গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
প্রায় তিন বছর আগে কার্যকর সরকারি চাকরি আইনের ৪১ (১) ধারা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রায়ে আদালত বলেছেন, সরকারি চাকরি আইনের এই ধারা ‘সংবিধান পরিপন্থী এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী’।
এতে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে কোনো সরকারি কর্মচারীকে গ্রেপ্তারের আগে এখন আর কারো অনুমতি লাগবে না বলে মনে করেন রিটকারী পক্ষের আইনজীবী। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
রায়ের পর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, মৌলিক অধিকারের সঙ্গে অসামঞ্জস্য আইনের বিধান বাতিল হবে। ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং সব নাগরিক সমানভাবে আইনের আশ্রয়লাভের অধিকারী। সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে এ বিষয়টি আরো বিস্তৃত করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি চাকরি আইনের ৪১ (১) ধারায় বিশেষ একটি শ্রেণি বা গোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। ফলে তা সংবিধানের ২৬, ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং বাতিলযোগ্য। ’
রায়ে আদালত বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০১৩-এর ৩২(ক) ধারায় দুদক কর্মচারীদের এমন সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল। পরে হাইকোর্ট এ ধারা বাতিল করেছেন। কিন্তু সরকার এ রায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপিল করেনি। সুতরাং একই বিধানে আবার আইন করার সুযোগ নেই।
এই আইনজীবীর ভাষ্য, ‘ফৌজদারি অপরাধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। আইন অনুযায়ী যেকোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। অভিযোগপত্র হওয়ার আগে পরে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করা যাবে। ’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুরক্ষা দিতেই আইনে এমন বিধান রাখা হয়েছে। তা ছাড়া রিট আবেদনকারী এ আইনে সংক্ষুব্ধ কোনো পক্ষ নয়। আদালত রায় ঘোষণার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো আমলে নেননি। ফলে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে। ’ ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইনের গেজেট জারি হয়। ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের গেজেটে বলা হয়, ১ অক্টোবর থেকে এ আইন কার্যকর হবে। সে হিসাবে প্রায় তিন বছর ধরে আইনের এ বিধান কার্যকর আছে।
আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হইবার পূর্বে, তাহাকে গ্রেপ্তার করিতে হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে। ’
পরে আইনের এ ধারা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর জনস্বার্থে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়।
collected from Samprotik deshkal