পাবলিক ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বছরে দুটি সেমিস্টার শেষ করে। সময়ের সামান্য হেরফের হলেও সেশন শুরুর পর থেকে গড়ে বছরে দুটি সেমিস্টার শেষ হচ্ছিল। তবে চলতি বছর এখন পর্যন্ত একটি সেমিস্টারও শেষ হয়নি। বছরের শেষ প্রান্তিকে এসেও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। ফলে সেমিস্টার জটের মধ্যে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। আর এ কারণেই প্রশ্ন উঠেছে—এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম কবে শুরু হবে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে যান গত ১ জুলাইয়ের পর থেকে। ওই সময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয় তখন বছরের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু করতে যাচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষাসহ পুরো শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি প্রশাসনিক ও দাফতরিক কাজ, সভা, সেমিনার এবং সিম্পোজিয়ামও বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে, শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আন্দোলন চলাকালেই কোটা পদ্ধতি নিয়ে আন্দোলন শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এক দফার আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় নিতে হয়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের পদত্যাগে বাধ্য করেন আন্দোলন সমন্বয়কারী শিক্ষার্থীরা। এতে উপাচার্য, উপ-উপাচার্যহীন হয়ে পড়ে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যদিকে, এখনও শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের অংশ হিসেবেই মাঠে রয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতার জন্য। ফলে সারা দেশের পাবলিক ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে। একইসঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্টরা বলতে পারছেন না কবে নাগাদ পাবলিক ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হবে। এই পরিস্থিতিতে সেমিস্টার পরীক্ষা নিয়ে ভাবার সময়ই আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিগত সময় সরকার পরিবর্তন হলেও উপাচার্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আগের উপাচার্য অন্তত এক মাসের মতো সময় পেতেন অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালু রাখার। এবার তা হয়নি। কোনও সরকার পরিবর্তন হলে সরকারের পরামর্শে রাষ্ট্রপতি উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে থাকেন। একটি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এখন এই সরকার যখন উপাচার্য নিয়োগ দেবেন তখন অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন তারা। এছাড়া এখনও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি হয়নি।
শিক্ষকরা জানান, আন্দোলনে অংশ নেওয়া এবং অংশ না নেওয়া শিক্ষার্থীরা একটি মানসিক সংকটে পড়েছেন। যারা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের একটি বড় অংশ ট্রমার মধ্যে রয়েছে। ফলে এসব শিক্ষার্থীর প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করানো দরকার। আগামী দুয়েক মাসের মধ্যে তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা কঠিন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। সরকার যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য নিয়োগ করবে তখন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। এ বিষয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলা বিভাগের অষ্টম সেমিস্টারের একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও বাকি সব পরীক্ষাই বন্ধ রয়েছে। আরবি বিভাগের অষ্টম সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল গত ২ জুলাই থেকে। কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডার পঞ্চম সেমিস্টারের পরীক্ষা গত ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। আন্দোলন কর্মসূচির কারণে সব বন্ধ হয়ে গেছে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বছরের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরুই করতে পারেনি। একইভাবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও সেমিস্টার পরীক্ষা নির্ধারিত সময় অনুষ্ঠিত হয়নি। এদিকে, পরবর্তী সেমিস্টার পরীক্ষার জন্য এখন পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। কবে নাগাদ শুরু হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘আজ শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার চেষ্টা করছি। আমাদের সব অংশীজনদের নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আজ আবাসিক হল পর্বের কাজ শেষ করলাম। এরপর সব বিভাগের কাজ শুরু করবো। হল ও বিভাগের কাজ শেষ করে হল ও বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। একটি ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেটি করতে হবে। প্রথমে যে পরীক্ষাগুলো বন্ধ হয়েছে সেগুলো নেবো, তারপর যেসব বিভাগের পরীক্ষার সময়সূচি দিয়েও নেওয়া যায়নি সেগুলো নেবো।’
কবে নাগাদ শুরু করা সম্ভব জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, আশা করছি এক মাসের মধ্যে শুরু করতে পারবো।
এর আগে শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী জানিয়েছিলেন, শিক্ষার্থীদের ট্রমা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। তাদের কাউন্সেলিং করানো প্রয়োজন। আর তা প্রথমে শিক্ষকদেরই করতে হবে।
Collected From Banglatribune