‘আধুনিকীকরণে অভিযোজন’ স্লোগানে ঢাকা কলেজে চলছে ৮ম ডিসিএসসি জাতীয় বিজ্ঞান উৎসব ও বিজ্ঞান মেলা। ঢাকা কলেজ বিজ্ঞান ক্লাবের আয়োজনে তিনদিন ব্যাপী এই উৎসব চলছে। এতে ঢাকাসহ দেশের প্রায় ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে প্রজেক্ট তৈরি ও প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার্থীরাও কুইজ প্রতিযোগিতা, আইটি অলিম্পিয়াড, গণিত অলিম্পিয়াড, বায়োলজি অলিম্পিয়াড, রসায়ন অলিম্পিয়াডসহ বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন সেমিনার ও আলোচনায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
সরেজমিনে ঢাকা কলেজ ঘুরে দেখা যায়, পুরো ক্যাম্পাস জুড়েই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আগত ক্ষুদে বিজ্ঞানী ও দর্শনার্থীদের বিপুল সমাহার। উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে সব জায়গায়। কলেজের শহীদ আ.ন.ম. নজিব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়ামে চলছে কুইজ প্রতিযোগিতা, উন্মুক্ত আলোচনা, উপস্থিত দক্ষতা অর্জনের প্রশিক্ষণ সহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন জটিল ও কঠিন বিষয়ের মজাদার সমাধানসহ শিক্ষামূলক নানা আয়োজন।
অডিটোরিয়ামে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের তৈরি করা দেয়ালিকা। বেশ চমৎকার সজ্জা আর তথ্যবহুল এসব দেয়ালিকার নামও দেওয়া হয়েছে যুতসই। বিজ্ঞানের বিপণন, ব্ল্যাক হোল, কালজয়ী কিংবদন্তি, ক্রিপ্টোকারেন্সি, টাইম ডিওরিং প্রেগনেন্সি, দ্যা বাটারফ্লাই ইফেক্ট, সিক্সথ সেন্স টেকনোলজি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, দ্যা কারেন্ট ওয়ার, দ্যা পাওয়ার অফ ব্রেনসহ প্রায় শতাধিক দেয়ালিকা জমা পড়েছে প্রদর্শনীতে।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের তৈরি প্রজেক্টের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা কলেজের টেনিস গ্রাউন্ডে। তিনটি আলাদা প্রদর্শনী কেন্দ্রের দুটিতে প্রজেক্ট আর একটিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী চলছে। বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি সম্পর্কে আগত দর্শনার্থী ও বিচারকদের বর্ণনায় বেশ ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের। প্রায় অর্ধশতাধিকেরও বেশি প্রজেক্টে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনষ্ক চিন্তা ভাবনার বাস্তব প্রতিফলনে বেশ মুগ্ধ দর্শনার্থীরাও।
সেলফ প্রটেক্টর, গ্যাস ডিটেক্টর, সেফটি ফর ড্রাইভারস, ইকো সাস্টেইনেবল সিটি, ফেস ডিটেকশন সিস্টেম ভয়েস জিপিটি, সিএনসি ড্রবোট, ডিজিটাল রোড সেফটি সিস্টেম, পলিউশন ফ্রি সিটি সিস্টেম, ফ্ল্যাড রেমিডিয়েশন, ওয়েস্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট, প্রজেক্ট ফ্ল্যাশ, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, থ্রিডি প্রিন্টার সিস্টেম, ড্রিম এপেক্স, ডাটা সার্ভে শিপ, মেডিকেল রোবটসহ নানান ধরনের উদ্ভাবনী প্রজেক্ট দেখা গেছে।
প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া ঢাকা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাশরিফ হাসান প্রজেক্ট সম্পর্কে বলেন, বর্তমানে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। সরকারি নির্দেশনার পরও মোটরসাইকেল চালক বা আরোহীদের অনেককেই হেলমেট ব্যবহার করানো যাচ্ছে না। তাই আমি এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করেছি যেখানে চালক বা সঙ্গের আরোহী হেলমেট না পরা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চালু হবে না। আবার মোটরসাইকেল চলন্ত অবস্থায়ও যদি চালক বা আরোহী মাথা থেকে হেলমেট খুলে ফেলেন তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মোটরসাইকেল বন্ধ হয়ে যাবে।
হামদর্দ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী জিলান আলী প্রদর্শনীতে নিয়ে এসেছেন ডাটা সার্ভে শিপ। তিনি বললেন, এই শিপের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তিতে পানিতে দূষণের মাত্রা ও পিএইচের পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে। সেসব ডাটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হবে নির্ধারিত ওয়েবসাইটে। যেখান থেকে সাধারণ মানুষজনও সেসব নদী বা জলাশয়ের পানি ব্যবহারে সচেতন হতে পারবেন।
আধুনিক প্রযুক্তির সিএনসি ড্রবোট নামের প্রিন্টার নিয়ে এসেছেন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ, তাহসিন ইবনে মাসুদ ও সুমাইয়া বিনতে আজাদ। দলনেতা সাজিদ আবদুল্লাহ বললেন, এই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির মাধ্যমে সরাসরি কম্পিউটারের মাধ্যমে থ্রিডি প্রিন্ট ও হুবহু স্বাক্ষর সম্ভব। এতে আলাদা কোনো কালির প্রয়োজন নেই। যেকোনো কলম বা পেন্সিলের মাধ্যমেই এই কাজ অল্পসময়ের মধ্যে করা সম্ভব হবে।
অপরদিকে এমন আয়োজনের মধ্য দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান চর্চার আগ্রহ বাড়বে এমন প্রত্যাশা জানালেন ঢাকা কলেজ বিজ্ঞান ক্লাবের আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শরীফা সুলতানা। তিনি বলেন, বর্তমান সময়টা আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সব কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। আমাদের দেশের সাধারণ শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলার জন্য এমন আয়োজনের বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব অথবা এর পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতার চর্চা ও উদ্ভাবনী শক্তির চর্চা বাড়াতে হবে। সেজন্য আমাদের এই উৎসবের স্লোগানও দেওয়া হয়েছে আধুনিকীকরণের অভিযোজন। অর্থাৎ শিক্ষা-দীক্ষায় যোগ্য হয়ে আগামী দিনের নতুন পৃথিবীতে যেকোনো অবস্থায় শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেন সেটিই আমাদের এই উৎসবের মূল লক্ষ্য।
একইসাথে আগামী দিনেও এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।