তৃতীয় শ্রেণির চাকরির পদ বেশ, আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাও হাড্ডাহাড্ডি। তবে পরিকল্পনা করে পড়াশোনা করলে নিয়োগ পরীক্ষায় এগিয়ে থাকা সহজ হবে। পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নগুলো সাধারণত মাধ্যমিক পর্যায়ের বই থেকেই আসে।
পরীক্ষা পদ্ধতি
পরীক্ষা সাধারণত দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথমত, লিখিত পরীক্ষা, সর্বশেষ ভাইভা। লিখিত পরীক্ষা সাধারণত ৭০ নম্বরের হয়। এককথায় উত্তর দিতে হয়। আর ভাইভা হয় ৩০ নম্বরের ওপর। তবে প্রার্থী বেশি হলে তিন ধাপে পরীক্ষা হয়। প্রথমত, এমসিকিউ পদ্ধতিতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিয়ে থাকে তারপর লিখিত পরীক্ষা আর সর্বশেষ ভাইভা হয়। আর কিছু কিছু পদে লিখিত পরীক্ষার পর (কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক প্রভৃতি) ব্যাবহারিক পরীক্ষা নিয়ে থাকে।
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি
বাংলা : বাংলা বিষয়ের দুটি অংশ—সাহিত্য আর ব্যাকরণ। প্রস্তুতির শুরুতে বিগত বিসিএস, নন-ক্যাডারসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান ব্যাখ্যাসহ পড়বেন। বিগত সালের প্রশ্ন থেকেই অনেক প্রশ্ন কমন পাওয়া যায়। তাই বিগত সালের প্রশ্নে কোনো রকম হেলাফেলা করা যাবে না। তারপর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা বইয়ের লেখক পরিচিতি পড়বেন। টেক্সট বুক থেকে পড়তে না পারলেও চাকরির প্রস্তুতির গাইড বই থেকে কয়েকবার রিডিং পড়ে বিভিন্ন লেখক সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন লেখক পরিচিতি মুখস্থ না করলেও হবে। তারপর প্রাচীন যুগের চর্যাপদ, মধ্যযুগ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, শামসুর রাহমান, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে বিস্তারিত পড়বেন। প্রয়োজনে এই কয়জন লেখক, সাহিত্যিকের রচনাগুলো ছন্দ বা কৌশল বানিয়ে মনে রাখবেন। এখান থেকে প্রতিবছরই একাধিক প্রশ্ন আসে। তারপর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কয়েকটা গল্প, উপন্যাস ও নাটক। বিভিন্ন সাহিত্যিকের ছদ্মনাম ও উপাধি পড়লে আশা করা যায় বাংলা সাহিত্য নিয়ে আর টেনশন করতে হবে না।
বাংলায় ব্যাকরণ অংশ থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। তাই সাহিত্যের চেয়ে ব্যাকরণ অংশে বেশি জোর দিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ টপিকস হলো, এককথায় প্রকাশ, বাক্য সংকোচন, বাগধারা, কারক বিভক্তি, সন্ধি, বানান শুদ্ধি, সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, শব্দের প্রকারভেদ (কোনটা কোন দেশি শব্দ), সাধু ও চলিত রূপ, সমাস, পদ প্রকরণ, ক্রিয়ার কাল, পরিভাষা, উপসর্গ প্রভৃতি। এ ছাড়া আরো ভালো প্রস্তুতির জন্য ব্যাকরণের অন্য টপিকসগুলো থেকেও অনুশীলন করতে পারেন। ব্যাকরণের প্রস্তুতি নিতে হবে মুনীর চৌধুরী রচিত নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বই থেকে। আর অনুশীলনের জন্য বাজারের ভালো মানের কোনো একটা প্রকাশনীর বই পড়া যেতে পারে। বিশেষ করে প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে দেওয়া বিগত সালের প্রশ্নসমূহ। ভালো মানের একটা বই যথেষ্ট। একাধিক বই কেনার প্রয়োজন নেই।
ইংরেজি : ইংরেজির বিষয়ের দুটি অংশ। গ্রামার আর লিটারেচার। আর এখানেও লিটারেচার অংশ থেকে খুবই কম প্রশ্ন এসে থাকে। বিগত সালের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে লিটারেচার অংশ থেকে মাত্র দু-একটা প্রশ্ন এসেছে। আবার কোনো কোনো পরীক্ষায় একটা প্রশ্নও আসেনি। তবু সেরা প্রস্তুতির জন্য এগুলোও পড়তে পারেন। বিশেষ করে বিগত সালে আসা বিসিএস, নন-ক্যাডার, প্রাইমারিসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আগত প্রশ্নসমূহ। গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে গ্রামার অংশে। বিগত সালের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে কিছু টপিক থেকে অধিক প্রশ্ন আসে, যেমন—(1) Parts of Speech, (2) Identification of Parts of Speech, (3) Interchange Parts of speech. (4) Phrase & Clause, (5) Gerund & Participle, (6) Number & Gender, (7) Preposition ,(8) Right form or Verb, (9) Voice & Narration, (10) Subject-Verb Agreement, (12) Conditional Sentence ,(13) Synonym, Antonym (14) Spelling প্রভৃতি।
