Facebook Youtube Twitter LinkedIn
...
এবার থাকবে না সিন্ডিকেট

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সরকারের উদ্যোগ বার বার হোঁচট খাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরেই সরকারের পক্ষ থেকে এ বাজার উন্মুক্ত করার জোর প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। দেশটির সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলোচনার পর সবকিছু চূড়ান্ত হলেও অজানা কারণে শেষ পর্যন্ত আটকে যায় সেই উদ্যোগ। এজন্য সংশ্লিষ্টদের অনেকেই দায়ী করেছেন রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সিন্ডিকেটকে।
যদিও সরকারের তরফ থেকে এবার বলা হচ্ছে, কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না, সব এজেন্সিই দেশটিতে মানবসম্পদ পাঠাতে পারবে। সেই লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। দেশটির (মালয়েশিয়া) সঙ্গে শিগগিরই চূড়ান্ত চুক্তি করবে সরকার। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের আশা, চলতি বছরের (২০২১ সাল) ডিসেম্বর অথবা নতুন বছরের (২০২২ সাল) শুরুর দিকে আবারও মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে বাংলাদেশ।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ মুহূর্তে মালয়েশিয়ায় কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে প্রায় আড়াই লাখের মতো কর্মীর চাহিদা রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, অভিবাসীকর্মী সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রক্রিয়াটি প্রায় চূড়ান্ত। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে। এবার আর সিন্ডিকেট নয়, ডাটাবেজ ভিত্তিতে কর্মী পাঠানো নিয়ে বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার সরকারের সঙ্গে চুক্তি করবে। এটি স্বাক্ষর হলেই আমরা কর্মী পাঠানো শুরু করব। আশা করছি, ডিসেম্বর না হলেও জানুয়ারির মধ্যে এটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
অন্যদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস বলেন, ‘সবকিছু প্রায় ফাইনাল (চূড়ান্ত) হয়ে আছে। কদিন আগেই বিষয়টি নিয়ে মিটিং (বৈঠক) হয়েছে। আমাদের মিশন চাচ্ছে এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) দ্রুত সই (স্বাক্ষর) করতে। এটা হয়ে যাবে। এমওইউ সই হয়ে গেলে আমরা আবার নতুন করে কর্মী পাঠানো শুরু করতে পারব।
‘এমওইউ হলে একটা দলিল থাকল। এরপর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নিতে পারব। এমওইউ না হলে যে আমাদের লোক যাবে না, তা নয়। কিন্তু একটা পেপার থাকলে, দলিল থাকলে ভালো। এক কথায় আইনি একটা বাধ্যবাধকতা থাকল।’
তবে কবে নাগাদ এ চুক্তি স্বাক্ষর হতে তা চূড়ান্ত হয়নি বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘তবে আমাদের মিশন চাচ্ছে খুব দ্রুত এটা করে ফেলতে।’
এদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার চেষ্টা ব্যাহত হওয়ার পেছনে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির কারসাজিকে দায়ি করেছেন কেউ কেউ। জানা গেছে, এই ১০ এজেন্সি অবৈধভাবে দেশটির শ্রমবাজার দখলের অপচেষ্টায় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এটি বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ কমিটির বৈঠকে ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করে দেয় দেশটি।
বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধের যুক্তি হিসেবে সে সময় মাহাথির উল্লেখ করেন, জনশক্তি রফতানিতে একতরফা ভেঙে দেওয়া এবং লোক পাঠানের খরচ কমাতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এখন শুধু ১০টি এজেন্সি বাংলাদেশের লোকজনকে মালয়েশিয়ায় পাঠাতে পারে। এটি এক ধরনের একচেটিয়া প্রক্রিয়া।
