দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের সুবিধাবঞ্চিত নারী ও মেধাবী প্রতিবন্ধীদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা সম্ভব। এতে করে নানা গণ্ডির মধ্যে থেকেও তারা নিজেদের স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে।
বুধবার (৩ আগস্ট) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘উইম্যান্স স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস প্রোগ্রাম’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন বিআইজিডি’র গবেষকরা।
কর্মশালায় ফ্রিল্যান্সিং খাতে দক্ষ ও সফল বেশ কয়েকজন নারী এবং প্রতিবন্ধী অংশ নেন। এসময় তারা তাদের অভিজ্ঞতা ও সফলতার কথা জানান।
গবেষকরা বলেন, সুবিধাবঞ্চিত নারীদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে তা নারীদের কর্মসংস্থান, আয় এবং ফ্রিল্যান্সিং কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে অনলাইন মার্কেট প্লেসে তীব্র প্রতিযোগিতার ফলে আত্মবিশ্বাস হারানো, এবং পরিবারের দায়িত্ব থাকায় পোর্টফোলিও তৈরি ও শেখায় নারীরা সীমাবদ্ধতার ঘেরাটোপে পড়তে পারেন। এ কারণে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সাফল্য বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
বাংলাদেশের নারী ফ্রিল্যান্সারদের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই ইকোসিস্টেম কীভাবে তৈরি ও বিকাশ করা যায়, কর্মশালায় এসব বিষয়ে নিয়ে আলোচনা হয়।
এছাড়া ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ঘিরে একটি গবেষণা করে কোডারস ট্রাস্ট বাংলাদেশ (সিটিবিডি)। গবেষণায় ১৮-৩৫ বছর বয়সী নারীদের ওপর ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রভাব কতটুকু তা নির্ণয়ের চেষ্টা করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রশিক্ষণ নেননি, তাদের তুলনায় প্রশিক্ষণ নেওয়া নারীদের কর্মসংস্থানের হার ২৮ শতাংশ বেশি। ফ্রিল্যান্সিং এবং নন-ফ্রিল্যান্সিং উৎস থেকে তাদের মাসিক আয়ও ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। পারিবারিক সহায়তার অভাব, ডিজিটাল ডিভাইস পেতে বাধা, সংযোগ সংক্রান্ত জটিলতা, ভাষার প্রতিবন্ধকতা এবং সময়ের অভাবের মতো সীমাবদ্ধতা অনেক নারীকে প্রশিক্ষণ থেকে ঝরে যেতে বাধ্য করেছে।
কর্মশালায় বিআইজিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলেন, তরুণদের বেকারত্ব বাংলাদেশের জন্য একটা টাইম বোমা। আমাদের এ বিষয়টি নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।
সিটিবিডি’র পরিচালক আতাউল গনি ওসমানী বলেন, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বিষয়ে পড়াশোনায় বাংলাদেশের নারীদের আগ্রহ কম। এজন্য নারীদের আগ্রহ বাড়ানো প্রয়োজন। বাংলাদেশে গার্মেন্টস হচ্ছে, শ্রমিক বাড়ছে। তেমনই দক্ষ ফ্রিল্যান্সার বাড়ানো দরকার।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য বিভিন্ন নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হচ্ছেন। এরপর ভালো প্রশিক্ষণের অভাবে আয় করতেও পারছেন না পাশাপাশি নেতিবাচক ধারণা হচ্ছে। এজন্য যারা ভর্তি হচ্ছেন, তাদের সচেতনতা বেশি প্রয়োজন।
ফ্রিল্যান্সার অ্যাসোসিয়েশনের সহকারী ব্যবস্থাপক ডা. তানজিমা বলেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য ভালো মানের কম্পিউটার প্রয়োজন। আমরা বারবার উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি এ বিষয়ে জোর দিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য হয়তো ১০-১২ ধরনের কাজের কথা জানি এবং বলি। কিন্তু হাজারটা কাজ আছে এই খাতে। সেখানে সব ধরনের দক্ষতাকে কাজে লাগানো যায়। সব দিকেই আমাদের প্রত্যেককেই যার যার দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে কথা বলতে গেলে আমাদের নিজেদের উদ্যোগ ও কাজ দেখাতে হয়। সরকারের অংশগ্রহণ দেখাতে হয়।
ফ্রিল্যান্সার অ্যাসোসিয়েশনের সহকারী ব্যবস্থাপক আরও বলেন, আমাদের যে পরিমাণ ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে, যে পরিমাণ অর্থনীতি হচ্ছে, এটা নিয়ে কিন্তু রাষ্ট্রীয় তথ্য ও এবং স্বীকৃতির প্রয়োজন। এজন্য গভমেন্ট রেজিস্ট্রেশন কার্ডের প্রয়োজন আছে। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আলাদা পাসপোর্ট আসছে, তাদের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকে স্পেশাল অ্যাকাউন্ট সিস্টেম আছে।
সফল নারী ফ্রিল্যান্সার আজিজুন্নাহার তাসনিয়া বলেন, অনার্স পাসের পর আমার বিয়ে হলো, সন্তানও হলো। আমি উত্তরাতে ফ্যাশন ডিজাইনের একটা চাকরি নেই। কিন্তু চাকরি করে সংসার করা খুবই কষ্টসাধ্য। এজন্য পরিবার সামলানোর পাশাপাশি আমি কিছু একটা করার কথা ভাবি।
তিনি বলেন, আমার কোনোভাবেই বিশ্বাস হচ্ছিল না ফ্রিল্যান্সিং করে এতো আয় সম্ভব। আমাদের ক্লাসে দেখানো হতো কীভাবে টাকা আয় হয়। তবে আমি চেষ্টা করেছি। সব সময় আমার চেষ্টার কারণে উৎসাহও পেয়েছি।
দক্ষ ফ্রিল্যান্সার ও প্রশিক্ষক সোম্য সুপ্রিয়া বলেন, অনেক ফ্রিল্যান্সার দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তার কাজকে অনেক কম মূল্যে ডেলিভারি দেন। কম মূল্যে নিজের দক্ষতাকে বিক্রি করেন। এটা খুবই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
অনুষ্ঠানে বিআইজিডি’র রিসার্চ ফেলো লপিতা হক বলেন, মাদরাসায় যারা পড়াশোনা করেন, তাদের খবর কেউ জানে না। তাদেরও তো প্রশিক্ষণ ও অংশগ্রহণ বাড়ানোর প্রয়োজন। মাদরাসায় পড়ুয়া অনেক নারী আছেন, তারা পড়াশোনার পর বিয়ে ও সংসারের দিকে চলে যান। কিন্তু তাদের মেধাগুলোকে কাজে লাগাতে হলে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
Collected from
jagonews24