Facebook Youtube Twitter LinkedIn
...
নিম্নগ্রেডের চাকরিজীবীরা ভোগেন সবসময়

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরিরতদের মধ্যে বেশিরভাগই নিম্নগ্রেডভুক্ত। স্বল্প আয়ের মানুষের সংখ্যাও অনেক। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ নানা সংকটে এই নিম্নগ্রেডভুক্ত চাকরিজীবী ও স্বল্প আয়ের মানুষের উপরই চাপটা যায় সবচেয়ে বেশি। যেটা আমরা চলমান দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে দেখতে পাচ্ছি। শুধু তাই নয়, চাকুরিক্ষেত্রেও উপরমহলের যত ধরণের বাধ্যবাধকতা তার বেশিরভাগই এই নিম্নগ্রেডভুক্ত চাকরিজীবীদেরকেই মানতে হয়। যত ঝড়ঝাপটা এদের উপর দিয়েই বয়ে যায়। কিন্তু পরিশ্রম অনুযায়ী সম্মান, সম্মানী, সহানুভূতি তাদের কপালে জোটেই না!
অনেকে বলতে পারেন, বহু সাধারণ কর্মচারিরতো অবৈধ আয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়। মিডিয়াতে এসব কুকীর্তি তুলেও ধরা হয়। মানছি এরকম কিছু ঘটনা ঘটেছে। সেটা লাখে হয়তো দু'একটি। কিন্তু  আরো লাখ লাখ সাধারণ কর্মচারি যে নিরবে কষ্ট সহ্য করে প্রতিষ্ঠানের জন্য শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন সেটা মিডিয়াতে আসেনা। কোন ভুলের কারণে বসের ঝারি খেয়ে চাকুরি বাঁচাতে কত কর্মচারি যে জীবন বিসর্জন দিচ্ছেন তার কি কোন খবর আছে? হ্যাঁ, কিছু ব্যতিক্রম আছে। তবে সংখ্যাটা একেবারে নগণ্য। এরপরও তারা প্রশংসার দাবি রাখেন।
অধীনস্থদের ব্যাপারে হাদিসে এসেছে: 'হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তারা (অধীনস্থরা) তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। কাজেই আল্লাহ যার ভাইকে তার অধীনস্থ করে দিয়েছে, তার (মালিক/দায়িত্বশীল কর্মকর্তার) উচিত, তাকে (অধীনস্থকে) তা-ই খাওয়ানো যা সে নিজে খায় এবং তাকে (অধীনস্থকে) তা-ই পরিধান করানো যা সে নিজে পরিধান করে। আর তাকে (অধীনস্থকে) এমন কাজের ভার দেবে না, যা তার সাধ্যের বাইরে। যদি কখনো তার ওপর অধিক কাজের দায়িত্ব চাপানো হয় তবে যেন (দায়িত্বশীল ব্যক্তি) তাকে সাহায্য করে।’ (বুখারি ও মুসলিম)।' এখনতো আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্টোটাই দেখতে পাই। সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে, ' পানি সবসময় নীচের দিকে গড়ায়'।
কর্তৃপক্ষের উচিত, এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবা। কারণ, মানুষ হিসেবেও তো এসব নিম্নগ্রেডভুক্ত কর্মচারি ও স্বল্প আয়ের লোকজন পর্যাপ্ত সুবিধাদি পাওয়ার অধিকার রাখেন। বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগীদের কথা শোনা যায়। পান থেকে চুন খসলেই নেমে আসে করুণ পরিণতি!
কারণে অকারণে বসের নানা নির্যাতন ও পুলিশি মনোভাবে বিষিয়ে উঠে অনেকের চাকুরি জীবন! এরপরও জীবন বাঁচানোর তাগিদে এসব সহ্য করে নিরবে অশ্রুপাত করা ছাড়া কোন উপায় থাকেনা। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেষ অসিয়ত ছিলো- 'তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে তোমাদের অধীনদের ব্যাপারে।'
স্বল্প আয়ের মানুষজন কীভাবে যে দিনযাপন করছেন সেটা বাস্তবে না দেখলে বোঝা যাবেনা। নুন আনতে পানতা ফুরায় তাদের। পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনমতে দিন ফুরান। অনেকের গরুর গোস্ত দিয়ে কখন ভাত খেয়েছে সেটাও মনে নাই। স্ত্রী-সন্তানদের মানুষ করতে হাড়ভাংগা কষ্ট করে যান তারা। এগুলো নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত। কেউ এসবের দায় এড়াতে পারবেনা। অন্তত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ সব সংকটে কষ্টটা যেন কেবল নিম্নগ্রেডভুক্ত কর্মচারি ও স্বল্প আয়ের মানুষের কাঁধে না আসে সে দিকটা দেখা জরুরি। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কিংবা তাদের কষ্ট দূর করার মানসিকতা আমাদের অনেকের নেই বললেই চলে। আমাদের এমন মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। সব শ্রেণির বিশেষ করে নিম্নগ্রেডভুক্ত চাকুরিজীবী, স্বল্প আয়ের লোকজন ও দরিদ্র মানুষের জীবনে পর্যাপ্ত সুখ না হোক অন্তত দু:খটা যেন তারা ভুলে থাকতে পারেন সে ব্যবস্থা থাকা দরকার। আর অধীনস্থদের ব্যাপারে আমাদের মাঝে বিদ্যমান চরম মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সহনশীল হতে হবে। সবাইকে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যেতে হবে- যেটা আজ বেশি প্রয়োজন।