একচেটিয়া এ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া ভেঙে দেওয়া প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এ ব্যবসাকে বাংলাদেশের সব এজেন্টের জন্য খুলে দিতে চাই। এতে ব্যবসায় প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং জনশক্তি রফতানির খরচ কমবে।
পরে অবশ্য ঢাকার কূটনৈতিক তৎপরতায় দেশটি বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার খোলার আশ্বাস দেয়। এ নিয়ে ঢাকা-কুয়ালালামপুরের মধ্যে বেশ কয়েকবার মন্ত্রী ও সচিবপর্যায়ে সফর বিনিময় এবং জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত এ পথ আর খোলেনি।
জানা যায়, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে সব এজেন্সি বাংলাদেশ সরকার এ নীতিতে বহাল থাকলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় ওই সিন্ডিকেট। তারা ভেতরে ভেতরে মালয়েশিয়া সরকারকে এ বিষয়ে নমনীয় করে ফেলে। সিন্ডিকেটটি চাচ্ছে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর দায়িত্ব তাদের হাতেই থাকুক। তবে বাংলাদেশ সরকার কোনোভাবেই সিন্ডিকেটের হাতে এ দায়িত্ব তুলে দিতে চায় না।
২০১৯ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশিদের জন্য দেশটির শ্রমবাজার খুলে দেওয়া নিয়ে আশার আলো দেখা দেয়। তবে দেশটির ক্ষমতার পালাবদলে সে আলো হঠাৎ নিভে যায়। এরপর করোনাভাইরাসের কারণে ভাটা পড়ে যায় শ্রমবাজার খোলার ইস্যুটি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার শমবাজার খোলার বিষয়টি আবারো সামনে আসে। এ নিয়ে ঢাকা-কুয়ালালামপুরের মধ্যে ভাচ্যুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এ বিষয়ে জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুই বছর ধরে নিজেদের শ্রমবাজার বন্ধ রেখেছে মালয়েশিয়া। আমাদের বন্ধ ২০১৮ সাল থেকে।করোনা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। চলতি মাস (নভেম্বর) থেকে ওদের ফ্লাইট চালু হওয়ার কথা। আশা করি এবার শ্রমবাজারটি খুলবে।
‘ফ্লাইট চালু হলে পুরনোদের পাশাপাশি নতুনদের যাওয়ার বিষয়টিও সামনে আসবে। হয়তো ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারিতে একটা সিদ্ধান্ত হতে পারে। দেশটির (মালয়েশিয়া) সরকার জানিয়েছে, তাদের আড়াই লাখের মতো কর্মী এ মুহূর্তে প্রয়োজন। বাংলাদেশ থেকেই এসব কর্মী নেওয়ার টার্গেট তাদের।’
বারবার চেষ্টার পরও কেন মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা যাচ্ছে না্ত এমন প্রশ্নের জবাবে বায়রার সাবেক মহাসচিব বলেন, ‘রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর চাওয়া থাকে এ মার্কেট (বাজার) যেন খোলা থাকুক। মার্কেট খোলা থাকলে আমরা লাভবান হব। আমাদের দাবি, সব মার্কেট যেভাবে খোলা থাকে মালয়েশিয়ারটাও সেভাবে থাকুক। এ মার্কেট কেন আলাদা হবে? অন্য সব দেশ যেভাবে লোক পাঠায় আমাদের দেশ থেকেও সেভাবে যাবে। বাংলাদেশের জন্য কেন বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে?’
‘আমাদের সোজা কথা, নেপাল যে নিয়মে লোক পাঠায় বাংলাদেশও একই এমওইউ স্বাক্ষরের মাধ্যমে লোক পাঠাবে। যে যা-ই বলুক না কেন দুই সরকারের হাতেই সবকিছু। দেশ দুটির সরকার যদি অনড় থাকে তাহলে কারও সিন্ডিকেট করার সুযোগ থাকবে না।’
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার ৯২৭ জন, ২০১৯ সালে ৫৪৫ জন, ২০২০ সালে ১২৫ জন এবং চলতি বছর মাত্র ১৪ বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে গেছেন। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১০ লাখ ৫৭ হাজার ২১৩ বাংলাদেশি কর্মী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
Collected from bangladesherkhabor