বাংলাদেশের জন্য সাড়ে ৪০০ কোটি ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি অনুমোদনের বিষয়টি আগামী ৩০ জানুয়ারির বোর্ড সভায় বিবেচনার আশা করছেন আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা জানান।
বিবৃতির শুরুতেই গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের চিত্তাকর্ষক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য অভিনন্দন জানায় আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশের দারিদ্র্য নিরসনে অগ্রগতির পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য উন্নতি লাভ করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মূল্যস্ফীতিকে স্থিতিশীল রাখতে ও ঋণ-জিডিপি অনুপাত কম রাখতে দেশটির সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিগুলো পর্যাপ্ত ছিল।
প্রথমে করোনা মহামারি, তারপর ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের ধাক্কা বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও লেগেছে বলে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল।
বর্ধিত ক্রেডিট সুবিধা, বর্ধিত তহবিল সুবিধা এবং আইএমএফের নতুন রেজিলেন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবল ফ্যাসিলিটি বা আরএসএফের অধীনে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি স্টাফ লেভের চুক্তিতে পৌঁছানোর কথা জানায় আইএমএফ।
সংস্থাটি জানায়, আলোচনায় আমরা প্রোগ্রামটির মূল উপাদানগুলোর ওপর নজর দিয়েছি। এর মধ্যে কর রাজস্ব বাড়ানো এবং আরও দক্ষ আর্থিক খাত গড়ে তোলার পেছনে দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। বেসরকারি বিনিয়োগ এবং রফতানি বহুমুখীকরণের মতো পদক্ষেপসহ এসব ক্ষেত্রে সংস্কার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও স্থিতিশীল করে তুলবে। একইসঙ্গে অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদী, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে।
আইএমএফ আরও জানায়, আমরা জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছি। কারণ এটি দেশটির সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। আইএমএফ-এর আরএসএফের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের জলবায়ু বিনিয়োগের চাহিদাকে সমর্থনের জন্য সাশ্রয়ী ও দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন করা। পাশাপাশি জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে আমদানি-নির্ভর জলবায়ু বিনিয়োগ থেকে অর্থপ্রদানের ভারসাম্যের চাপ কমানো।
এর আগে, রোববার (১৫ জানুয়ারি) অর্থমন্ত্রীর আ হ ম মোস্তফা কামাল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ।
বাজেট সহায়তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থায়নে আইএমএফের ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করতে গত শনিবার ঢাকায় আসে আইএমএফের ডিএমডি অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। এই দলে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের আইএমএফ মিশনপ্রধান রাহুল আনন্দ ছাড়া আরও চার কর্মকর্তা রয়েছেন।
আগামী ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের পর্ষদে বাংলাদেশের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উঠবে। অনুমোদন হলে সংস্থাটি ৪২ মাসে সাত কিস্তিতে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বাংলাদেশকে। ঋণের প্রথম কিস্তির ৩৬ কোটি ডলার বাংলাদেশ পাবে আগামী মার্চে। পরের প্রতিটি কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখবে আইএমএফ।
আইএমএফের পরামর্শে সরকার এরই মধ্যে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, আইএমএফের শর্তের কারণে নয়, দর বাড়ানো হয়েছে বাড়তি ভর্তুকি দেওয়ার সক্ষমতা কমে আসার কারণে। জ্বালানির দর আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয়, রাজস্ব খাতে সংস্কার, ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংস্কারের পরামর্শ রয়েছে আইএমএফের।
গত বছরের ৯ নভেম্বর আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানায়। তবে সেটি ছিল কর্মকর্তা পর্যায়ের ঐকমত্য। তখন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, আইএমএফ তিন মাসের মধ্যে এ ঋণের আনুষ্ঠানিকতা চূড়ান্ত করবে। সাত কিস্তিতে এই ঋণ দেবে তারা। প্রথম কিস্তির ঋণ দেওয়া হবে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। আর সর্বশেষ কিস্তির ঋণ পাওয়া যাবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। আইএমএফের ঋণের সুদহার হবে বাজারদর অনুযায়ী, তাতে গড় সুদহার হবে ২ দশমিক ২ শতাংশ।
Collected From Rising bd.com