বেশিই ছিল। রক্ষণশীল পরিবার থেকে উঠে আসা পারভীনের পরিবারে তার আগে কেউ এসএসসি পাশ করেনি।
তিনিই প্রথম মেয়ে, যে কি-না প্রথম এসএসসি পাশ করে কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ভার্সিটিতে পা রাখেন। শেষে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য হন। পারভীন জানান, ‘এ পর্যন্ত আসাটা আমার জন্য অতটা সহজ ছিল না। যেহেতু আমার বাবা-মা পড়াশোনা সম্পর্কে তেমন কিছু জানতেন না। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাকে একাই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। যার জন্য প্রতিটি সিদ্ধান্তই ছিল আমার জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং। তবে আমার নেওয়া প্রতিটি সিদ্ধান্তকেই আমার পরিবার সমর্থন করেছে।
আর্থিক ও মানসিক দিক থেকে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। ছোটবেলা থেকেই ভালো ছাত্রী ছিলাম, সব সময় ক্লাসে প্রথম হতাম। পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিলাম। সেই সুবাদে এলাকায় পরিচিত মুখ ছিলাম। তাই পারিপার্শ্বিকতা থেকেও তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। বরং সবার কাছ থেকে ভালোবাসা আর অনুপ্রেরণা পেয়েছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার কাছে চাকরি মানে শুধু বিসিএসকেই মনে হতো। চাকরি করলে বিসিএসের মাধ্যমেই করবেন, অন্যথায় নয়। এমন একটা দৃঢ় প্রত্যয় ছিল। যেহেতু মূল লক্ষ্য ছিল বিসিএস, তাই প্রথম বর্ষ থেকেই প্রচুর টিউশনি করতেন। তিনি বলেন, ‘৫ বছরর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি টিউশনি করেই ৬ লাখ টাকা আয় করেছি। আর টিউশনি থেকেই আমার বিসিএসের বেসিকটা স্ট্রং হয়ে যায়।’ ৪১তম বিসিএসকে কেন্দ্র করেই পুরোদমে বিসিএস জার্নিটা শুরু হয়। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায়, নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন।
পারভীন বলেন, ‘খুব ভেঙে পড়েছিলাম এতে। বিসিএস আসলে পরিশ্রমের পাশাপাশি ভাগ্যের ফেভারটাও অনেক বেশি ভূমিকা রাখে। অনেক সময় ভালো পরীক্ষা দিয়েও প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যায় না। তাছাড়া বিসিএসের এই লং জার্নিটা কতটা বন্ধুর, যারা এই রাস্তায় ছিলেন বা আছেন কেবল তারাই জানেন। কত ত্যাগ-তিতিক্ষা-যন্ত্রণা এই সাধনায়, কত শত নির্ঘুম রাত, কত পরিশ্রম! আমার পড়াশোনা ২০১৯ সালে শেষ হলেও ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমি বেকার ছিলাম। যেহেতু বিসিএসই আমার একমাত্র লক্ষ্য, তাই জার্নিটা খুব বেশি সহজ ছিল না। আদৌ আমার চাকরি হয় কি-না, এটা নিয়েও অনেকের অনেক কথা শুনতে হয়েছে। বহুবার ভেঙে পড়েছি, হতাশ হয়েছি কিন্তু আমার ফ্যামিলি সর্বাত্মকভাবে আমাকে সাপোর্ট করেছে।’
পারভীন আরও বলেন, ‘আমি নিজেই আমার অনুপ্রেরণা। আমাকে ভালো কিছু করতে হবে, স্বপ্নপূরণ করতে হবে- এ দৃঢ় প্রত্যয়ই আমাকে অনুপ্রাণিত করত। তাছাড়া আমার প্রতি বাবা-মায়ের বিশ্বাস আর ভাই-বোনের প্রত্যাশা আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিত। যদিও আমার হাতে আরও দুটি বিসিএস আছে। কিন্তু আমার পরিবার চাচ্ছে, আমি যেন শিক্ষা ক্যাডারেই নিজেকে নিয়োজিত করি। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। সুযোগ পেলে সেটি কাজে লাগাব। সর্বোপরি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন গর্বিত সদস্য হয়ে রাষ্ট্রের অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব।’
Collected From Daily Janakantha