Facebook Youtube Twitter LinkedIn
...
সুখবর : মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থান আইনে সংশোধন

বিদেশি শ্রমিকনির্ভর মালয়েশিয়া এমপ্লয়মেন্ট (কর্মসংস্থান) আইন সংশোধন করেছে। যা ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আইনের ৬০ ধারা সংশোধন করে লেবারের ডিরেক্টর জেনারেলের কাছ থেকে পূর্বানুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এজন্য নিয়োগকর্তা বা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু বাধ্যতামূলক শর্ত রয়েছে; যেমন—এমপ্লয়মেন্ট আইনের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো ইস্যু পেন্ডিং থাকা যাবে না; এমপ্লয়মেন্ট আইনের অধীনে প্রদত্ত কোনো সিদ্ধান্ত বা আদেশ বা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা; সকসো, মিনিমাম বেতন এবং মিনিমাম আবাসনের শর্ত প্রতিপালন না করার কারণে নিয়োগ কর্তাকে কোনো দণ্ড আরোপ করলে এবং সে মোতাবেক অবস্থার উন্নয়ন না করলে; মানবপাচার ও জবরদস্তিমূলক শ্রমের জন্য নিয়োগকর্তা শাস্তি পেলে নিয়োগের অনুমতি পাবে না।
বর্তমান আইন অনুযায়ী বিদেশিকর্মী নিয়োগের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে নিয়োগকর্তাদের এবং অবশ্যই কোন পদে বা কোন কাজের জন্য নিয়োগ করবে তা স্পষ্ট উল্লেখ করা; কর্মরত স্থানীয় কর্মীর সংখ্যা; কর্মরত বিদেশি কর্মীর সংখ্যা, কোম্পানির নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, কোম্পানির ঠিকানা ও অবস্থান; কোম্পানির যোগাযোগের তথ্যাদি; সেক্টর; কোম্পানি বা ব্যবসা শুরুর তারিখ; কোম্পানির বর্তমান অবস্থা; সকসো নম্বর তথ্য দিতে হবে।
জি-টু-জি প্লাসের নিয়োগের সময় বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম উইং ডিমান্ড এটেস্টেশন করার পূর্বে সরেজমিন নিয়োগকর্তা বা কোম্পানির উপযুক্ততা নির্ণয়ের জন্য যেসব বিষয়াদি যাচাই করেছিল ঠিক সে বিষয়গুলো মালয়েশিয়া সংশোধিত এমপ্লয়মেন্ট আইনের অধীনে এনেছে।
হাইকমিশনের শক্ত অবস্থানের কারণে জি-টু-জি প্লাসের সময় তুলনামূলক ভালো এবং শতভাগ কর্মসংস্থান হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মালয়েশিয়ার সংসদেও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। সিন্ডিকেট এবং অতিরিক্ত অভিবাসন খরচের ইস্যুর ভিড়ে ভালো কর্মসংস্থানের ইস্যুটি চাপা রয়ে গেছে।
উল্লিখিত বিষয়াদি ছাড়াও হাইকমিশন কর্মীর আবাসন; এমপ্লয়মেন্ট লেটার; কর্মঘণ্টা, ছুটি (সাপ্তাহিক, মেডিকেল লিভ, স্বদেশ ছুটি), ওভার টাইম সম্পর্কিত তথ্য, বেতন দেওয়ার পদ্ধতি (ক্যাশ/কর্মীর নিজস্ব ব্যাংক হিসাব নম্বরে), ট্রান্সপোর্টেশন তথা আবাসন থেকে কর্মস্থলে যাতায়াত, কর্মী বীমা, মেডিকেল বীমা, দুর্ঘটনা বীমা, কোম্পানির নিজ থেকে চিকিৎসা সুবিধা, খাবার, বিনোদন ইতয়াদি বিষয় যাচাই করেছিল।
এমন কি কোম্পানির পরিচালকের সাক্ষাৎ এবং লিখিত ঘোষণাও নিয়েছিল যেন বাংলাদেশি কর্মীরা ভালো থাকে। উপযুক্ততা না থাকায় অনেক কোম্পানির এটেস্টেশন করেনি এবং পদ্ধতি অনুসরণ না করায় মালয়েশিয়ার বিমান বন্দরে আগত কর্মীকে নিয়োগকর্তা নিজ খরচে ফেরত পাঠিয়ে এবং পুনরায় যথা নিয়মে মালয়েশিয়ায় আনয়ন করেছিল।
সে সময়ের লেবার কাউন্সিলর সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের কর্মীদের যৌক্তিক এবং নিরাপদ মাইগ্রেশন অর্থাৎ সঠিক কোম্পানিতে কাজ পাওয়া এবং ভালোভাবে থাকার বিষয়টি ছিল চ্যালেঞ্জের এবং অত্যাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছিল। ফলে অনেক চাপ ও বিরোধিতা এবং নেতিবাচক প্রপাগান্ডা সত্ত্বেও আমরা নিয়োগকর্তার ও কোম্পানির অবস্থা যাচাই না করে এটেস্টেশন করিনি। এতে দীর্ঘদিনের কাজ না পাওয়া, অমানবিক অবস্থার শিকার হওয়ার যে দুর্নাম ছিল সেখান থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব হয়েছে।
করোনার আগে মালয়েশিয়ায় আগমনে বিদেশি কর্মীদের উচ্চ অভিবাসন খরচ এবং কর্মীদের মানহীন আবাসনের কারণে আমেরিকা ও ইউরোপ মালয়েশিয়ায় উৎপাদিত পণ্য গ্রহণ না করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
আন্তর্জাতিকভাবে এ দুটিকে মানবপাচার এবং জবরদস্তিমূলক শ্রম অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ দুটি অভিযোগ মালয়েশিয়ার উন্নত দেশের স্বীকৃতি লাভের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা। এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য মালয়েশিয়া সরকার জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা এবং দেশীয় এনজিওদের সঙ্গে কাজ করছে।
এরই মধ্যে মালয়েশিয়া সরকার আইএলও কনভেনশনে সই করেছে। বর্তমান সরকার বিদেশি কর্মী নিয়োজন প্রক্রিয়া বেশি সহজ ও সংক্ষিপ্ত করার কাজ করছে।
সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, বিদেশি কর্মী রিক্রুটমেন্ট (বাছাই), এমপ্লয়মেন্ট (কর্মসংস্থান) এবং রিপাট্রিয়েশন (দেশে প্রত্যাবর্তন) ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকারের যৌক্তিক পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। উৎস দেশের সরকার, রিক্রুটিং এজেন্সি, মালয়েশিয়ান রিক্রুটিং এজেন্সি এবং নিয়োগকর্তার সহযোগিতায় দক্ষিণ-দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত দেশটিতে সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে।
Collected from protidinersangbad