বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিবন্ধন সনদধারীদের গণবিজ্ঞপ্তিতে নয়, প্যানেলভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে অনশন পালন করছেন প্যানেলপ্রত্যাশীরা। ‘প্যানেল প্রত্যাশী নিবন্ধিত শিক্ষক সংগঠন’ নামের সংগঠনের ব্যানারে টানা চার মাস ধরে গণঅনশন কর্মসূচি চালাচ্ছেন তারা। তাদের দাবি, এখনও কর্তৃপক্ষের কোনও আশ্বাস মেলেনি। তবে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান বলছেন, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনশন চালানোর ঘোষণা দেন শিক্ষক প্রত্যাশী নেতারা। সে অনুযায়ী সোমবার (৩ অক্টোবর) কর্মসূচির ১২১ দিন পার করছেন তারা।
নিয়ম অনুযায়ী, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ হয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) অধীনে পরীক্ষা দিয়ে। উত্তীর্ণদের নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়।
আন্দোলনকারী চাকরিপ্রত্যাশীরা জানান, ২০০৫ সাল থেকে মোট ১৬টি ব্যাচে পরীক্ষায় পাস করে নিবন্ধন সনদ পেলেও নিয়োগ পাচ্ছেন না। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ ছাড়াও গত চার মাস রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের চাওয়া, প্রধানমন্ত্রী এই হাজারো নিয়োগপ্রত্যাশীর আকুতি জানুক। তাদের দাবি পূরণে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে বলে জানান তারা।
আন্দোলনকারীদের দাবি ৩টি হচ্ছে- আবেদনে নিবন্ধনধারী চাকরিপ্রত্যাশীদের কোটাবিহীন প্যানেলে নিয়োগ দেওয়া, স্ব–স্ব নীতিমালায় নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন পরীক্ষা স্থগিত রাখা এবং ইনডেক্সধারীদের (নিয়োগপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পরিচিতি নম্বর) প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত না করে আলাদাভাবে বদলির ব্যবস্থা করতে হবে।
প্যানেলপ্রত্যাশী নিবন্ধিত শিক্ষক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহনাজ পারভীন জনি রাইজিংবিডিকে বলেন, এনটিআরসিএ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতার আধুনিক সময়োপযোগী একটি শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতিকে জটিল থেকে জটিলতর করে তুলেছে। একটা অংশ আদালতে গেলে আটকে যাচ্ছে আরেকটা অংশের নিয়োগ। এজন্য প্যানেলভিত্তিক নিয়োগের বিকল্প নেই। এনটিআরসিএ’র দ্বিমুখী নীতির কারণে কেউ ৪০ নম্বর পেয়ে চাকরি করছেন, আবার কেউ ব্লক পোস্ট পেয়ে চাকরিতে যোগদান করছেন। এমনকি অবৈধ সনদ দিয়েও চাকরি করছেন। অথচ বৈধ সনদধারীরা অযোগ্য হচ্ছেন। নিয়োগ সুপারিশের প্রলোভন দেখিয়ে এনটিআরসিএ হাজারো আবেদনের বিপরীতে নিয়োগপ্রত্যাশীদের সর্বস্বান্ত করে তুলছে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জিএম ইয়াছিন জানান, গত ৫ জুন থেকে তারা এই কর্মসূচি পালন করে আসছেন। নিজেদের দাবি তুলে ধরে তারা প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদনও করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনও মহল থেকে সাড়া পাননি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
নিবন্ধনধারীরা জানান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিবন্ধনের জন্য ২০০৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৬ বার পরীক্ষা নিয়েছে এনটিআরসিএ। কিন্তু এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিবন্ধনের জন্য সনদপ্রাপ্ত সকল প্রার্থীদের নিয়োগ হয়নি। বরং প্রতিবছর নতুন করে নিবন্ধন পরীক্ষা নেওয়ায় নিবন্ধনধারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করেই যাচ্ছে এনটিআরসিএ। তাই নতুন কোনও নিবন্ধন পরীক্ষা না নিয়ে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্যানেলভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে তাদের গণঅবস্থান।
প্যানেলপ্রত্যাশীদের দাবির বিষয়ে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মো. এনামুল কাদের খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ইনডেক্সধারীদের আলাদা প্রক্রিয়ায় নিয়োগের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সায় আছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি। শিক্ষামন্ত্রীর সাথেও সভা করেছি। শিক্ষক নিয়োগের জন্য শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বর্তমানে তা যাচাই ও সংশোধন শুরু হচ্ছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেলে আলাদা প্রক্রিয়ায় ইনডেক্সধারীদের নিয়োগ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আলাদাভাবে নিবন্ধিত প্রার্থী ও ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানোর সক্ষমতা টেলিটকের আছে কিনা জানতে আমরা দফায় দফায় সভা করছি। কারণ, শিক্ষক নিয়োগের আবেদন গ্রহণ করে কারিগরি সহায়তা দেওয়া প্রতিষ্ঠান টেলিটক। সব ঠিক থাকলে আগামী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিষয়টি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।
Collected from risingbd