কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-নির্ভর প্রযুক্তি নিয়ে উদ্বেগের প্রধান কারণ, এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী চাকরি হারাবেন বিপুলসংখ্যক কর্মী। মানুষের স্থান দখল করে নেবে রোবট। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো একাধিক সংস্থা সাম্প্রতিক সময়ে এ বিষয়ে মন্তব্য করেছে। তবে নতুন এক গবেষণা বলছে, যতটা আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা বাস্তবে পরিণত করা সহজ নয়। কারণ বেশির ভাগ কর্মক্ষেত্র নতুন প্রযুক্তিকে জায়গা দিতে প্রস্তুত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুয়েট ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) এক জরিপে দেখা গেছে, এর আগে যতটা আশঙ্কা করা হয়েছে শ্রমবাজারে এআইয়ের প্রভাব সম্ভবত তার চেয়ে অনেক ধীর গতিতে পড়বে।
সম্প্রতি এমআইটির কম্পিউটার সায়েন্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ল্যাবের গবেষকরা কিছু প্রশ্ন নিয়ে মাঠে নামেন। এআই মানুষের কাজকে কতটা স্বয়ংক্রিয় করবে—এ প্রশ্নের পাশাপাশি জরিপের অন্যতম লক্ষ্য ছিল, কবে নাগাদ এ রূপান্তর ঘটতে পারে। গবেষকরা ফলাফলে দেখতে পান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যান্ত্রিক প্রতিস্থাপন প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থনৈতিকভাবে উপকারী হবে না।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, মানুষকে মজুরি দেয়া হয়—এমন ২৩ শতাংশ ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতিস্থাপন নিয়োগকর্তার জন্য সাশ্রয়ী হবে। যদিও এর হার সময়ের সঙ্গে বাড়বে। তবে সামগ্রিক অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, চাকরির বাজারে এআইয়ের অভিঘাত সম্ভবত ধীর গতিতে হবে।
গবেষণার অন্যতম লেখক ও এমআইটির কম্পিউটার সায়েন্সের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণা প্রকল্প ও এআই ল্যাবের পরিচালক নীল থম্পসন বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে কাজগুলো যন্ত্রের বদলে মানুষের করানো ব্যয় সাশ্রয়ী হবে। অর্থনৈতিকভাবেও আকর্ষণীয় হবে।’
তিনি আরো বলেন, যে কাজগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে করা যায়, তা শিগগিরই ঘটবে বলে মানুষ মনে করে। কিন্তু সব কাজ রোবট করবে এ চিন্তার সঙ্গে সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ হলো অর্থনীতি নিয়ে ভাবা।
এআই দিয়ে প্রতিস্থাপন হতে পারে এমন চাকরির পূর্বাভাসগুলো বিশ্লেষণ করে থম্পসন ও তার দল দেখেছে, এসব কাজ মূলত কম্পিউটারনির্ভর। বর্তমান কর্মীদের মজুরি ও তাদের প্রতিস্থাপন খরচ কত হতে পারে, সে হিসাবও করেছেন দেখেন তারা। যেমন একটি খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কর্মী মজুদ ও নির্দিষ্ট পণ্যদ্রব্য দেখভাল করতে পারেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ কাজে প্রযুক্তির সাহায্য নিলে একজন কর্মী রাখার চেয়ে নিয়োগকর্তার বেশি খরচ পড়বে। ফলে শুধু ব্যবস্থার রূপান্তরই নয়, এর অর্থনৈতিক ব্যয়ভারও গুরুত্বপূর্ণ।
এর সঙ্গে শ্রমবাজারের আগের পরিবর্তনকে তুলনা করা যায়। যেমন কৃষি অর্থনীতিতে যন্ত্রনির্ভরতার প্রবর্তন ঘটেছে অতি দ্রুত। যার অভিঘাত স্পষ্ট। সে তুলনায় এআইয়ের ব্যাপক ব্যবহার আকস্মিক না হয়ে ধীরে ধীরে হবে। এর অর্থ হতে পারে যে নীতিনির্ধারক, নিয়োগকর্তা ও এমনকি কর্মীরা আসন্ন পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি ও মানিয়ে নেয়ার সময় পাবেন।
সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম সামনে রেখে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সতর্ক করে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০ শতাংশ চাকরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থানের মাধ্যমে প্রভাবিত হতে পারে। এ প্রবণতা শ্রম বাজারে বিদ্যমান বৈষম্যকে আরো গভীর করবে। এক ব্লগ পোস্টে সংস্থার প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা সরকারগুলোকে এআইয়ের অভিঘাত মোকাবেলায় সামাজিক সুরক্ষা তৈরি বা প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে জোর দেয়ার আহ্বান জানান।
থম্পসন ও তার দলের নতুন গবেষণায় জর্জিয়েভার মন্তব্যের পর্যালোচনা পাওয়া যায়। তারা বলছেন, নীতিনির্ধারকদের শ্রমবাজারে এআইয়ের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলো কমানোর জন্য আরো গভীরভাবে ভাবতে হবে। এর সমাধানের সঙ্গে প্রযুক্তিতে রূপান্তরের সম্ভাব্য সময়রেখা নিয়ে ভাবা গুরুত্বপূর্ণ। নতুন পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সে সংকট মোকাবেলার জন্য আগে যা ভাবা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি সময় পাওয়া যাবে।
Collected from bonikbarta