ইংরেজি অংশের প্রস্তুতির জন্য বাজারের ভালো মানের কোনো একটা প্রকাশনীর বই পড়লেই যথেষ্ট। একাধিক বই কেনার প্রয়োজন নেই। একাধিক বই পড়লে অনেকের হিতে বিপরীত হয়। বেশি পড়তে গিয়ে সব গুলিয়ে ফেলে। তবে বই নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমন বই নির্বাচন করতে হবে, যেখানে বিগত সালের প্রশ্ন বেশি দেওয়া আছে। বইটা যথাসম্ভব নির্ভুল। একটা বই বারবার পড়লে সেই বইয়ের ছবি আমাদের হৃদয়ে গেঁথে যায়। তাই একটা বিষয়ের জন্য অনেকগুলো বই না পড়ে দু-একটা বই বেশি বেশি পড়ুন। অল্প পড়ুন, কিন্তু গুছিয়ে পড়ুন।
গণিত : বিগত সালের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে গণিতেও কিছু নির্দিষ্ট টপিকস থেকে প্রতিবছরই প্রশ্ন এসে থাকে। যাদের গণিতের দক্ষতা ভালো তারা এগিয়ে থাকে। তাই গণিতের প্রস্তুতি নিতে হবে জোরালোভাবে। সাধারণত গণিত সমাধান করে দেখিয়ে দিতে হয়। তাই বিগত সালের প্রশ্নগুলো বুঝে বুঝে অনুশীলন করতে হবে। শুধু বিগত সালের প্রশ্ন সমাধান করলেও প্রস্তুতি অনেকটা হয়ে যাবে। তবে যাদের গণিতের বেসিক দুর্বল তাদের একটু বাড়তি যত্ন নিতে হবে। গণিতকে তিনটি অংশে ভাগ করা যায়। পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতি। তবে গণিতের প্রস্তুতির জন্য পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির গণিত বই থেকে পাটিগণিত করবেন। বুঝে বুঝে করবেন। তাড়াহুড়ার কিছু নেই। এখনো পরীক্ষার যতটুকু সময় আছে। নিয়মিত বুঝে বুঝে অনুশীলন করে গণিতে ভালো করা সম্ভব। পাটিগণিতের যেসব টপিকস থেকে প্রশ্ন আসে তা হলো: মুনাফা, লাভ-ক্ষতি, শতকরা, অনুপাত, মৌলিক ও বাস্তব সংখ্যা, ঐকিক নিয়ম, বয়স, ভগ্নাংশ, গড়, সময় ও দূরত্ব, লসাগু ও গসাগু, নৌকা ও স্রোতের বেগ প্রভৃতি। বীজগণিতের প্রস্তুতির জন্য যেসব টপিকস বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তা হলো: বীজগাণিতিক রাশি, উৎপাদক বিশ্লেষণ, মান নির্ণয়, এক চলক ও দ্বিচলকবিশিষ্ট সমীকরণ, সূচক, লগারিদম ও ধারা প্রভৃতি। জ্যামিতির যেসব টপিকস থেকে প্রশ্ন আসে তা হলো : রেখা, কোণ ও ত্রিভুজ, পিথাগোরাসের উপপাদ্য, বৃত্ত, পরিমিতিতে বর্গক্ষেত্র, আয়তক্ষেত্র ও সমকোণী ত্রিভুজসংক্রান্ত সমস্যা প্রভৃতি। গণিতে নিয়মিত অনুশীলনই সফলতা আনতে পারে।
সাধারণ জ্ঞান : সাধারণ জ্ঞানে প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় আসা বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালো করে পড়তে হবে। গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো হলো—বাংলার ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, সংবিধান, বাংলাদেশ পরিচিতি, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, বাংলাদেশের সংস্কৃতি, বাংলাদেশের যোগাযোগব্যবস্থা, বাংলাদেশের সম্পদ, বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, খেলাধুলা প্রভৃতি বিষয় গুরুত্ব্বপূর্ণ। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা, রাজধানী ও মুদ্রা, ভৌগোলিক বৈচিত্র্য (পর্বত, সাগর, প্রণালি, খাল), গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন, চুক্তি, খেলাধুলা প্রভৃতি। সাধারণ জ্ঞানে ভালো প্রস্তুতির জন্য জাতীয় দৈনিক পত্রিকার অর্থনৈতিক পাতা, আন্তর্জাতিক পাতা, উপসম্পাদকীয় পাতা নিয়মিত পড়া যেতে পারে। এ ছাড়া বাজারে প্রচলিত সাধারণ জ্ঞানের ভালো মানের একটি গাইড বই পড়া যেতে পারে।
তৃতীয় শ্রেণির পদের পরীক্ষা হয় সাধারণত দুই ধাপে—লিখিত ও ভাইভা। লিখিত পরীক্ষায় ৭০ নম্বর আর ভাইভায় ৩০
Collected from Kalerkantho