বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার শেষ সময়ের প্রস্তুতি যতটা গোছানো হবে একজন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার ফলাফল ততটাই ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শেষ সময়ে গোছানোর প্রস্তুতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতার আলোকে পরামর্শ দিয়েছেন- সাইফুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার
প্রথমত নিজের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা অনুসারে সময় ভাগ করে নিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ যারা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী, তারা গণিতে ও বিজ্ঞানে সময় কম রাখবে। তবে বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক অংশের প্রস্তুতির জন্য সময় বেশি রাখবে। অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা গণিত ও বিজ্ঞানে সময় বেশি রাখবে এবং বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিকে কম সময় রাখবে। আর সাধারণ জ্ঞানে যদি তাদের সমস্যা থাকে তাহলে তাদের রুটিনে এই অংশের প্রস্তুতির জন্য সময় বাড়াতে হবে।
বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা যদি রুটিন করে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা পড়ে থাকে, তাহলে যারা বিজ্ঞান বিভাগের নয়, তারা রুটিন করবে ১০ ঘণ্টা বা তারও বেশি পড়ার। বিসিএস মোটেও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নয়। সেখানে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থেকে এগিয়ে যেতে চাইলে বা সমকক্ষ হতে চাইলে পরিশ্রম অবশ্যই বেশি করতে হবে। কারণ, জীবনের কোনো না কোনো সময় হয়তো সে আপনার চেয়ে বেশি পরিশ্রম করেছে, তাই সে বর্তমানে কিছুটা হলেও অগ্রসর। কারো হয়তো পাঁচবার পড়লে মনে থাকে, আপনার সেটা দশবার পড়া লাগে। পার্থক্যটা এখানেই।
এ জন্যই আপনাকে দশবারই পড়তে হবে। পাঁচবার পড়ে যদি বলেন আমি পারছি না। তাহলে তো হলো না। সব কথার এককথা পরিশ্রম করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। ভাগ্য সহায় হলে শেষ হাসি আপনারই হবে। মনে রাখবেন এটা শুধু একটা তুলনা, এখানে বিজ্ঞান বিভাগের মাহাত্ম্য বা অন্য বিভাগকে ছোট করার জন্য কিছু বলা হয়নি, শুধু বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে।
যাচাই-বাছাই:
বিসিএসে কী পড়তে হবে সেটা জানার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কী বাদ দিতে হবে। ২০০ মার্কের পরীক্ষায় ১৮০ পেতে হবে না। প্রশ্নের স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে ১১০-১২৫ পেলেই যথেষ্ট। তাই চাইলেই অনেক কিছু বাদ দিতে পারেন। যেটা মনে থাকছে না, যেখানে অনেক বেশি সময় নষ্ট হচ্ছে, সেটা বাদ দিতে হবে বা অল্প সময় দিতে হবে। তাতে যতটুকু হওয়ার হবে। বাকি বেঁচে যাওয়া সময় অন্য কিছুতে কাজে লাগাতে হবে, যেখানে অল্প সময়েই ভালো ফলাফল আনা সম্ভব।
একটা উদাহরণ লক্ষ্য করা যাক। বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের শুরু আছে, শেষ নেই। এখানে যতই পড়বে দুই-তিনটি প্রশ্ন থাকবেই যেটা পারবেন না। এর জন্য জানপ্রাণ দিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। অথচ এই সময়টা প্রাচীন, মধ্যযুগ আর পিএসসির সিলেবাসে নির্ধারিত ১১ জন কবি-সাহিত্যিকের সম্পর্কে তথ্যগুলো ভালোভাবে আয়ত্তে আনতে পারলে কাক্সিক্ষত ফলাফল পাবে। হয়তো এখানে ভাসা-ভাসা প্রস্তুতির কারণে এমন একটা প্রশ্ন ভুল হয়ে যেতে পারে, যেটা ৮০ শতাংশ স্টুডেন্ট পারবে।
এখানেই পিছিয়ে পড়া। আধুনিক যুগের দুই-চারটা প্রশ্ন যেটা আপনি পারেননি, সেটা ২ শতাংশ শিক্ষার্থীও পারবে না। সে ক্ষেত্রে এর জন্য আপনার পিছিয়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। ঠিক একই উপায় ইংরেজি সাহিত্য অংশের ক্ষেত্রেও অবলম্বন করতে পারেন। আপনাকে কৌশলী হতে হবে।
সিলেবাস অনুসরণ:
সিলেবাস বুঝলে ও বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন কোথায় কম গুরুত্ব দিতে হবে, কী বাদ দিতে হবে।
সময় ব্যবস্থাপনা : পরীক্ষার হলে সময় ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময় ব্যবস্থাপনার অভাবে একটি ভালো প্রস্তুতিও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। পরীক্ষা মাত্র দুই ঘণ্টার। এই দুই ঘণ্টা যে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারবে, জয় তারই হবে। আপনি কতটা জানেন তার মূল্যায়ন কিন্তু এই দুই ঘণ্টার পরীক্ষায়। সে ক্ষেত্রে সময়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এ জন্য প্রচুর মডেল টেস্ট দিতে হবে। নম্বর কী পেলেন, সেটা বিষয় না, কিন্তু সময় ব্যবস্থাপনা শিখবেন। সময় হিসাব করে সপ্তাহে অন্তত একটা পরীক্ষা ওএমআর এ দেবেন। এটা করতে পারলে পরীক্ষার হল আপনার কাছে অচেনা মনে হবে না। চাপমুক্ত থাকবেন অনেকটাই।
আমার প্রস্তুতির অভিজ্ঞতা থেকে:
ভূগোলের জন্য যে কোনো একটা সিরিজের বই পড়লেই যথেষ্ট। আপনার হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকলে ৯ম-১০ম শ্রেণির ভূগোল বইটা দেখতে পারেন। এমনভাবে পড়বেন, যাতে উত্তর করতে অপশন দরকার না হয়। সুশাসন আমি সেভাবে পড়িনি বললেই চলে। শুধু বিগত প্রশ্ন সমাধান করেছিলাম। চার-পাঁচটা স্বাভাবিকভাবেই কমন পাওয়া যায়। তাও যদি ভালো করতে চান যে কোনো গাইড থেকে পড়তে পারেন। এর সঙ্গে পৌরনীতি ও সুশাসন প্রথমপত্র।
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আপনি বিজ্ঞান বিভাগের হলে, বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী হলে নিঃসন্দেহে এখানে সুবিধা পাবেন। অনেক কিছুই আপনার পূর্ববর্তী জ্ঞান থেকে পারবেন। তবে নিশ্চিন্ত হওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু এটা আপনার স্ট্রং জোন, তাই এখানে ছাড় কেন দেবেন? ইজি কম্পিউটার আর উচ্চমাধ্যমিকের আইসিটি বইটি পড়লে ১২-এর বেশি মার্ক পাওয়া সম্ভব। বিজ্ঞান বিভাগের না হলে আপনার এখানে টার্গেট একটু কম রাখাই ভালো। ৮-১০ টার্গেট রাখাটাই উত্তম হবে।
Collected From Daily Janakantha