উত্তরবঙ্গের অন্যতম বিদ্যাপীঠ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) সেশনজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এক থেকে দেড় বছরের এই সেশনজটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ এবং ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অনার্স শেষ না হলেও স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে শেষ করার কথা বলা হলেও এর বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৮ সালে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরা এখনও চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে পড়ালেখা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকি ব্যাচগুলোর অবস্থাও প্রায় একই রকম।
এদিকে, স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি নানান খাতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদেরকে।
এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাজিন ইসলাম বলেন, পাসপোর্ট করতে গিয়ে নিজেকে ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিতে পারিনি। কারণ, আমার আইডি কার্ডের মেয়াদ শেষ। নিজেকে বেকার হিসেবে উপস্থাপন করতে হয়েছে। অথচ আমার পড়াশোনার আরও দেড় বছর বাকি। গত দুই মাস আগে আমি আইডি কার্ড রিনিউ করতে দেই, সেই ক্ষেত্রে আমাকে আগের মেয়াদের কার্ডই প্রদান করা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, জায়গা-জমির হিসাবে সব ক্ষেত্রে নিজেকে বেকার দেখাতে হচ্ছে।
রাজিন আরও বলেন, ছাত্র হিসেবে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যেত, সেগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমি আইডি কার্ডের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
সেশনজটের কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই হতাশায় ভুগছেন। শিক্ষার্থীদের একটা বিরাট অংশ মধ্যবিত্ত ও গরিব হওয়ার কারণে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের কাজে যুক্ত হচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক চাপসহ বিভিন্ন কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন তারা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পড়ালেখা শেষ করে দেশের সেবায় নিয়োজিত হতে চান।
বিশেষ করে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত শিক্ষার্থীরা অনেকটাই অসন্তোষ প্রকাশ করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি। তারা দীর্ঘসূত্রিতার কারণে পাসপোর্ট, ভিসা এবং ব্যক্তিগত জীবনে নানান সমস্যায় পড়ছেন। অধিক সময় ধরে একই সেমিস্টারে থাকার কারণে তাদের দৈনন্দিন ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি সেশনজট থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেওয়ার দাবি তাদের।
এ ব্যাপারে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক রাফিয়া আখতার বলেন, সেশনজটের প্রধাণ কারণ হলো বিভাগগুলোতে শিক্ষার্থী অনুপাতে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকা। যদিও আমাদের অনুষদে এ বছর আট জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরপরও আমাদের আরও শিক্ষক প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষক স্বল্পতা ছাড়াও পরীক্ষার রেজাল্ট প্রক্রিয়াকরণে দেরি হয়ে যাবার কারণেও অনেক সময় সেশনজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কোর্সে এক্সটার্নাল শিক্ষকরা পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। অনেক সময় তারাও ফলাফল দিতে দেরি করেন। এজন্যও কিছুটা সেশনজটে পড়ে শিক্ষার্থীরা।
ঘোষণা অনুযায়ী ছয় মাসের সেমিস্টার কেন চার মাসে শেষ করা যাচ্ছে না এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদতে ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে শেষ করা সম্ভবপর হচ্ছে না। কারণ, আমাদের নির্ধারিত কোর্স ক্রেডিট পরিপূর্ণভাবে শেষ না করে সেমিস্টার শেষ করে দিলে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছুই শিখতে পারবে না। তবে এ ক্ষেত্রে ২০২২ শিক্ষাবর্ষে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হতে যাচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসরণপূর্বক সেশনজট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা যাবে বলে আশা করি।
এ বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ফলাফল প্রক্রিয়াকরণে কোনো দেরি হয় না। বরং শিক্ষকরাই খাতা দেখতে দেরি করেন। এক্সাম কন্ট্রোলারে খাতা জমা হওয়ার পর অনেক শিক্ষক দুই-তিন মাসেও খাতা নিয়ে যান না। আবার খাতা নেওয়ার পর অনেকে অনেক দেরিতে জমা দেন।
দ্রুত ফালাফল তৈরিতে অটোমেশন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি কতদূর জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাবেক উপাচার্য মহোদয় অটোমেশন প্রক্রিয়ার যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলেন, সেটি এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সেল সম্প্রতি অটোমেশন প্রক্রিয়ার ব্যাপারটি দেখছে।
তিনি জানান, চলতি বছরেই সিএসই বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের রেজাল্ট পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর থেকেই সব বিভাগের এই প্রক্রিয়ায় ফলাফল দেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেশনজট কাটানোর জন্য বর্তমান প্রশাসন সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছে।
Collected From RTVonline