Facebook Youtube Twitter LinkedIn
...
২০ বছর চাকরি করে বেকার হচ্ছেন তারা

শিক্ষা-প্রশাসনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর এবং সেসব দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদ এখনো রাজস্ব খাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) অধীনে সরাসরি অথবা শিক্ষা ক্যাডার থেকে প্রেষণে পদায়নের মাধ্যমে এসব পদের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
কয়েক দফায় সময় বাড়ানোর পর ‘সেসিপ’ আগামী ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই প্রোগ্রামে কর্মরত জনবলের জন্য নতুন কোনো প্রকল্প নেই, পদগুলো জনবলসহ রাজস্ব খাতে হস্তান্তরিতও হয়নি। ফলে আগামী জানুয়ারিতে বন্ধ হয়ে যাবে শিক্ষার অনেক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। ২০ বছর পর চাকরি হারাতে যাচ্ছেন সেসিপে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত ১ হাজার ১৮৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী। 
সূত্র জানায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর সরকারের ‘এ’ গ্রেডের দপ্তর হলেও তাদের ‘ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট উইং’ রাজস্ব খাতভুক্ত নয়। এই অধিদপ্তরের পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালকসহ ১৫টি পদ ‘সেসিপ’-এর মাধ্যমে চলছে। কিন্তু সেটা জানুয়ারিতে বন্ধ হয়ে যাবে। মাউশি অধিদপ্তরের ৯টি আঞ্চলিক শিক্ষা কার্যালয়ের পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালকসহ ১৪৭টি পদেও সেসিপের জনবল রয়েছে, যারা শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির কাজ করেন। ডিসেম্বরে সেসিপ বন্ধ হলে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও প্রদানও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
জানতে চাইলে মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় সেসিপের মোট পদের মধ্যে ৮০১টি পদ সৃজনে সম্মতি দিয়েছে। কিন্তু জনবল হস্তান্তরের অনুমতি দেয়নি। সৃজনকৃত পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। এজন্য আমরা ভালো বিকল্প পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছি।’ 
জানা যায়, সেসিপের অধীনে মাউশি অধিদপ্তরের এইচআরএম ইউনিটে ৯ জন, সেক্টর প্রোগ্রাম সাপোর্ট ইউনিটে (এসপিএসইউ) ৪৪ জন, পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন উইংয়ের পিপিপি সেলে ৪ জন, অ্যাকসেস অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স ইউনিটে ১৫ জন, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ইউনিটে ১০ জন, প্রশিক্ষণ উইংয়ে ৯ জন, সারা দেশের জেলা শিক্ষা অফিসে ৪৬১ জন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে ৪৮৮ জন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট উইংয়ে ২৫ জন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটে ১৭ জন, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে ২৬ জন, মাউশির ইএমআইএস সেলে ১৩ জন, ২৫টি থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে ২০০ জন, মাউশির মাধ্যমিক উইংয়ে ৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি করছেন।
সেসিপের ১৪৮৭ জনবলের মধ্যে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত ১১৮৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। ডিসেম্বরের পর তাদের চাকরি আর থাকবে না। প্রেষণে পদায়িত ১২৬ জনের চাকরি হারানোর শঙ্কা নেই। কর্মসূচি শেষ হলে তারা আগের দপ্তরে ফিরে যাবেন। এর বাইরে থাকা পদগুলোর এখন আর প্রয়োজনীয়তা নেই।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সেসিপের অধীনে মাঠপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পদ উপজেলা ও থানা একাডেমিক সুপারভাইজার। প্রত্যেক উপজেলায়ই এ পদ রয়েছে। আগামী বছরের নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে তাদের প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। অথচ আগামী বছর তাদের চাকরি আর থাকছে না। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনার ২৫টি থানা শিক্ষা অফিসের পুরোটাই চলে সেসিপের অধীনে। কিন্তু আগামী বছর থেকে মেট্রোপলিটান শহরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের লেখাপড়া মনিটরিংয়ের জন্য কোনো লোকবল থাকবে না।
সেসিপ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম তথা কর্মসূচি। এর পদ ও জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। এর অংশ হিসেবে সেসিপের ১৪৩৯টি (২০১৯-এর আগের পদসংখ্যা) পদের বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিভিন্ন পরিপত্রের শর্ত শিথিল করে জনবলসহ রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১৯ সালের ২৬ মে তাতে অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সেসিপে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত ১১৮৭ জনবলসহ পদ রাজস্ব খাতে হস্তান্তরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি চাওয়া হয়। তারা ৩৮৬টি পদ বাদ দিয়ে এ বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি ৮০১টি পদ সৃজনে রাজি হয়। একই সঙ্গে জনবল রাজস্ব খাতে হস্তান্তরের সুযোগ নেই বলে জানায়। শিক্ষা ক্যাডার থেকে প্রেষণে পদায়িত সেসিপের গুরুত্বপূর্ণ ১২৬টি পদ রাজস্ব খাতে স্থানান্তরে আরেকটি চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।  
সেসিপের অধীনে কর্মরত পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মনিরুজ্জামান জানান, ‘আমি ২০০২ সালে নিয়োগ পেয়েছি। ২০ বছর ধরে চাকরি করছি। অনেক আগেই চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে। এখন যদি চাকরি চলে যায় আমি কীভাবে চলব?’
সেসিপ কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শামীমা ফেরদৌসি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের প্রায় সবার ১৫ থেকে ২০ বছর মাঠপর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। এখন আমাদের বাদ দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। অথচ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের একাধিক প্রকল্পের জনবলসহ পদ রাজস্ব খাতে হস্তান্তরের উদাহরণ রয়েছে।’
সেসিপ কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আবদুল হাকিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে চাকরি করে আসছি। আর এক্সটেনশন নয়, এবার আমরা রাজস্ব খাতে যেতে চাই। ৮০১ পদ নয়, ১১৮৭ পদই জনবলসহ রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন। আমরা আর কোনো অজুহাত মানব না।’
Collected from prothomalo