পুলিশের চাকরিতে আগ্রহ কমছে মার্কিনিদের
যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের চাকরিতে আগ্রহ কমেছে নাগরিকদের। বড় বড় শহরে পুলিশের চাকরি নিতে মার্কিনিদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় অনেক শহরের পুলিশ প্রধান আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শূন্য পদগুলো পূরণের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
করোনা মহামারি ও ২০২০ সালে বিভিন্ন শহরে পুলিশ বিভাগে অস্থিরতার কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মী ইস্তফা নেওয়ায় পুলিশে জনশক্তি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। পুলিশ বিভাগ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করেও তেমন সাড়া পাচ্ছে না, অর্থাৎ আবেদন সংখ্যা কমছে। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পুলিশ প্রধানরা জনশক্তি বাড়াতে ফুটবল কোচদের মতো নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের পুরস্কৃত করার কৌশল নিতে শুরু করেছেন। ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টিতে পুলিশ অফিসাররা যেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে চাকরি নেবেন, সেদিন ‘সাইনিং ডে’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করার মাধ্যমে তাকে সম্মানিত করা হবে। কেন্টাকির লুইসভিলের পুলিশ বিভাগে চাকুরি গ্রহণে আগ্রহী বাইরের স্টেটের আবেদনকারীদের পরীক্ষা দেওয়ার সুবিধার জন্য তাদেরকে বিমানযোগে নিয়ে আসা, হোটেলে রাখা এবং পুলিশের গাড়িতে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের স্থানে নিয়ে আসার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
পশ্চিম উপকূলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোর অনেক শহরে পুলিশ বিভাগ অন্য বিভাগ থেকে অফিসারদের আকৃষ্ট করতে হাজার হাজার ডলারের বোনাস দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আর্থিক সুবিধাদি বরাবর পুলিশ বিভাগের অনুকূলে ছিল, যার ফলে চাকরি প্রার্থীদের জন্য যোগ্যতার কথা উল্লেখ করা হতো, তার চেয়ে অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীরা চাকরির জন্য আবেদন করত। কিন্তু এখন আর সে পরিস্থিতি নেই।
ম্যাডিসনের মন্টগোমারি কাউন্টির পুলিশ প্রধান মারকাস জোনস বলেন, ‘খেলার কৌশল স্পষ্টতই বদলে গেছে। বিভিন্ন বিভাগের ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের অনুসরণে আমরাও নিয়োগ কৌশলে পরিবর্তন এনেছি, যাতে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারি।’
আইন প্রয়োগ নীতি সংগঠন ‘পুলিশ এক্সিকিউটিভ রিসার্চ ফোরাম’ সম্প্রতি ওয়াশিংটনে এক কনফারেন্সের আয়োজন করে, যেখানে সমগ্র দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেন এবং তারা লোকজনকে পুলিশে নিয়োগ করতে আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বলেন, যে অপরাধ দমনে পুলিশ বিভাগে নতুন অফিসার নিয়োগে সমস্যার পাশাপাশি পুলিশের ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, যা সহসা কাটিয়ে উঠতে হলে নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
সিয়াটল পুলিশের প্রধান অ্যাড্রিয়ান ডিয়াজ বলেন, ‘আমি এমন একজন অফিসার চাই, যিনি কমিউনিটি আউটরিচ অফিসারের ভূমিকা পালন করবেন। সিয়াটলের কয়েকশ পুলিশ ২০২০ সালে চাকরি ছেড়েছে এবং এরপর আড়াই বছর কেটে গেলেও শূন্য পদ পূরণ করা সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে জনবলের ঘাটতির কারণে একটি পুলিশ স্টেশন কয়েক সপ্তাহের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হয়েছে। সিয়াটল পুলিশ এমনকি এখন পুলিশ অফিসার নিয়োগ করতে সিটির অন্য বিভাগে কর্মরত অফিসারদের পুলিশ বিভাগে আকৃষ্ট করতে মাথাপিছু ৩০ হাজার ডলার বোনাস প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। রিক্রুটদের ক্ষেত্রে সাইনিং বোনাস ঘোষণা করা হয়েছে সাড়ে সাত হাজার ডলার।’ সেখানকার নতুন পুলিশ অফিসার একাডেমি থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর বার্ষিক ৮৩ হাজার ডলার বেতন পাবেন এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পুলিশ অফিসারের প্রারম্ভিক বার্ষিক বেতন হবে ৯০ হাজার ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের ১৮৪টি পুলিশ বিভাগের ওপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২১ সালের পুলিশ অফিসারদের পদত্যাগ হার ৪৩ শতাংশ বেড়েছে, এ সময়ে অবসর গ্রহণের হার বেড়েছে ২৪ শতাংশ। কিন্তু নিয়োগের হার সেভাবে বাড়ায় বহু শহরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের ক্রিমিনাল ল রিফর্ম প্রজেক্টের পরিচালক ব্রেনডন বাসকি বলেছেন, ‘যেসব শহর নতুন পুলিশ অফিসার নিয়োগের চেষ্টা চালাচ্ছে সেসব স্থানে জননিরাপত্তার দিকটিকে পুলিশের সঙ্গে জড়িত করার বিষয় বিবেচনায় নেওয়া উচিত।’
Collected from samakal