Facebook Youtube Twitter LinkedIn
...
গার্মেন্টে কমেছে নারীশ্রমিক

করোনা-পরবর্তী সময়ে পোশাক খাতের শ্রমিকের কাজ করার হার ২০ শতাংশ বেড়েছে। তবে আশঙ্কাজনক হলো, দেশে যে নারীশ্রমিক একটা সময় ৮৫ শতাংশ ছিল, সেটি ধীরে ধীরে কমে ৬৮ শতাংশে নেমে এসেছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক আরএমজি প্রবৃদ্ধি : উপযুক্ত কর্মসংস্থান সম্পর্কে আমরা কী শিক্ষা পেয়েছি’ শীর্ষক আলোচনায় উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে এই আয়োজনে বিভিন্ন স্তরের শ্রমিক নেতা এবং মালিক সংগঠন ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, শ্রমিকের আয়ের তুলনায় ব্যয় সাড়ে ৯ শতাংশ বেড়েছে। ব্যয় সামলাতে তারা এখন আগের থেকে বেশি কাজ করছে। এতে ৮৪ শতাংশ কারখানায় অতিরিক্ত কাজের চাপের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পোশাক কারখানাগুলোতে গড়ে ৪০ জন করে শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে বলেও জানান গোলাম মোয়াজ্জেম।
নারীশ্রমিকের প্রতি যৌন হয়রানি কমলেও সাম্প্রতিক সময় শিশু শ্রমিকের সংখ্যা সাব-কন্ট্রাক্টের কারখানায় বেড়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় মূল প্রবন্ধে। সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭৪ দশমিক ৩ শতাংশ শ্রমিক করোনার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন মাত্র ২০ শতাংশ শ্রমিক। যাদের ওপর জরিপ করা হয় তারা কেউ বুস্টার ডোজ নেননি। ৫১টি পোশাক কারখানার ১২৪৪ জন শ্রমিকের ওপর এ জরিপ পরিচালিত হয়। যেখানে ৬০ শতাংশ নারী, আর ৪০ শতাংশ পুরুষ শ্রমিক অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, শ্রমিকরা টিকা নিতে গেলে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে, এত সময় ব্যয় করে তারা টিকা নিতে আগ্রহী হয় না। তাই করোনাকালে সরকার যেভাবে উদ্যোগে নিয়ে প্রথম ডোজ দিয়েছিল, সেটা চলমান রেখে দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানান কারখানার মালিকরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাকালে তৈরি পোশাক খাতে উচ্চ রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে ওই সময় গড়ে ১৮ দশমিক ১ শতাংশ শ্রমিককে জোর করে কাজ করানো হয়েছে। যেখানে পুরুষ শ্রমিকদের সংখ্যা বেশি ছিল।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ৪২ শতাংশ কারখানা কোনো নিয়মের মধ্যে নেই। ৪৫ শতাংশ কারখানা ভাড়ায় চলে। ২৫ শতাংশ কারখানার সার্টিফিকেট নেই। জরিপের তথ্য বলছে, প্রায় ৩০ শতাংশ পোশাক কারখানাকে কলকারখানা পরিদর্শন বিভাগের পরিদর্শকদের বাড়তি অর্থ ঘুষ হিসাবে দিতে হয়েছে, যা অবৈধ।
অনেক কারখানায় শ্রমিকরা যথাযথ আইনি অধিকার পায় না উল্লেখ করে মোয়াজ্জেম জানান, ব্র্যান্ড বায়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর লেবার রাইট ইস্যুতে মনিটরিং আগের তুলনায় কমেছে। এর বিপরীতে সাম্প্রতিক সময় পোশাক কারখানাগুলোতে ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলোর অর্ডার বেড়েছে।
নিত্যপণ্যের বেড়ে যাওয়া দামের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা এখন বেশি ওভারটাইম করছেন বলে ওই গবেষণায় উঠে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ‘বেঁচে থাকার মতো ব্যয় নির্বাহে’ নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।
মাতৃত্বকালীন ছুটিতে বৈষম্যের অভিযোগ করে শ্রমিকরা জানান, সরকারি অফিসে মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস। এছাড়া কাগজে কলমে মাতৃত্বকালীন ছুটির কথা থাকলেও তা বেশিরভাগ শ্রমিক পান না। অনেকক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটি নয়, চাকরি ছেড়ে দিতে হয়।
নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. হাতেম বলেন, আমরা আসলে সমস্যাগুলো আগে দেখি যাতে সমাধানটা বের করা যায়। সে কারণে সমস্যাগুলোই সবার সামনে আগে আসে। ট্রেড ইউনিয়নে শ্রমিকরা আগ্রহী নন বলেও দাবি করেন তিনি।
Collected from bangladesherkhabor